‘ভাইপো’-ভিক্ট্রি! আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু অভিষেকই কি জয়ের ‘নেপথ্য নায়ক’?

দূর্গ বাঁচানোর এই বঙ্গযুদ্ধে ভাইপো অভিষেক যেন মেঘনাদ। আড়ালে থাকলেন, ছক সাজালেন, ট্যাকেল করলেন, ফ্রন্টে গিয়ে গোলটাও করলেন।

'ভাইপো'-ভিক্ট্রি! আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু অভিষেকই কি জয়ের 'নেপথ্য নায়ক'?
গ্রাফিক্স- অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: May 02, 2021 | 8:31 PM

কলকাতা: ‘ভাইপো’, ‘ভাইপো’, ‘ভাইপো’, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত বিজেপির (BJP) শীর্ষনেতাদের কাছে শব্দটি ছিল জলভাত। মঞ্চে ওঠার পর আক্রমণ স্তোত্রের প্রথম বেদবাক্যই ‘ভাইপো।’ যে কোনও বিজেপি প্রার্থী থেকে শুরু করে একেবারে শীর্ষে থাকা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ, প্রত্যেকেই নিশানা করেছেন ‘ভাইপো’কে। প্রথমে রাখঢাক থাকলেও বহুবার বিজেপির একাধিক নেতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কে এই ‘ভাইপো’? একেবারে নাম নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ভাইপো’ সম্বোধন করে নিশানা করেছেন বিজেপির নেতা-প্রার্থীরা। আক্রমণের ঝাঁঝ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। তবে ২ মে শেষ হাসিটা হাসলেন ‘ভাইপো’ই।

‘ইসবার ২০০ পার’, দু’শো পার হল, কিন্তু বিজেপির নয় তৃণমূলের। আরও একবার নবান্ন মমতার দখলে। আর দূর্গ বাঁচানোর এই বঙ্গযুদ্ধে ভাইপো অভিষেক যেন মেঘনাদ। আড়ালে থাকলেন, ছক সাজালেন, ট্যাকেল করলেন, ফ্রন্টে গিয়ে গোলটাও করলেন। পাত্তাই পেল না বিজেপির সমারহ। আটদফার ভোটযজ্ঞ শেষে জয়ী আপাতত মেঘনাদই। ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’, ‘ভাইপো উইন্ডো’, ‘ভাইপো ট্যাক্স’, আরও কত কী! বিজেপির কোনও চালই চালের চাল হল না। মমতা যখন হুইলচেয়ারে, রেসট্র্যাকে লাফিয়ে ছুটলেন অভিষেকই। বিজেপির একের পর এক অগ্নিবাণ পাশ কাটিয়ে খেলে দিলেন তিনিই।

ঠাণ্ডা মাথায় ডিল করেছেন। নরমে-গরমে বার্তাও দিয়েছেন। তবে ছক থেকে সরেননি। তার প্রমাণই ২ মে-র ফল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিজেপির একের পর এক নেতা যখন কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন অভিষেককে, তখন একেবারে ঠাণ্ডা মাথায় নিজের কাজটা করে গিয়েছেন তিনি। বারবার নিশানা হয়েছেন, এমনকি বর্ষীয়ান-দুঁদে নেতারা যখন তৃণমূলের গাঁটছড়া খুলেছেন, সেই দায়ও বর্তেছে তার ওপর। শুভেন্দু অধিকারী কার্যত তাঁকে দুষেই দল ছেড়েছিলেন। বৈশালী ডালমিয়া, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে তৃণমূলের একের পর এক সৈনিক দল ছাড়ার জন্য দায়ী করেছেন অভিষেক আর ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে।

এত কিছুর পরেও প্রশান্তের হাতে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে দুই সংখ্যাতেই আটকে দিলেন অভিষেক। রাজনৈতিক সমাবেশ ছাড়া তৃণমূলের একেবারে সামনে আসেননি অভিষেক, সেখানে ছিলেন মমতাই, কিন্তু মোদী-শাহের চক্রব্যূহ ভেদ করে গেরুয়া জাহাজের সলিল সমাধির রূপকার তিনিই। অন্তত এমনটাই মনে করছে বিশ্লেষক মহল। রাজ্যে যেভাবে মোদী ঝড় আছড়ে পড়েছিল, জনমানষে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী খোঁজারও ধুম পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের প্রত্যাবর্তনে সে গুড়ে আপাতত বালি। তবে বঙ্গযুদ্ধে জয়ী হয়ে নিজেকে তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ম্যান’ হওয়ার দৌড়ে কাউকে ধারেকাছেও ঘেঁষতে দিলেন না অভিষেক। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, যোগী আদিত্যনাথদের রুখে দিয়ে আপাতত নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অট্টহাসি ‘মেঘনাদ’ অভিষেকের।

আরও পড়ুন: ‘জয়ী’ হয়েও নন্দীগ্রামে ‘পরাজিত’ মমতা, বললেন ‘মানুষ যা করে ভালর জন্যই করে’