দুর্বা সেন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোট্ট নাম, পদবি লম্বা। কারণটা জিজ্ঞাসা করতেই হেসে উত্তর, সেন পিতৃদত্ত আর বন্দ্যোপাধ্যায় ভালবাসার। কিন্তু আজকাল তো অনেকেই শুধু পিতৃদত্ত পদবিতে থেকে যান… হ্যাঁ যান, আবার কোনওটাও ব্যবহার করেন না, এমন মানুষও রয়েছেন। কিন্তু ভালবাসায় অনেক কিছুই করা যায়।
কে এই দুর্বা
‘অনেক কথা না বলাই থেকে যায়’, রাজর্ষি দের নতুন ছবি ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবির এই গানটি এখন অনেকেরই পছন্দের তালিকায়। কিন্তু এই গানের কথা কে লিখেছেন, সেটা হয়তো খুব কম মানুষ জানেন। গানের কথা লিখেছেন দুর্বা সেন বন্দ্যোপাধ্যায়।
গীতিকারের পরিচিতি হয় না
আসলে গানের কথা কে লিখেছেন, তার থেকে বেশি আমজনতা সুরকারের নামের খোঁজ রাখেন। গীতিকারের নাম জিজ্ঞাসা করলেই গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসতে হবে। গুটি কয়েক বিখ্যাত গীতিকারের নামই মানুষ জানেন। এমনকী ইন্ডাস্ট্রিতেও খুব কম মানুষ গীতিকারের নাম জানেন। নিজেদের পরিচিত কিছু মানুষের লেখা নিয়ে, অথবা সুরকার নিজেই কথা, সুর, গান গাওয়া—একসঙ্গে তিনটেই করে ফেলেন আজকাল, বললেন দুর্বা। আগে সব ক’টি বিভাগের জন্য আলাদা-আলাদা শিল্পী থাকতেন। তবে সেই সময়ের প্রখ্যাত দু’-একজন ছাড়া সব গীতিকারের নাম ক’জন জানেন? প্রশ্ন দুর্বার।
পেশা বাছার কারণ
জানেন যখন এই পেশায় এমন হয়, এলেন কেন, প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিকভাবেই। “ছোট থেকেই সঙ্গীত খুব ভালবাসি, কিন্তু সুর করতে পারি না। কবি নই, এখন তো প্রায় সবাই কবি, পাঠকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি (হাসি)। কিন্তু নিজের মনের কথা তো বলতে চাই। সঙ্গীতের সঙ্গে জুড়েও থাকতে চাই। এই ইচ্ছে থেকেই আমার এই পেশায় আসা”, বললেন দুর্বা।
প্রথম কাজ পাওয়া
ছোট থেকে নিজের মনের কথা খাতায় লিখে রাখতাম। কিন্তু সেটা কাউকে দেখানো হত না। ভাবতাম কী করে নিজের মনের এই কথাগুলো সকলের সঙ্গে ভাগ করব। শুরু করলাম ফেসবুকে লেখা। সেখানে আমার লেখা দেখে সুদেষ্ণাদি (রায়), রাণাদা (অভিজিৎ গুহ) যোগাযোগ করেন। প্রথমে জ়ি অরিজিন্যালে তাঁদের ছবিতে গান লেখার সুযোগ দেন। পরে ‘শ্রাবণের ধারা’ ছবির সব ক’টা গান লিখি। ছবির প্রিমিয়ারে আলাপ রাজর্ষিদার সঙ্গে। বলেছিলেন, খুব ভাল গান লিখেছি। পরে এই ছবির সময় তিনি আমায় একটা গান লিখে দিতে বললেন।
পুরুষ পেশায় লড়াই কতটা কঠিন
গীতিকার বললে প্রথমেই পুরুষ গীতিকারদের নামই মনে আসবে। কিন্তু দুর্বার মত অন্য। “পুরুষ-নারী বলে নয়, এই পেশায় এসে বুঝেছি, ব্যাক-আপ থাকা জরুরি। এখানে সবার একটা নিজস্ব লবি রয়েছে। যে যাঁর সঙ্গে কাজ করেন, তাঁর সঙ্গেই কাজ করতে থাকেন। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে চান না। খুব কম সংখ্যক মানুষই সুযোগ দেন। এটা ঠিক, গীতিকার মহিলা এমন নাম কেউ জানেন না। তবে নেই, তা কিন্তু নয়। তাঁরা নিজের স্বামী বা প্রেমিকের জন্য কাজ পাচ্ছেন। কিন্তু নাম ক’জন জানেন? তাঁদের গান যে হিট নয়, এমন নয়। এমন অনেকে আছেন, যাঁদের গান হিট—লেখা তাঁর, সুর স্বামীর। সকলে সুরকার আর গায়ক-গায়িকার নাম জানেন। গীতিকার সেই মহিলার নয়।
পেশার লড়াই
এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করবেন কী করে? “করতে তো হবে। হাল ছাড়তে শিখিনি। জানি অসম লড়াই। তবে কিছু ভাল মানুষ ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও আছেন, তাঁরা কাজ দেবেন। আর নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে আশা রাখছি নিজেদের গণ্ডীর বাইরে গিয়েও লোকজন ডেকে কাজ দেবেন”।
নতুন ছবি
তিনটে ছবি হয়ে রয়েছে। এখনই নাম বলতে পারছি না, বলা বারণ। আর দু’-একটার কথা চলছে। তবে যতক্ষণ না হচ্ছে, বোঝেনই তো…