বৃহস্পতিবার (০৮.০৮.২০২৪) অনেকরাতে রোগী দেখে সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন তিলোত্তমা (নাম পরিবর্তিত)। মাকে ফোন করেছিলেন রাত ১১টায়। সেটাই মায়ের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা। রাতের খাবার খেয়ে মাকে ঘুমতে বলেছিলেন। আর জি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া ছিলেন তিলোত্তমা। শুক্রবার সকালে সেই সেমিনার হল থেকেই উদ্ধার হয়েছে তাঁর মৃতদেহ। মেঝেতে পড়েছিলেন প্রাণহীন তিলোত্তমা। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ধর্ষণ ও খুনেরও ইঙ্গিত মিলেছে। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, মেয়েকে ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে। মৃতার মা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, “মেয়েটাকে অনেক কষ্ট করে ডাক্তারি পড়িয়েছিলাম, যাতে রোগীর সেবা করতে পারে। সেবা করতে এসে নিজেই চলে গেল…”
এই ঘটনার ভয়াবহতা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বাংলা বিনোদন জগতের অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। সারারাত জেগে নিন্দ্রাহীন দেবলীনা কলম ধরলেন টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল-এর জন্য:
আমি আজ সারারাত প্রায় জেগেই আছি। কিছুতেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারছি না। গা গুলিয়ে উঠছে। ঘৃণা হচ্ছে। লজ্জাবোধ করছি। তিনি একজন ডাক্তার। একজন মহিলা। সর্বোপরি আমাদের রাজ্যের কন্যা। ওঁর সঙ্গে কারা এই নৃশংসতা করেছে, জানতে চাই। অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমি আবারও শব্দটায় জোর দিচ্ছি–‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তি।
কে করেছে ওঁর সঙ্গে এই কাজটা, বলুন আমায়? হাসপাতালের ভিতরের মানুষজনেরা? শুনছি, দেহ নাকি পাওয়া গিয়েছে হাসপাতালেরই সেমিনার হলে। যতদূর জানি, সেমিনার হলে বাইরের কারও প্রবেশাধিকার থাকে না। তা হলে ধরে নিতেই হবে হাসপাতালের ভিতরের লোকজন এটা করেছে! আমার মতো হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ সেটাই আশঙ্কা করবে। এখন প্রশ্ন একটাই–ঠিক কোথায় নিরাপত্তা আছে–আমার বাড়িতে? আমি যে এই মুহূর্তে আমার বাড়িতে, আমার বেডরুমে বসে আছি এত রাতে, এটাও কি নিরাপদ আশ্রয়?
নাহ্, নিরাপদ নয়। ভয়ে কাঁটা হয়েছে শঙ্কা প্রকাশ করছি–যে কেউ আমার বাড়িতে ঢুকে যা খুশি করে চলে যেতে পারে। বারবার মনে হচ্ছে, প্রত্যেকটা ক্রিমিনালকে বাঁচানোর কেউ না-কেউ, কোথাও না-কোথাও উপস্থিত এই রাজ্যে। মর্মান্তিক ঘটনা আরও, মেয়েটির বাবা-মাকে শুনছি ফোন করে বলা হয়েছিল, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। কন্যার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁরা যখন আর জি কর হাসপাতালে আসেন, তাঁদের দেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। অন্ধকারে দেহ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। মাই গড!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই ফোন করেছেন মৃতার বাবা-মাকে। তাঁরা কেন এই ঘটনাটা ঢাকার চেষ্টা করছেন? এটা আমাদের চুপ থেকে মানতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে? যদি তাই-ই হয়, তা হলে বলতে হবে প্রত্যেকটা ক্রিমিনালকে আড়াল করে বাঁচানো হচ্ছে। বিষয়টা ভাবলে ভয়ে শিউরে উঠছি আমি। যে নৃশংসতা চলল, যারা চালালো, তারা আশ্বস্তই ছিল, কিছুতেই ধরা পড়বে না। তাই আর জি করের মতো হাসপাতালের সেমিনার হলে একজন ডাক্তারকে এভাবে মারতে পারল। কাজটা করার সময় একবারও ভয় পেল না। আর আমাদের বুঝিয়ে দিল হাসপাতালের মতো জায়গাও নিরাপদ নয়। ভাবতে পারছেন… আপনারা ভাবতে পারছেন…
আমি আবারও বলছি, এই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি। অবিলম্বে অভিযুক্তদের চোখের সামনে দেখতে চাইছি। তা যদি না হয়, অভিযুক্তদের ধরা না হয়, তা হলে কিন্তু এই শহরের অলিতে-গলিতে, যেখানে-সেখানে, যখন-তখন ধর্ষণ-খুন চলবে। অবিলম্বে শাস্তি না হলে প্রত্যেকটি সম্ভাব্য ক্রিমিনালের সাহস আরও বাড়বে। আমি শাস্তির অপেক্ষায় আছি। অসুস্থ বোধ করছি। বারবার শিউরে উঠছি…। আমার মনে হয় না কোনও নগরবাসীই এই মুহূর্তে শান্তিতে আছেন। বাবা-মায়ের শঙ্কিত! মেয়েটাকে বাইরে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না তাঁরা। আবারও বলছি অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।