ইসলামাবাদ: রবিবার (৩০ জুলাই) উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে, আফগান সীমান্তের কাছে বাজাউরের খার শহরে জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল বা জেইউআই-এফ-এর কর্মী সম্মেলনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ৮০ জন মতো আহত হয়েছেন। প্রকাশ্যে এল সেই ঘটনার একটি ভিডিয়ো ক্লিপ। সেই ভিডিয়ো ক্লিপে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার মুহূর্তের এবং তার আগের পরিস্থিতি ধরা পড়েছে। স্থানীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেইউআই-এফ খার শহরের প্রধান মৌলানা জিয়াউল্লাহ জানও এই হামলায় নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে জেইউআই-এফ দলের নেতা এমএনএ জামালউদ্দিন এবং প্রাক্তন পাক সেনেটর আবদুর রশিদও উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফোরণের পর তাঁরা দুজনেই নিরাপদে আছেন বলে জানা গিয়েছে।
Video clip: The explosion (a suicide attack) took place at a political gathering of the Jamiat Ulema-e-Islam party in the Tehsil Khar area, Bajawar, Pakistan, where the explosion led to more than 200 dead and injured.
pic.twitter.com/dd9LPCj4UR— Breaking news and situation analysis (@kgvh6v) July 30, 2023
প্রসঙ্গত, প্রভাবশালী ধর্মগুরু ফজলুর রহমানের দল কট্টরপন্থী হিসেবেই পরিচিত। বর্তমান পাক সরকারের ক্ষমতায় থাকা জোটের অন্যতম অংশীদার জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ফলে সম্মেলনের তাঁবুটি একপাশে ভেঙে পড়েছিল। ফলে, মরিয়া হয়ে যারা পালানোর চেষ্টা করছিল, তারা আটকে পড়ে। চারিদিকে প্রাণহীন দেহ, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল বিভ্রান্তি। বাতাসে ভেসে আসছিল পোড়া মাংসের গন্ধ। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিয়াজ আনোয়ার জানিয়েছেন এই বিস্ফোরণে অন্তত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। তবে, বেসরকারি সূত্রে মৃতের সংখ্যা ৫০-এর বেশি। আত্মঘাতী হামলাকারী, মঞ্চের কাছাকাছি এসে বিস্ফোরণ ঘটায় বলে জানা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাস্থলের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা গিয়েছে, চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। স্বেচ্ছাসেবীরা রক্তে ভেজা হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করছেন।
অক্টোবর-নভেম্বরেই পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হবে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিয়েছে। এরই মধ্যে বর্তমানে পাকিস্তান সফরে এসেছেন চিনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফং। তাঁর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন চিনা উচ্চপদস্থ নেতা ইসলামাবাদে এসেছেন। তারই মধ্যে ঘটে গেল এই হামলা। এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, জেইউআই-এফ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বারংবার হামলা চালাতে দেখা গিয়েছে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীকে। জেইউআই-এফ কট্টরপন্থী বলে পরিচিত হলেও, তাদের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ করে থাকে ইসলামিক স্টেট। জেইউআই নেতা ফজলুর রহমান কট্টরপন্থী হিসাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেও, দীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে জোট গঠন করার ফলে, জনসাধারণের মধ্যে তাঁর ভাবমূর্তি এখন অনেকটাই নরমপন্থী।