থিয়েটার পাড়ার স্মৃতিসরণিতে পদচারণা লকডাউন ডকু ‘স্পটলাইট’-এর, থাকছে সৌমিত্রর ‘শেষ’ ভিডিয়ো রেকর্ডিং

Sohini chakrabarty |

Feb 23, 2021 | 12:09 PM

একসময়ে ‘নীলকণ্ঠ’ নাটক মঞ্চে রমরম করে চলত। সেই নাটকেরই একটা অংশ পাঠ করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর কন্যা পৌলমী বসু। সেই পাঠ রয়েছে এই ডকুমেন্টারিতে।

থিয়েটার পাড়ার স্মৃতিসরণিতে পদচারণা লকডাউন ডকু ‘স্পটলাইট’-এর, থাকছে সৌমিত্রর ‘শেষ’ ভিডিয়ো রেকর্ডিং
স্টার থিয়েটার দীর্ঘদিন ‘সমাধান’ নাটকে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিজ্ঞতার কথাও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি। সেই অংশও রয়েছে এই ডকুমেন্টারিতে।

Follow Us

ছোট্ট ছেলে অরি। বয়স মাত্র ১০ বছর। অরি-র মা একজন থিয়েটার কর্মী। মায়ের জীবনের নিত্যদিনের ওঠাপড়ার সঙ্গেই এগিয়ে চলে অরি-র জীবন।

উপরোক্ত ঘটনার সময়কাল আশির দশক। সেই সময় ঠিক কেমন ছিল বাংলার থিয়েটার পাড়া? কেমন ছিল থিয়েটারের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা মানুষের জীবন? সেইসব নিয়েই ‘দ্য ফায়ার বার্ড’ নামে যে উপন্যাস লিখেছিলেন সৈকত মজুমদার, সেই উপন্যাসের প্রেক্ষাপটেই এক অনন্য ভাবনা নিয়ে আসছে ‘স্পটলাইট’।

এক ঘণ্টার ডকুমেন্টারি ‘স্পটলাইট’-এ তুলে ধরা হয়েছে থিয়েটার পাড়ার বিবর্তন। ষাট-সত্তরের দশকের থিয়েটার পাড়া থেকে একুশ শতকের থিয়েটার, কেমন ছিল এই থিয়েটারের যাত্রাপথ? চড়াই-উতরাইয়ের পাশাপাশি কী-কী সাফল্য এসেছিল বাংলার বুকে—সেইসব নিয়েই বাচিক শিল্পী তথা অভিনেতা সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ডকুমেন্টারি ‘স্পটলাইট’।

সুজয়ের নিজের কথায়, “এটা একটা লকডাউন ডকুমেন্টারি। যাকে অনায়াসেই বলা যায় ‘এ ডিজিটাল ওয়াক ডাউন থিয়েটার পাড়া’। সৈকতের উপন্যাস পড়তে গিয়েই ষাট-সত্তর এবং আশির দশকের থিয়েটার নিয়ে গবেষণার ইচ্ছে জাগে। একটু তলিয়ে দেখে বুঝতে পেরেছিলাম, যে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছি, তা নতুন প্রজন্মকে জানানো প্রয়োজন।’’

এই কাজে সুজয়কে সাহায্য করেছেন নাট্য়কর্মী রূদ্ররূপ মুখোপাধ্যায় এবং অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। “এই ধরনের ডকুমেন্টারি তৈরি করতে যে ক্যামেরা, টাকাপয়সা এবং গবেষণা প্রয়োজন, সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই দু’জন (রূদ্ররূপ ও অনিন্দ্য) অক্লান্ত পরিশ্রম করে লকডাউনের মধ্যে সমস্ত শুটিং করেছেন। এঁরাই সূত্রধর। গোটা ব্যাপারটা সাজিয়ে গুছিয়ে সকলের সামনে প্রকাশ করতে পারছি ওঁদের সাহায্যে,’’ নাগাড়ে বলে গেলেন সুজয়।

উত্তর কলকাতায় মামারবাড়ি ছিল সুজয়প্রসাদের। সেই সুবাদেই অনেকটা সময় সেখানকার অলিগলিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। আর তখনই নজর কেড়েছিল উত্তর কলকাতার থিয়েটার পাড়া। সুজয়ের কথায়, “আমি যখন থিয়েটার দেখা শুরু করি, তখন সৌমিত্র জেঠু (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) পাবলিক থিয়েটারের হাল ধরেছেন। সেটা ছিল স্বর্ণযুগ। যদিও সৌমিত্রবাবু আরও অনেক আগে থেকেই থিয়েটার করছেন।’’

সুজয়ের প্রশ্ন, এই সময়টার কথা এখনকার প্রজন্ম জানবে না? পাবলিক থিয়েটার কেমন ছিল, বিবর্তনের পরই বা কেমন হয়েছে—এগুলো ভীষণ আকর্ষণীয় বিষয়। সুজয় বলেন, “যাঁরা থিয়েটার নিয়ে পড়াশোনা করছেন, গবেষণা করছেন, তাঁদেরও তো অনেক কিছু জানার থাকতে পারে এই বিবর্তনের অধ্যায় প্রসঙ্গে। এই ভাবনা থেকেই ডকুমেন্টারি তৈরির কথা ভেবেছিলাম। আমার বিশ্বাস তরুণ প্রজন্মের কাছে স্পটলাইট একটা নিদর্শন হয়ে থাকবে।’’

যে সব চমক রয়েছে ‘স্পটলাইট’-এ

একসময়ে ‘নীলকণ্ঠ’ নাটক মঞ্চে রমরম করে চলত। সেই নাটকেরই একটা অংশ পাঠ করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর কন্যা পৌলমী বসু। সেই পাঠ রয়েছে এই ডকুমেন্টারিতে। “সৌমিত্র জেঠুর লাস্ট ভিডিয়ো রেকর্ডিং এটা। সেটা আমার ডকুমেন্টারিতে রয়েছে। এটা আমার কাছে বিশাল প্রাপ্তি”, বলছেন সুজয়।

‘নহবত’ নাটকের প্রাণকেন্দ্র ছিল কেয়া চরিত্রটি। আর নিজ অভিনয় দক্ষতায় সেই চরিত্রে জনপ্রিয় হয়েছিলেন রত্না ঘোষাল। ‘স্পটলাইট’-এ সেই স্মরণীয় চরিত্র ‘কেয়া’-র কিছু সংলাপ পাঠ করেছেন তিনি। নতুন প্রজন্ম নিঃসন্দেহে এই পাঠ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন।

নাটক-থিয়েটার প্রসঙ্গে আলোচনা হলে যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নাটক ‘নহবত’, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘নাগপাশ’ একসময় তপন থিয়েটারের আইকনিক নাটক ছিল। কত শো যে হয়েছে, গুনে শেষ করা যাবে না। ‘নহবত’ নাটকে সত্যবাবু এবং শ্রীলা মজুমদার অভিনীত একটি দৃশ্যের ভিডিয়ো ফুটেজও রয়েছে ‘স্পটলাইট’-এ।

থিয়েটারের ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন ব্রাত্য বসু। রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দুই দিক নিয়েই আলোচনা করেছেন তিনি।

বিভিন্ন মাইলস্টোন সৃষ্টিকারী নাটকের পোস্টারের ঝলকও পাওয়া যাবে এই ডকুমেন্টারিতে। ‘বারবধূ’ নাটকে ১০০ রজনীর পোস্টারের পাশাপাশি বিভিন্ন পুরনো নাটকের পোস্টার দেখা যাবে ‘স্পটলাইট’-এ। সৌজন্যে আর্ট কিউরেটর এবং আর্কাইভ্য়ালিস্ট শৌনক চক্রবর্তী। সুজয় জানিয়েছেন, সেই সময় অর্থাৎ ষাট, সত্তর বা আশির দশকে নাটক-থিয়েটারের বিজ্ঞাপনের জন্য পোস্টার বেরোত। সেইসব পোস্টার দেখানো হয়েছে এই লকডাউন ডকুমেন্টারিতে।

স্টার থিয়েটার দীর্ঘদিন ‘সমাধান’ নাটকে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিজ্ঞতার কথাও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি। সেই অংশও রয়েছে এই ডকুমেন্টারিতে।

করোনার দাপটে এখন তো প্রায় সবই ডিজিটাল আর অনলাইন। আগামী দিনে থিয়েটারের ভবিষ্যৎ কেমন হতে চলেছে সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন সোহাগ সেন।

বলিউড অভিনেতা নীরজ কবিও অংশ নিয়েছেন এই ডকুমেন্টারিতে। ‘দ্য ফায়ার বার্ড’ থেকে কিছুটা অংশ পাঠ করেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকার রয়েছে জয়িতা সেনের। যাঁর মা-বাবা ছিলেন একসময়ের নামকরা থিয়েটার প্রযোজক। এখন তো সিনেমার প্রযোজক হয়, একথা তরুণ সমাজ জানে। কিন্তু থিয়েটারেরও যে প্রযোজক থাকতেন, এ কথা কিন্তু অনেকেরই অজানা।

‘আমি চাই না তোমার ভালবাসা’… বারবধূ নাটকের এই বিখ্যাত গান গেয়েছেন দামিনী বেণী বসু। ওই গান দিয়েই শেষ হবে এই ডকুমেন্টারি।

গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ 

Next Article