কলকাতা: তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ‘মুনলাইটিং’ অতিপরিচিত শব্দ। ভারতে-আমেরিকায় পেশাদার কর্মীরা এই প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছেন। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প মহলের। কোভিডের সময় মুনলাইটিংয়ের প্রবণতা বাড়ে। সেই সময় প্রায় সমস্ত আইটি সংস্থার কর্মীরা ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম করতেন। তখন অনেকেই অফিসের কাজের বাইরে অন্যান্য প্রজেক্টে কাজ করতে শুরু করেন। সহজভাবে একটি সংস্থায় কাজ করতে করতে আর একটি সংস্থায় কাজ করাকে মুনলাইটিং বলে। মূল্যবৃদ্ধির জমানায় বাড়তি রোজগারের জন্য বাড়ছে এই প্রবণতা। তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদাররা অনেকেই শিফটের বাইরে বা উইক এন্ডে অন্য সংস্থায় ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করছেন। কিন্তু, নানা কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট এর ঘোর বিরোধী। তাঁদের দাবি, এর ফলে কর্মীদের উৎপাদনাশীলতা কমতে পারে। একইসঙ্গে সংস্থার গোপন তথ্য বাইরে বেরিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রো, টেক মাহিন্দ্রা, এইচসিএল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা মুনলাইটিং কোনওভাবেই সমর্থন করছে না। মুনলাইটিং করলে যাবে চাকরি। বছর খানেক আগেই কর্মীদের ই-মেলে এ কথা জানিয়ে দিয়েছিল ইনফোসিস। উইপ্রোর কর্ণধার আজিম প্রেমজির মতে, মুনলাইটিং মানে নিজের সংস্থার সঙ্গে প্রতারণা করা। যা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।
মুনলাইটিং নিয়ে আমাদের দেশের আইন কী বলছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে এখনও কিছু অস্পষ্টতা বা ধোঁয়াশা রয়েছে। ভারতে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি চাইলে একটি চাকরির সঙ্গে আর একটি চাকরি করতে পারেন। তাতে আইন ভঙ্গ হয় না। কিন্তু, দুই চাকরিতে একই কাজ করলে গোপনীয়তা লঙ্ঘন হলে তা বেআইনি। এক্ষেত্রে কারখানা আইনে দ্বৈত কর্মসংস্থান বেআইনি। বহু রাজ্যেই আবার তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্র কারখানা আইনের বাইরে। ফলে ওই সব রাজ্যে দ্বৈত কর্মসংস্থানও আইনগতভাবে নিষিদ্ধ নয়।
বহু ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগপত্রে বলা থাকে সেই সংস্থায় কাজ করার সময় অন্য কোনও সংস্থায় কাজ করা যাবে না। এই চুক্তিপত্রে সই করে কাজে যোগ দেওয়ার পর কেউ তা ভাঙলে সেটা আইনত প্রতারণা বলেই মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থায়ী কর্মীদের মুনলাইটিংয়ে বাধা দেওয়া গেলেও কোনও সংস্থা যদি অস্থায়ী কর্মীদের বাধা দেয় তাহলে তা অনৈতিক। এদিকে ভারতে ওলা, উবের, জ্যোমাটো, ইন ড্রাইভার, সুইগির মতো একাধিক সংস্থার হাত ধরে বাড়ছে গিগ ইকোনমি। সেখানে একজন একইসঙ্গে একাধিক সংস্থায় কাজ করতে পারেন। বাঁধা কাজের সঙ্গে পার্ট টাইম জবও করতে পারেন। মুনলাইটিং বন্ধ হয়ে গেলে এই গিগ ইকোনমির সমস্যা হবে। তাই তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাগুলি পাল্টা সুইগির মতো ফুড ডেলিভারি সংস্থা আবার বিবৃতি দিয়ে মুনলাইটিংকে সমর্থনও করেছে।