Syria: ফাঁকা মাঠ সিরিয়া, এই সুযোগেই আসল কারসাজি করছে ইজরায়েল!

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Dec 12, 2024 | 2:53 PM

Israel: গ্রাউন্ড অপারেশনের পাশাপাশি এয়ার স্ট্রাইকেও সিরিয়া ছারখার করে দিচ্ছে ইজরায়েলি বায়ুসেনা। গত ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়ায় প্রায় ৫০০ বিমানহানা চালিয়েছে তারা। ইজরায়েল নিজেরাই এই বিমানহানার ভিডিও প্রকাশ করেছে। সিরিয়ার বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, অস্ত্রভান্ডার, তেলের ডিপো, সেনাঘাঁটি, গবেষণাগার, সরকারি দফতর, সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কিচ্ছু বাদ নেই।

সিরিয়া থেকে প্রথম ধাপেই একসঙ্গে ৭৫ জন ভারতীয়কে বের করে আনল বিদেশমন্ত্রক। তাঁরা প্রায় সকলেই দামাস্কাসের দক্ষিণ দিকে সাইদা জায়নাব নামে একটা শহরে আটকে ছিলেন। এই ৭৫ জনের মধ্যে ৪৪ জন জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা। তাঁদের সবাইকে বাসে চাপিয়ে সীমান্ত পার করে লেবানন নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর, বেইরুট থেকে দিল্লি ফেরার বিমান। পুরো রেসকিউ অপারেশনটা দামাস্কাস ও বেইরুটের ভারতীয় দূতাবাসের সমন্বয়ে হয়েছে বলে বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে।

সিরিয়াকে যখন কেউ দেখার নেই, তখন অবাধে নিজের দেশের সীমানা বাড়িয়ে নিচ্ছে ইজরায়েল। সিরিয়া-ইজরায়েল সীমান্তে গোলান মালভূমির বাফার জোনে ঢুকে পড়েছে ইজরায়েলি সেনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর, দামাস্কাস থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে দেখা গিয়েছে তাদের। যদিও, ইজরায়েল দাবি করেছে যে তাদের সেনা গোলান এলাকা অতিক্রম করেনি। তবে, মোটামুটি এটা পরিষ্কার যে শুধুই বাফার জোনে আর আটকে নেই তারা। গোলান এলাকায় সিরিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট হেরমনের দখল নিয়েছে আইডিএফ।

এই পাহাড় থেকে দামাস্কাসের দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। ৩ হাজার ফুট উচ্চতায় সামরিক দিক থেকে মাউন্ট হেরমনের অসম্ভব গুরুত্ব রয়েছে। এক তো মাউন্ট হেরমন থেকে এবার সিরিয়া ও লেবাননের বিস্তীর্ণ এলাকায় নজরদারি করতে পারবে তেল আভিভ। ইতিমধ্যেই পাহাড় চূড়োয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ভারি কামান বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। আর দুই, এই পাহাড়ি পথ ধরেই এতদিন ইরান থেকে সিরিয়া হয়ে অস্ত্র পেত লেবাননের হিজবুল্লা। তাদের অস্ত্রের সাপ্লাই লাইন একদম কাট অফ হয়ে গেল।

গ্রাউন্ড অপারেশনের পাশাপাশি এয়ার স্ট্রাইকেও সিরিয়া ছারখার করে দিচ্ছে ইজরায়েলি বায়ুসেনা। গত ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়ায় প্রায় ৫০০ বিমানহানা চালিয়েছে তারা। ইজরায়েল নিজেরাই এই বিমানহানার ভিডিও প্রকাশ করেছে। সিরিয়ার বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, অস্ত্রভান্ডার, তেলের ডিপো, সেনাঘাঁটি, গবেষণাগার, সরকারি দফতর, সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কিচ্ছু বাদ নেই। সর্বত্র বোমাবর্ষণ করেছে ইহুদি বায়ুসেনা।

সিরিয়ার আল-বায়েদা ও লাতাকিয়া বন্দরে হামলা চালিয়ে কম করেও পনেরোটা জাহাজ ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। প্রবল নিন্দার মুখে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজরায়েলের প্রতিনিধি দাবি করেছেন, সিরিয়ায় তাদের এই হামলা সীমিত ও সাময়িক। আর শুধুমাত্রই নিজেদের প্রতিরক্ষার কথা ভেবে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনও ইচ্ছাই তাদের নেই। ইজরায়েলের যুক্তি তারা সিরিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার, রাসায়নিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ঠিকানা-সব ধ্বংস করে দিচ্ছে। কারণ, আগামীদিনে এই সব অস্ত্র নতুন যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের হাতে পড়বে। আর তাহলে ইজরায়েলের বিপদ হওয়ার আশঙ্কা। তাই সেসবের অঙ্কুরেই বিনাশ। সোজা কথায় সিরিয়ার নতুন সরকার প্যালেস্তাইনপন্থী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তেল আভিভ।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন মহম্মদ আল-বশির। আসাদ জমানার প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজি জালালির সঙ্গে বিদ্রোহী নেতা আবু মহম্মদ আল গোলানির সাক্ষাতের পরই বশিরের নাম ঘোষণা হয়েছে। ইদলিবের বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সি বশির সামনের বছরের পয়লা মার্চ পর্যন্ত সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। ২০১৭ সাল থেকেই ইদলিবে সমান্তরাল সরকার চালিয়ে আসছিলেন বিদ্রোহীরা। সেই সরকারের প্রধান ছিলেন বশির। এবার তিনি গোটা সিরিয়ার দায়িত্বই হাতে পেলেন। তবে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিবিদ্যা ও আইনের স্নাতক বশিরের হাতে বাস্তবে ক্ষমতা বলতে কিছুই থাকবে না। পিছন থেকে সরকারটা চালাবেন বিদ্রোহী বাহিনীর নেতা আবু মহম্মদ আল গোলানি। সম্ভবত পয়লা মার্চের পর পাবলিক ম্যান্ডেট নিয়ে গোলানিই পাকাপাকিভাবে শাসকের কুর্সিতে বসবেন।