পালিয়ে গিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। আসাদের স্ত্রী আসমা কোথায়, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে, মনে করা হচ্ছে যে আসাদ দেশ ছাড়ার আগেই তিন ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন আসমা। সম্ভবত তিনিও পুতিনের আশ্রয়েই আছেন। আর সিরিয়া ছাড়ার আগে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন বিপুল ধন-সম্পদ।
জানা গিয়েছে, দামাস্কাস থেকে মস্কোর বিমানে ওঠার সময় তাঁর সঙ্গে ছিল সাতটা ট্রাঙ্ক। সব সোনা, ডলার-সহ নানারকম বহুমূল্য সম্পদে ঠাসা। দেশ ছাড়ার আগে নিজের দামি ঘড়ি, হিরে ও জুতোর কালেকশনও সঙ্গে নিয়ে গেছেন আসাদ। স্ত্রীর হাত দিয়েও যে আগেভাগে আরও কিছু জিনিস তিনি পাচার করে দিয়েছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই সিরিয়াবাসীর।
টানা ৫০ বছর সিরিয়ার শাসনকর্তা আসাদ পরিবারের সম্পত্তি আন্দাজের বাইরে। ২০২২ সালে মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের এক রিপোর্টে বলা হয়, আসাদ ফ্যামিলির ধনসম্পত্তির পরিমাণ সিরিয়া দেশটার ৭ বছরের বাজেটের সমান। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে পাওয়া খবর বলে দাবি করে কিছুদিন আগে ইলাভ নামে সৌদি আরবের একটা কাগজ আবার জানায়, ২০০ টন সোনার মালিক বাশার অল-আসাদ।
২০১২ সালে সিরিয়ায় যখন গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশে খাবার নেই। তখন আসাদ ও তাঁর স্ত্রী-য়ের মধ্যে চালাচালি হওয়া কিছু ই-মেল ফাঁস করে গার্ডিয়ান। তাতে দেখা যায় মানুষ যখন খেতে পাচ্ছে না, তখনও আসমা বিদেশ থেকে নিয়মিত বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডের বহুমূল্য পোশাক, গয়না ও ঘর সাজানোর জিনিসপত্র কিনছেন। আর, আসমার পছন্দের তারিফ করছেন আসাদ। প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেই তিনি বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসা, মাদকের কারবার চালিয়ে টাকা তুলতেন বলে অভিযোগ করে আমেরিকা।
আফগানিস্তান থেকে পালানোর সময় সারি সারি ট্রাঙ্কে ডলার ও সোনা নিয়ে বিমানে ওঠেন আশরাফ ঘানি। দুশোর বেশি ট্রাঙ্ক তোলায় ছোট বিমান উড়তেই পারছিল না। বাধ্য হয়ে বিমান থেকে কয়েকটি ট্রাঙ্ক নিচে ফেলে দিতে হয়। ইরাকের একনায়ক সাদ্দাম হুসেনও জার্মানি-সহ বহু দেশে লগ্নি করেছিলেন, সম্পত্তি কিনেছিলেন। তবে তিনি পালানোর সুযোগ পাননি। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস, ভেনেজুয়েলার গুয়ান জুয়াইদো, তাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গলুক সিনাওয়াত্রাও দেশ ছাড়ার আগে বিপুল অর্থ আর সোনাদানা নিয়ে যান।
দেশ ছাড়ার পর এসব পলাতক একনায়কদের বাকি জীবনটা কেমন কাটে, সেটা বহুক্ষেত্রেই ঠিকমতো জানা যায় না। তবে, একটা বিষয়ে খুবই মিল। একনায়কদের শেষটা ভাল হয় না। সর্বোচ্চ ক্ষমতা থেকে মুহূর্তে ক্ষমতাহীন হয়ে যেতে হয়। শুধু আসাদই নন। আফগানিস্তানে আশরাফ ঘানি বা লিবিয়ায় মুয়াম্মর গদ্দাফি থেকে আরও অনেক তাবড়, দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসকের একই পরিণতি। এই দশক যেন শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দশক। সাদ্দামের বিরুদ্ধে জনরোষ, শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষদের বিদায়,- অনেক, অনেক উদাহরণ।