রণজিৎ দে |
May 10, 2021 | 8:02 PM
দণ্ডদান: নেপালবাবু শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক। একদিন রবীন্দ্রনাথ নেপালবাবুকে গম্ভীরগলায় বললেন, “আজকাল আপনার বড় ভুলচুক হচ্ছে, এ ভাল নয়। আপনাকে দণ্ড পেতে হবে।” নেপালবাবু তো ভেবে অস্থির। এমন সময় রবীন্দ্রনাথ ঘরের মধ্যে একটা লাঠি নিয়ে ঢুকে নেপালবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “এই হল আপনার দণ্ড।কাল আপনি ভুলে গেছেন।” নেপালবাবু স্বস্তি পেলেন।
গোঁফ-দাড়ি : এক গানের আসর। বিখ্যাত গায়ক গোপেশ্বরবাবু গান গাইতে উঠেছেন। সেই আসরে উপস্থিত রবীন্দ্রনাথও। গোপেশ্বরবাবুর গান হয়ে যাওয়ার পর সবাই মিলে ধরল রবি ঠাকুরকে, একটা গান গাইতেই হবে। রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন, “গোপেশ্বরের পর কি এবার দাড়িশ্বরের পালা?”
মুখ ও মুখ্য : প্রয়াণের মাস দশেক আগের এক সকালবেলা। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। কবিকে হাত-মুখ ধুইয়ে,চুল আঁচড়িয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন সময় অনিলকুমার ঘরে ঢুকলে তিনি খুব গম্ভীরভীবে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “রবীন্দ্র-রচনাবলীর এখনকার ‘মুখ্য’ সংস্করণের খবর কী? বলা-মাত্র অনিলবাবু যেই না বৃত্তান্ত বলতে শুরু করেছেন, অমনি রবীন্দ্রনাথ ধমকে বলে উঠলেন, “সিলেটি বাঙাল! আমি জানতে চেয়েছিলাম আজ আমার মুখের অবস্থা কী রকম!”
সতর্কবাণী : কালিম্পঙে মৈত্রেয়ী দেবীর সঙ্গে দিলীপকুমারের আলাপ। কবি বললেন, “ওহে দিলীপ, এই সেই মৈত্রেয়ী যে তোমার গান শুনতে চায়। আর এই সেই দিলীপ যে বান্ধবীবৎসল। তোমাদের আলাপের সেতু হলাম আমি। কেবল দেখো, আলাপ করতে গিয়ে এগিয়ো একটু রয়ে-সয়ে, সেতুটি বৃদ্ধ, বেশি দোলন সইবে না।”
ঢাকা ও খোলা : একদিন রমেশচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে ঢাকার পুরনো শহর দেখাতে নিয়ে গেছেন। ঢাকার শহর তখন নোংরা ছিল। রাস্তাগুলো সরু সরু। এদিকে রমেশচন্দ্র যেখানে ছিলেন সেই রমনা ছিল বেশ সুন্দর। ঘিঞ্জি নয়। ফাঁকা ফাঁকা। রবীন্দ্রনাথ তাই দেখে রমেশকে বলেন, “ তোমার পাড়ার নাম বদলানো উচিৎ।” রমেশ বলেন, “কেন?” তখন তিনি বলেন, “শহরের এই অংশের নাম সার্থক—ঢাকা। তোমার ওই রমনার নাম হওয়া উচিত ছিল ‘খোলা’।”
প্রাইজ বনাম সারপ্রাইজ : একদিন রবীন্দ্রনাথকে তাঁর সেক্রেটারি অনিলকুমার চন্দ বললেন, “জানেন আমার ফটো তুলে শম্ভুবাবু বিদেশে কম্পিটিশনে প্রাইজ পেয়েছেন! এ কথা শুনে চোখ বড় বড় করে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “বটে! এটা প্রাইজ না হোক,আমার কাছে সারপ্রাইজ তো বটেই।” বলেই হো হো করো হোসতে লাগলেন।
ভৌতিক মানুষ : রবীন্দ্রনাথের কাছে এক ভদ্রলোক জানতে চাইলেন তিনি ভূতে বিশ্বাস করেন কিনা? তিনি জবাব দিলেন, “বিশ্বাস করি বা না-করি,তাদের দৌরাত্ম্য টের পাই বই কি মাঝে মাঝে! সাহিত্যে, পলিটিক্সে মাঝে মাঝে তুমুল দাপাদাপি শুরু করে দেয় ওরা। দেখেছিও অবশ্য, দেখতে শুনতে কিন্তু ঠিক মানুষেরই মত।”