জ্বলছে বাংলাদেশ। দিকে দিকে হিংসার ছবিই যেন বাড়ছে আতঙ্ক। হত্যা, চুরি, আগুন, ধ্বংসলীলায় মেতেছে যেন একশ্রেণি, এই আন্দোলনের প্রতিচ্ছ্ববিই কী চেয়েছিলেন ছাত্ররা? TV9 বাংলার প্রশ্ন মুখ খুললেন ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনকারী বাংলাদেশের অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতার নামে এই উন্মত্ততা কেন?’ এ কোন ছবি প্রতিটা মুহূর্তে ধরা পড়ছে ক্যামেরায়? উত্তরে বাঁধন বলেন, ‘এর উত্তর দেওয়ার আগে আমি আসলে বলতে চাই, আমাদের এই আন্দোলনটা ছাত্র জনতার আন্দোলন। এ আন্দোলন সফল হয়েছে, এবং সফলতার মাধ্যমে বাংলাদেশ শৈরাচার মুক্ত হয়েছে। একজন স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং সেই শাসক দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। এই ঘটনাগুলো ঘটার আগে আসলে কী পরিমাণে অত্যাচার, জুলুম এই ছাত্রদের সঙ্গে হয়েছে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে হয়েছে, সে খবরগুলো যদি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বা আমাদের মিডিয়ায় দেখানো হয়…, তাহলে ভাল হয়। আমাদের গণমাধ্যম ভীষণভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে, প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে, কারণ তাদের কোনও স্বচ্ছতা ছিল না। সত্যি ঘটনাগুলোকে তুলে না ধরে, অন্যখবরে বেশি নজর দিয়েছিল, তাঁদের থেকে আমরা এটা আশা করিনি। তারা চুপ ছিলেন, তারা জড়বস্তুর মতো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের ছবি দেখাতে ব্যস্ত ছিলেন।
এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন নায়িকা। প্রশ্ন তুললেন, ‘কিন্তু এতগুলো তাজা প্রাণ, রাষ্ট্র ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে, রাষ্ট্রগুলি চালিয়েছে ছয় বছরের একটা শিশুর ওপর, এর ফলে অনেক শিশু মারা গিয়েছে, অনেক পুলিশ, সাধারণ মানুষ মারা গিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আমাদের যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যিনি এখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন, তিনি যে মূল্যায়নটা করছেন, সেটাকেই উল্লেখ করা হচ্ছে। তিনি তো এক বা দুদিন ধরে এই স্বৈরাচারী শাসনটা জারি করেননি, তিনি টানা ২০ বছর ধরে এই কাজ চালিয়েছেন। যার জন্য প্রতিটা সিস্টেম কিন্তু প্রশ্ন বিদ্ধ। এখন যাঁরা দায়িত্বে রয়েছে, তাঁদের ওপর কিন্তু আমাদের কোনও আস্থা নেই। কারণ আমরা জানি, তাঁরাও তাঁর পক্ষের লোকই ছিলেন। গত দুদিন ধরে ছাত্ররা রাস্তা পরিষ্কার করছে, মন্দির পাহারা দিচ্ছে, মসজিত পাহারা দিচ্ছে।’
তবে এই উল্লাসের নামে চরম অরাজকতা, তা কী আন্দোলনকে কলুষিত করছে না? উত্তরে তিনি বলেন, যে কোনও গণঅভ্যুত্থানের পরিবর্তী যে সময়টা থাকে, সেটা খুব ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। প্রতিটা আন্দোলনের ক্ষেত্রেই এটা সঠিক। আমাদের ক্ষেত্রে যে সেটা আলাদা হবে না, জানাই ছিল। ১৫ বছরের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, সেটা উল্লাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসছে। কিছু সুবিধাবাদী লোক তো রয়েছেনই, যাঁরা এগুলো করছে। আমার মনে হচ্ছে না আন্দোলন কলুষিত হচ্ছে।
ছাত্রদের সমর্থনের সময় একবার এক পোস্ট ভাইরাল হল অভিনেত্রীর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। যেখানে উল্লেখ থাকে– ‘ছাত্ররা যদি রাজাকার, দেশটা কার? ইন্ডিয়ার?’ এই ধরনের পোস্টার কেন? এর উত্তরে আজমেরী বলেন, ‘আমার একটা বিষয় ভীষণ অস্বস্তির লাগে, আমি যেহেতু অভিনয় করি, আমি বাংলা-কলকাতায় কাজ করেছি, বিশাল ভরদ্বাজের মতো পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করেছি। আমার মনে হয়, এই যে আমরা এক বিদ্বেষের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, এখান থেকে আমাদের বেরতে হবে। ইন্ডিয়া আমাদের প্রতিবেশী, সবচেয়ে কাছের, আমি অতীতে কলকাতায় গিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছি, আমার মনে হয় না আমি অন্য কোনও দেশে এসেছি। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি অনেকটাই এক। এমন কি আমি যখন কান-এ গিয়েছি, কলকাতা আমায় যেভাবে সমর্থন জানিয়েছে, বলেছে এটা একটা বাংলা ছবি, কিন্তু কিছু মানুষ আছে, যারা বিদ্বেষের রাজনীতিকে পুঁজি করতে চায়, এখান থেকেই এই ছাত্ররা আমাদের মুক্ত করতে চায়। আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারব না। এই প্রতিহিংসার রাজনীতি, নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’