‘অর্পিতার এত ভাল স্কিন, ফাউন্ডেশনের দরকাই পড়ে না’, গওহর জানকে নিয়ে অকপট অনিরুদ্ধ
সালটা ছিল ২০২১। কোভিড সে সময়ে শেষের পথে। এর মাঝেই উপস্থাপিত হয়েছিল ‘মাই নেম ইজ জান: আ ট্রিবিউট টু দ্য টাইমলেস লেগাসি অফ গওহর জান’। নামভূমিকায় অর্পিতা। পরিচালনায় অবন্তী চক্রবর্তী আর নাট্যরচনায় ছিলেন অবন্তী চক্রবর্তী এবং টিভিনাইন নেটওয়ার্কের এম ডি ও সিইও বরুণ দাস।
‘গওহরজান’– গজল, ঠুমরি, দাদরায় তাঁর ছিল অনায়াস যাতায়াত। কলের গান মানেই গওহর– পরাধীন ভারতে লোকের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত এই কয়নেজ। তবে প্রযুক্তির বিকাশ, এআই, রিমেক-রিমিক্সের ভিড়ে তাঁকে যে মুহূর্তে কার্যত ভুলতে বসেছিল আপামর ভারতীয় ঠিক তখনই এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের জীবন মঞ্চস্থ করতে তৎপর হন অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও টিম। সালটা ছিল ২০২১। কোভিড সে সময়ে শেষের পথে। এর মাঝেই উপস্থাপিত হয়েছিল ‘মাই নেম ইজ জান: আ ট্রিবিউট টু দ্য টাইমলেস লেগাসি অফ গওহর জান’। নামভূমিকায় অর্পিতা। পরিচালনায় অবন্তী চক্রবর্তী আর নাট্যরচনায় ছিলেন অবন্তী চক্রবর্তী এবং টিভিনাইন নেটওয়ার্কের এম ডি ও সিইও বরুণ দাস।
দেশ ছাড়িয়ে আজ বিদেশেও সমাদৃত এই নাটক। তবে যার হাতের ছোঁয়াতে অর্পিতা নিজেকে মেলে ধরেছেন গওহর রূপে তাঁর কথাই বা বাদ যায় কী করে? তিনি আর কেউ নন রূপটান শিল্পী অনিরুদ্ধ চাকলাদার। পিরিয়ড ড্রামায় মেকআপ বরাবরই কঠিন কাজ। পান থেকে চুন খসলে দর্শক ছেড়ে কথা বলেন না। এই সব কিছুকেই মাথায় রেখে চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেলেছিলেন অনিরুদ্ধ। কেমন ছিল সেই জার্নি? টিভিনাইন বাংলায় অকপট তিনি। বলছিলেন, “প্রথমেই গওহর জানের কিছু ছবি দেখেছিলাম। যদিও তাঁর সঙ্গে অর্পিতার মুখের মিল নেই তবে ওঁর আভিজাত্যের কথা বিশেষ করে মাথায় রাখতে হয়েছিল। গওহরের এক আইকনিক বৈশিষ্ট্য হল তাঁর জোড়া ভুরু। সেটা কিন্তু গোটা নাটক জুড়েই রাখা হয়। আর বাকিটা আমার, অবন্তী আর অর্পিতার যৌথ সিদ্ধান্ত।” এই শোয়ে অর্পিতার পোশাকের দায়িত্বে ছিলেন পৌলমী গুপ্ত। মানুষের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা ফুটিয়ে তুলতে প্রতি মুহূর্তে করতে হয়েছে রিসার্চ।
গওহরজান যে সময়ে মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন সে সময় মেকআপের কনসেপ্ট কি আদপে ছিল? কীভাবে সাজতেন ওঁরা? শিল্পীর কথায়, “আসলে সে সময় মেকআপের সরঞ্জামই তেমন ছিল না। চোখটাকে কাজল দিয়ে বড় করে আঁকা হত। একটু রুজ মাখানো হত, যেহেতু বিদেশী প্রভাব ছিল। লিপস্টিক সেই অর্থে ছিল না বললেই চলে। পান খেতেন খয়ের মিশিয়ে, যাতে ওই লাল রঙটা আসে। সেগুলোকে মাথায় রেখে মিলিয়ে মিশিয়েই অর্পিতার লুক ডিজাইনিং করেছিলাম আমরা।”
সিনেমার মেকআপ আর থিয়েটারের মেকআপের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। থিয়েটারের মেকআপ সাধারণত খানিক চড়া দাগের। তবে অনিরুদ্ধ বলছিলেন, “এ ক্ষেত্রে কিন্তু থিয়েট্রিক্যালি বাড়ানো হয়নি। আসলে অর্পিতার এত ভাল স্কিন যে আমি ফাউন্ডেশন ব্যবহারই করি না। শুধু ওই আগেকার দিনের রুজের ভাবটা আনতে ব্লাশ অনটা একটু স্ট্রং করি। আর চোখটা খানিক স্ট্রং করে দিই। গোটা নাটকে অনেকবার কাঁদার দৃশ্য আছে। তাই সেটাও মাথায় রাখতে হয়।” তবে চ্যালেঞ্জও কিছু কম নয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ব্যাকস্টেজে অর্পিতাকে বদলাতে হয় পোশাক-গয়না। ‘কিউ’ মিস করতে কিছুতেই রাজি নন তিনি। সেই কথাই বলছিলেন অনিরুদ্ধ। যোগ করলেন, “ও এতটাই মনোযোগী, কিউ মিস করা যাবেই না। ওই টুকু সময়ের মধ্যে ভারী ভারী সব পোশাক পরে আবার ব্যাক করা বেশ কঠিন। তবে এটাই আনন্দের, এতগুলো শো’তে এখনও পর্যন্ত একবারও কিন্তু কিউ মিস হয়নি।” দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজের সূত্রে অনিরুদ্ধ অর্পিতার বন্ধুও বটে। তাঁর কাজের প্রতি প্যাশন, একা হাতে ৯০ মিনিটের শো টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা প্রতিমুহূর্তেই মুগ্ধ করে তাঁকে। আগামী মাসেই কলকাতায় আসছেন গওহর ও গোটা টিম। নিজের শহরের শো শেষ গওহর ফের বের হবেন বিশ্বজয়ে।
এই দফায় গ্লোবাল ট্যুরে কোথায় কোথায় অভিনীত হবে ‘মাই নেম ইজ জান’, দেখে নিন-
- ২৪ নভেম্বর ২০২৪- স্ট্যাড থিয়েটার, অস্ট্রিয়া
- ৬ ডিসেম্বর ২০২৪- জিডি বিড়লা অডিটোরিয়াম, কলকাতা
- ১৭,১৮ জানুয়ারি, ২০২৫- শ্রীরাম সেন্টার, দিল্লি
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৫– হায়দরাবাদ
- ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫- কলামন্দির, কলকাতা
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫- জিডি বিড়লা অডিটোরিয়াম, কলকাতা
- ১৩ এপ্রিল ২০২৫-দ্য রোজ, ব্রাম্পটন, কানাডা