বিনিয়োগ করতে চাইছেন? বিনিয়োগের আগে কী করতে হয় জানেন আশা করি। বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ৩টি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, বিনিয়োগকারীকে নিজের জীবন বিমা করাতে হবে। তারপর প্রয়োজন নিজের ও পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বিমা। তারপর দরকার, একটা আপৎকালীন ফান্ড, যেখান থেকে হঠাৎ যে কোনও কারণে অর্থের প্রয়োজন মিটতে পারে। এরপর আপনি বিনিয়োগ করতে করতে পারেন।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব থেকে প্রথমে আসে শেয়ার বাজার (Share Market)। এখানে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারী অবশ্যই অনেক বেশি রিটার্ন আশা করতে পারেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁদের সুপারস্টার বলা যায় অর্থাৎ সদ্য প্রয়াত রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা বা ওয়ারেন বাফেটের মতো মানুষরা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেই সুপারস্টার হয়েছেন। যদিও শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিও অনেক বেশি রয়েছে। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে রিটার্ন কখনও বেশ ভাল পাওয়া যায় আবার কখনও সেই একই স্টক বিনিয়োগকারীকে ডুবিয়ে দিতে পারে। এছাড়া, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ কীভাবে করে, কখন বিনিয়োগ করলে ভাল রিটার্ন আসতে পারে, কখন বাজারে বিনিয়োগ করা একেবারেই উচিত নয়, সেই সব শিখতে বা বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। এই শেখার ক্ষেত্রে কোনও শর্টকার্ট নেই।
এরপরই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আসে স্মলকেস(Smallcase) বা রেডিমেড বাস্কেট। এই ক্ষেত্রে স্টক বিনিয়োগকারীর বদলে বিশেষজ্ঞরা বেছে দেন। ফলে এখানে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না থাকলেও চলে। স্মলকেস আসলে অনেকটা ‘স্পুন ফিডিং’ বা বাচ্চাকে চামচ দিয়ে খাইয়ে দেওয়ার মতো। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী রিটার্ন পেলেও তাঁর বিনিয়োগ সম্পর্কে জ্ঞানের বিকাশ সেভাবে হয় না। স্মলকেস আসলে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের একটা শর্টকার্ট পদ্ধতি।
এরপরই আসে মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Funds)। যে সমস্ত মানুষের বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় পড়াশুনা করার সময় নেই কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার থেকে ভাল রিটার্ন পাওয়া যাঁদের উদ্দেশ্য, তাঁদের জন্য খুব ভাল অপশন হল মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund)। শেয়ারের তুলনায় অত্যন্ত কম সময় দিয়েই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর টাকা ঘুরে ফিরে সেই শেয়ার মার্কেটেই বিনিয়োগ হয়। এছাড়াও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের খরচ অনেকই কম। তবে মিউচুয়াল ফান্ডে একটা সমস্যা থেকেই যায়। আর সেটা হল শতাধিক মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে কোনটা ভাল আর কোনটা খুব একটা ভাল না।
এরপর বিনিয়োগের একটা ভাল ক্ষেত্র হল সোনায় (Gold) বিনিয়োগ করা। সোনায় বিনিয়োগ করে লাভ হবে নাকি হবে না সেটা নির্ভর করে বিনিয়োগকারী কীভাবে বিনিয়োগ করছেন। সোনায় বিনিয়োগের জন্য অনেকে সোনার গয়না কেনেন। সেক্ষেত্রে সোনা কেনার সময়ই দাম ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। কারণ গড়ে সোনার দোকানিরা ১০ শতাংশ মেকিং চার্জ নিয়ে থাকেন। এছাড়া গয়নার সোনায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ জিএসটিও ধার্য করা হয়। অনেকে আবার ডিজিটাল গোল্ড কিনে থাকেন। সেক্ষেত্রেও কোম্পানিগুলো সোনার উপর তাদের ফি নিয়ে থাকে। অনেকক্ষেত্রে ইন্ডেক্স ফান্ডের মতো গোল্ড ফান্ডে বা ইটিএফের মাধ্যমে সোনায় বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এই সবের তুলনায় সব থেকে ভাল সোভেরেইন গোল্ড বন্ড (Sovereign Gold Bond)। এক্ষেত্রে স্টক মার্কেটে লিস্টেড বন্ড পাওয়া যায়। ঠিক যেভাবে বিনিয়োগ করা হয় শেয়ার মার্কেটে সেইভাবে। অনেকক্ষেত্রে এই বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের তুলনায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। এই বন্ডের ক্ষেত্রে জিএসটি না অন্যান্য কোনও করও দিতে হয় না। এছাড়াও প্রায় আড়াই শতাংশ টাকা সুদ হিসাবেও পাওয়া যায়। এর ম্যাচিওরিটির সময়ও এই বন্ড থেকে পাওয়া অর্থের উপর কোনও কর দিতে হয় না। ফলে ঠিকভাবে সোনায় বিনিয়োগ করলে প্রায় ১২ থেকে ১৪ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যায়। ইক্যুইটি ফান্ডে (Equity Fund) বিনিয়োগ করে যা রিটার্ন পাওয়া যায় তার তুলনায় কম রিস্ক নিয়ে প্রায় সমান রিটার্ন মেলে সোনায় বিনিয়োগ করলে।
এছাড়া সরকারের বেশ কিছু বিনিয়োগের স্কিম রয়েছে সেখানে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। যেরকম, ভারতীয় ডাক বিভাগের ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটস (National Savings Certificates), প্রভিডেন্ট ফান্ড যা আবার কয়েক রকমের হয়। এর মধ্যে এমপ্লয়ার্স প্রভিডেন্ট ফান্ড (Employees’ Provident Fund or EPF) ও পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (Public Provident Fund or PPF) বেশ চর্চিত। এছাড়াও ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (National Pension Scheme or NPS) রয়েছে এই ধরনের বিনিয়োগের তালিকায়।
এছাড়াও অনেক বিনিয়োগকারী বিভিন্ন বন্ড, রিয়েল এস্টেট বা পিয়ার টু পিয়ার লেন্ডিংয়ে বিনিয়োগ করেন। তবে সেই ধরনের বিনিয়োগ কিছু ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেই ধরনের বিনিয়োগের কথা এখানে উল্লেখ করা হল না। তবে এখানে বলা বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য কোনও উপদেশ নয়। বা এর উপর ভিত্তি করেই আপনাকে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে এমনটাও নয়। তবে এই তথ্য আপনাকে বিভিন্ন বিনিয়োগের ধারণা দেবে।
*যে কোনও ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি অবশ্যই ভালভাবে পড়ে নেবেন।