হিমাচল প্রদেশ: হিমাচলের (Himachal Pradesh) বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর ব্যক্তিগতভাবে বেশ ভাল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। নিজের বিধানসভা আসন সেরাজে প্রায় ৭৬ শতাংশ ভোট নিজের দখলে রেখেছেন। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারেনি বিজেপি। মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর এই ধরাশায়ী হওয়ার কারণ হিসেবে জয়রাম ঠাকুরের কাজ করার ধরণকেই দায়ী করছেন দলের একাংশ। সূত্র মারফত এমনই জানা যাচ্ছে। যদিও আরও একটি তত্ত্বও উঠে আসছে। হিমাচল প্রদেশে প্রতিবারই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া দেখা যায়। প্রত্যেক নির্বাচনে বিজেপি থেকে কংগ্রেস, কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে হাতবদল হয় ক্ষমতা। সেটিও এই পরাজয়ের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন অনেকে।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেস শিবির অনেক বেশি নজর দিয়েছিল স্থানীয় স্তরের বিভিন্ন ইস্যুগুলির উপর। জোর দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় নেতৃত্বের উপর। অন্যদিকে বিজেপি ভোট চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখকে সামনে রেখে। ভোটের ফল থেকে বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির সেই প্ল্যানিং খুব একটা কাজে দেয়নি। লোকসভা নির্বাচনের ইস্যু আর বিধানসভা নির্বাচনের ইস্য়ুর মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন হিমাচলের আমজনতা। হিমাচলের ফলাফল দেখে অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা।
বিজেপি এবার চেয়েছিল, লড়াইটা হবে মোদী বনাম কংগ্রেস নেতৃত্ব। অন্যদিকে কংগ্রেসের মূল ফোকাস ছিল, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। গত পাঁচ বছরে বিজেপি সরকারের যে যা খামতি, ব্যর্থতা রয়েছে, সেগুলি তুলে ধরেছিল কংগ্রেস। হিমাচলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এবং মুখ্যমন্ত্রীর দুরাবস্থার ছবি নজরে এসেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও। সেই কারণে নাগাড়ে প্রচার কর্মসূচি চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। ভোটারদের কাছে আবেদন করেছেন, সরাসরি তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য।
নভেম্বরের ১২ তারিখ সোলানে এক সমাবেশ থেকে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “বিজেপি প্রার্থী কে আছে জানেন? আপনাদের মনে রাখার দরকার নেই। শুধু পদ্ম প্রতীককে মনে রাখবেন। ভোট দেওয়ার সময় যদি পদ্মফুট দেখেন, বুঝবেন ওটাই বিজেপি, এই নরেন্দ্র মোদীই আপনাদের কাছে এসেছে। আপনারা পদ্মফুলে যত ভোট দেবেন, প্রত্যেকটি আশীর্বাদ হয়ে সরাসরি মোদীর কাছে আসবে।” হিমাচলবাসীর সঙ্গে আত্মিক বাঁধন তৈরির চেষ্টা করেছিলেন মোদী। কিন্তু ভোটের ফলাফল থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচন আর বিধানসভা নির্বাচনের ইস্যুর মধ্যে ফারাক করতে পেরেছেন আমজনতা।
বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে হিমাচলের রাজনীতিতে খুব একটা হেভিওয়েট মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। কানাঘুষো শোনা যায়, তিনি বিজেপির বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার ঘনিষ্ঠ মহলের লোক। নড্ডা-ঘনিষ্ঠ শিবির এবং প্রেম কুমার ধুমালের ঘনিষ্ঠ শিবিরের মধ্যে একটি দ্বন্দ্বের কথাও শোনা যায়। বিশেষ করে জয়রাম ঠাকুর যখন বিজেপির রাজ্য কমিটিতে জায়গা করতে পারেননি, তখন সেই চিত্রটি আরও প্রকট হয়েছিল। দলীয় সূত্রে খবর, ধুমাল শিবিরের বেশ কিছু দাবিদাওয়া পূরণ না হাওয়ায় রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে এককাট্টা হওয়ার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, ন’টি আসন নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিল পদ্ম শিবির। সেই আসনগুলি নিজেদের পক্ষে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়েছিল, গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা হয়েছিল প্রচুর। কিন্তু তারপরও সেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে ব্যর্থ হয়েছেন দলীয় কর্মীরা। এর পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে যে অদৃশ্য ‘ধুমাল ফ্যাক্টর’ কাজ করছিল, সেই ‘বিদ্রোহ’ সামাল দিতেও খানিক ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যা শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলাফলে বিজেপির বিপক্ষেই গিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।