কলকাতা: চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই জার্নি শুরু। স্কুলের শিক্ষকের হাত ধরেই তৈরি দেখেছিলেন জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্ন। কিন্তু, ছোট থেকেই বেড়ে ওঠা দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে। বাবা কাজ করতেন একটি গ্য়ারেজে। মাসিক বেতন ৬ হাজারের মতো। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে করেছেন আজীবন কষ্ট। সেই বাড়ির ছেলেই মাত্র ২০ বছর বয়সেই করে ফেলেছেন বড় কামাল। শেয়ার মার্কেটে হাতেখড়ির মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে কামিয়ে ফেলেছেন ১১ কোটিরও বেশি। কথা হচ্ছে বাংলার রাজ কর্মকারকে নিয়ে। বাড়ি কলকাতায়। পরিসংখ্য়ান বলছে শেয়ারে লগ্নি করছে এ রাজ্যের মাত্র ৩ শতাংশ বাসিন্দা। মিউচুয়াল ফান্ডে এ রাজ্যের ভাগ মাত্র ৫.২ শতাংশ। সেখানে রাজের এই সাফল্য চোখ কপালে তুলছেন অনেকেই।
বছর খানেক আগে একটি ইউটিউব চ্যানেলে নিজের উত্তরণের পথটা সকলের সামনে নিয়ে এসেছিলেন রাজ। সেখানেই যেমন তিনি নিজের চরম দারিদ্রের মধ্য়ে বেড়ে ওঠার কথা বলেছিলেন, তেমনই দিয়েছিলেন বেশ কিছু টিপস। যাতে সহজেই আপনিও ঘরে তুলতে পারেন মোটা টাকা। সাফ বলেন, “ক্লাস নাইনে আমার বাবা আমাকে ফোন কিনে দিয়েছিল। ওই ফোন দিয়েই আমি প্রথমে টিকটকের ভিডিয়ো বানাতাম। যদিও মাঝে টিকটক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একটু ভেঙে পড়েছিলাম। তারপর আমি স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছিলাম। সেই থেকে শুরু। স্কুলে পড়তে পড়তে ফ্রিল্যান্স করে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কামিয়েছি। ৫-৬ মাসের টাকা জমিয়ে সেটা স্টক মার্কেটে লাগিয়ে দিই। প্রথমদিনেই অপশন ট্রেডিংয়ে ১৮ হাজার টাকা হারিয়ে ফেলি। ওটা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যোমে মাঠে নামি। ধীরে ধীরে লাভ করতে শুরু করি। ”
তবে ওই ভিডিয়োতে নিজের স্ট্রাগেলের কথা বলতে গিয়ে বারেবারে আবেগতাড়িতও হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, “আমরা বাবা-মা তো আলু পটলের খোসাও ভেজে খেয়ে দিন কাটিয়েছে। আমার দিদিকে, আমাকে ভাল করে পড়াশোনা করিয়েছে। ওদের সর্বদাই আমাদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর খুবই ইচ্ছা থাকতো। বাড়িতে ভাঁড়ে জমানো টাকা বের করেও কখনও কখনও আমার অ্যাডমিশন ফি দিয়েছি।”
শেয়ার মার্কেটে হাতেখড়ির পর যখন লাভ বাড়তে থাকে তখনই নিজের প্রতিষ্ঠান খোলার ভাবনা মাথায় আসে রাজের। তবে সেই পথও যে খুব একটা মসৃণ ছিল এমনটা নয়। রাজ বলছেন, “বাবা তখন পাশে দাঁড়ায়নি। তখন আমি সবে ইঞ্জিনিয়রিংয়ে অ্য়াডমিশন নিয়েছি। আমার দুই বন্ধুর সঙ্গে মিলে অনেক কষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটা খুলে ফেলি। কিন্তু, কেউ পড়তে আসত না শুরুতে। মাত্র একজনই এসেছিল আমার কাছে। ও লাভবান হতেই আরও ছাত্র ও নিজেই রেফার করে। ধীরে ধীরে আমাদের ব্যবসা বাড়ে। ২০২০ সালের শেষের দিকে আমাদের ছাত্র সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০। তখন আমরা লাখে কামাচ্ছি। এরপর থেকে আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও আসি। চ্যানেল খুলি। এখন দেশে আমাদের দেড় হাজারের বেশি ক্লায়েন্ট আছে।” ২০২২ সালের ওই ভিডিয়োতেই রাজ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, সেই সময় তাঁর সংস্থার মার্কেট ভ্যালু ১১.৬৫ কোটি। ২০২৫ সালের মধ্যে টার্গেট ১০০ কোটি। তবে রাজের পরামর্শ, অচিরেই ভাল লাভ ঘরে তুলতে এখন থেকেই বিনিয়োগ করুন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। বিনিয়োগ করুন ইনডেক্স ফান্ডে।
বিঃ দ্রঃ – এটি একটি শেয়ার বাজার এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কখনই বিনিয়োগে উৎসাহিত করা বা মুনাফা কামানোর সহজ উপায় খুঁজে দেওয়া নয়। শেয়ার বাজারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানানোই এই প্রতিবেদনের অন্যতম লক্ষ্য। উল্লেখ্য, শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ সর্বদাই ঝুঁকিুপূর্ণ।