মস্কো: সুপারি কিলারের হাতে খুন রুশ সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল। সাধারণভাবেই, গুন্ডা কিংবা মাফিয়া গ্যাং চালায় যারা, তাদেরই স্বভাবতই সুপারি কিলার দিয়ে খুনের চক্রান্ত করতে দেখা যায়। কিন্তু এ তো একেবারে রাষ্ট্র সুপারি কিলার বরাত দিচ্ছে। শুনতেই অবাক লাগলেও এমনটাই ঘটিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার টপ আর্মি জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার ইগর কিরিল্লভকে খুন করতে বরাত দিয়েছিল এক হিটম্যানকে।
তিনি রাশিয়ার নিউক্লিয়ার, বায়োলোজিক্যাল, ক্যামিকাল ডিফেন্স ফোর্স ও NBC-র চিফ ছিলেন। রীতিমত হোমরা-চোমরা চেহারার একটা লোক। আর ছিলেন পুতিন ঘনিষ্ঠও। না হলে কি আর দেশের এইরকম একটা পদে বসা যায়? কিরিল্লভকে খুনের অভিযোগে রাশিয়ার গোয়েন্দারা মস্কো থেকে এক উজবেক নাগরিককে ধরেছেন। আর তারপর যে ঘটনা সামনে এসেছে তা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো।
ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা প্রথমে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল গ্যাং আজমারি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এদের কাজই হল কোটি কোটি টাকা নিয়ে হাই-প্রোফাইল লোকেদের খুন করা। ইগর কিরিল্লভকে খুনের জন্য ভারতীয় মুদ্রায় আড়াইশো কোটি টাকায় রফা হয়। এরপর আজমারি গ্রুপ খুনের জন্য উজবেকিস্তানের বাসিন্দা, ২৯ বছরের ওই যুবককে হায়ার করে। তাঁকে ১ লক্ষ ডলার আগাম দেওয়া হয়। বলা হয় যে কাজ সফল হলেই তাঁকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোনও দেশে পাকাপাকিভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
রুশ গোয়েন্দাদের দাবি, ওই যুবক ভাড়া করা গাড়িতে মস্কোর যে অ্যাপার্টমেন্টে কিরিল্লভ থাকতেন, সেখানে পৌঁছন। ইউক্রেনের এজেন্টরা তাঁর হাতে বিস্ফোরক তুলে দেন। ভাড়াটে খুনি এরপর বেশ কয়েকদিন কিরিল্লভের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন। তারপর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে রাখা রুশ জেনারেলের গাড়ির পাশে স্কুটারে বিস্ফোরক রেখে দেন। মঙ্গলবার সকালে কিরিল্লভ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যখন নিজের গাড়িতে উঠছেন তখন রিমোট কন্ট্রোলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই আর্মি জেনারেল। প্রমাণ দিতে গোটা ঘটনার লাইভ স্ট্রিমিং করেন খুনি।
ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার অফিসাররা নিপ্রো শহরে বসে পুরোটা লাইভ দেখেন বলেও রাশিয়ার দাবি। কিরিল্লভের মৃত্যুর পরই ইউক্রেন জানায়, এই খুন তারাই করিয়েছে। কারণ নিহত আর্মি অফিসার যুদ্ধের সময় তাদের দেশে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তাই, কিরিল্লভ তাদের কাছে হয়ে ওঠে “প্রধান লক্ষ্য”। কিছুদিন আগেই তাঁকে যুদ্ধ অপরাধী ঘোষণা করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল কিয়েভ। তবে সুপারি কিলার লাগিয়ে খুনের প্লট তৈরি করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি জেলেনস্কি প্রশাসন।
অন্যদিকে, রুশ গোয়েন্দারা মনে করছেন, খুনের ঘটনায় আরও ৭-৮ জন জড়িয়ে। বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রাশিয়ার সিকিওরিটি কাউন্সিলের প্রধান ওদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ হুমকি দিয়েছেন, খুব দ্রুত ইউক্রেনকে এর জবাব দেওয়া হবে। ফলে যুদ্ধটা নিয়েও চিন্তা বাড়ছে।