ইসলামাবাদ: সাধারণত, মাটির নীচ থেকেই সোনা খনন করা হয়। বিশ্বের বহু জায়গায় এই রকম সোনার খনি আছে। কিন্তু, পাকিস্তানে এমন কয়েকটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে মানুষ নদীর জল থেকে সোনা বের করে। সরকার এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তা সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিদিন তারা প্রচুর প্রচুর সোনা উত্তোলন করে বিক্রি করছে।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের নওশেরায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি গ্রামেই এই কাজ চলে। নিশ্চই ভাবছেন এত সোনা আসে কোথা থেকে? আসলে এই গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সিন্ধু নদ। এখানে অবশ্য তার নাম আবাসিন নদী। এই আবাসিন নদীর অববাহিকাতেই কুচি কুচি সোনা পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ, এই নদীর অববাহিকা থেকে বালি তুলে,সেই বালি ছেঁচে তার থেকে সোনা আলাদা করে। গত কয়েক বছর ধরে এই কাজে যুক্ত হয়েছে বড় বড় ঠিকাদাররাও।
তারা যন্ত্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে বালি তুলে সোনা ছেঁচে নেয়। জল থেকে সোনার কণা আলাদা করতে, এই ঠিকাদাররা নদীর পাড়ে বড় বড় শক্তিশালী লোহার চালুনি বসায়। এইচালুনিগুলিতে নদীর বালি, মাটি ও পাথর ঢেলে প্রচুর পরিমাণে জল দিয়ে তা ধোয়া হয়। চালুনিতে বড় বড় পাথর আটকে যায়। নীচে জমা হয় বালির কণা। এরপর আর কয়েক ঘণ্টা চেষ্টায় জলের সাহায্যে বালি থেকে সোনার কণা আলাদা করা হয়। এরপর, সেই সোনা স্থানীয় বাজারে পাঠানো হয়। সেখানে তা গলিয়ে খাঁটি সোনা তৈরি করা হয়। তবে, এর গুণমান নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে।
বছর কয়েক আগে পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল এই নিয়ে গবেষণা করেছিল। সিন্ধু নদ এবং কাবুল নদীর পৃষ্ঠে সোনার কণা পাওয়া যায়। গবেষকরা নদীগুলির যত গভীরে গিয়েছেন, ততই সোনার পরিমাণ বেড়েছে। তাঁদের মতে, অনেক ধরনের ধাতু লাভা আকারে পাথরের উপর জমে থাকে। হিমবাহ গলে যাওয়ার সময়, সেই ধাতুগুলি নদীর জলে মিশে যায় এবং প্রবাহিত হয়। যেহেতু সোনার ওজন বেশি, তাই এটি নদীর তলদেশে গিয়ে জমা হয়। গবেষকদের মতে, যেখানে নদীর জলের দিক পরিবর্তন হয়, যেখানে বাঁধ আছে এবং দুই নদীর সঙ্গমস্থলের মতো জায়গায় জলে সোনার কণা থাকার সম্ভাবনা বেশি হয়। নওশেরার অটকে কাবুল ও সিন্ধু নদীর সঙ্গমস্থল। তাই সেখানে এই ধরনের মূল্যবান ধাতু প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।