“থ্যাঙ্ক ইউ ক্যানসার”, বিশ্ব ক্যানসার দিবসে মারণরোগকে ধন্যবাদ স্বাগতালক্ষ্মীর

রণজিৎ দে |

Feb 05, 2021 | 12:23 PM

আজ বছর দুই হল সঙ্গীত শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তর শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। শরীর কাবু হলেও তাঁর মনে থাবা বসাতে পারেনি এই মারণরোগ।

Follow Us

ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ভালবেসে ‘আকাশ’ বলে ডাকে। আজ এই ‘আকাশ’-এ এক টুকরো মেঘ জমেছে। যদিও এই মেঘ ‘আকাশ’-এর মনে বৃষ্টি নামাতে পারেনি। ভেজাতে পারেনি মনের মাটি। বরং এই জলদগম্ভীর মেঘ জমতে-জমতে ‘আকাশ’-এর মনকে করে তুলেছে আরও শক্ত। নতুন করে বাঁচার মানে শিখিয়েছে তাঁকে।

এই ‘আকাশ’ স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। আজ বছর দুই হল তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। শরীর কাবু হলেও মনে থাবা বসাতে পারেনি এই মারণ রোগ।
কী করেই বা বসাবে? আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবসে TV9 বাংলার তরফে স্বাগতালক্ষ্মী সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি তো এই রোগ নিয়েই জন্মেছি, অন্তত ডাক্তার আমায় তেমনটাই বলেছেন। সেই কোন ছোটবেলা থেকেই তো আমি ভুগছি। ছ’-সাত বছর অন্তর-অন্তর একের পর এক অস্ত্রপোচার হয়েছে আমার শরীরে। তবু দমে যায়নি আমি। কেউ ঘুণাক্ষরে টেরও পায়নি। আমার শরীরের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে আমার গান। ক্যানসার কিন্তু তখনও ঘাপটি মেরে ছিল আমার শরীরে।”

২০১৯-এর স্মৃতি হাতড়ে স্বাগতালক্ষ্মীর কথায় বেরিয়ে আসে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের কথা। স্বাগতালক্ষ্মী বলেন, “আর আটকানো গেল না। আমার শরীর ফুঁড়ে বেড়িয়ে এল এই রোগ। যখন লড়াই করলাম,কেউ জানল না। কিন্তু যখন সুস্থতার দিকে চারিদিকে জানাজানি হল। আর যখনই জানাজানি হল, অবাক হলাম। কীভাবে যেন আমার এত দিনের গান-জীবন, আমার এত দিনের সাধনা সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠল আমার ক্যানসার! অথচ এই রোগটা তো আমি সেই কোন ছোটবেলা থেকে তিলে-তিলে শরীরে বহন করে চলেছি! নতুন করে এই রোগ আমায় আর কীভাবেই বা মারবে?”

বিশ্ব ক্যানসার দিবসের আলাদা কোনও তাৎপর্য বা বিশেষত্ব নেই স্বাগতালক্ষ্মীর কাছে। এই দিনটা আলাদা করে উদযাপন করতে চান না তিনি। তাঁর প্রশ্ন, “ক্যানসারকে কখনও সেলিব্রেট করা যায়? এটা তো ভীষণভাবে ব্যক্তিগত একটা লড়াই। যাঁর হয়েছে তিনি বোঝেন। এই ব্যক্তিগত লড়াইকে, কষ্টকে কখনও উদযাপন করা সম্ভব? আনন্দকে সেলিব্রেট করা যায়। রোজ় (গোলাপ) ডে, দুর্গাপুজো—এই সব নিয়ে সেলিব্রেশন চলে। কিন্তু ক্য়ানসার তো কোনওভাবেই আনন্দের হতে পারে না। তাহলে এই দিনটা নিয়ে কেন আলাদা করে উৎযাপন করব?” স্বাগতালক্ষ্মীর অকপট বক্তব্য়, “শরীর থাকলে রোগ হতেই পারে। কিন্তু রোগ নিয়ে সেলিব্রেশন চলে না। রোগে মন যেন নুইয়ে না পড়ে, বরং সেই দিকে খেয়াল রাখা দরকার। মন ঠিক থাকলেই শরীর ঠিক থাকবে।”

কীভাবে মন ঠিক রাখেন স্বাগতালক্ষ্মী? তাঁর মন ঠিক রাখার একমাত্র মন্ত্র গান। সঙ্গীতই তাঁর সঞ্জীবনী সুধা। কোভিড-পর্বে টানা তিনশো দিন ধরে তিনি গান গেয়ে চলেছেন। ক্য়ানসার যেমন তাঁকে বিদ্ধ করেছে, করোনা তেমনই তো গোটা বিশ্বকে ছারখার করে দিয়েছে! মুক্তির জন্যই তিনি একের পর এক গেয়ে চলেছেন রবীন্দ্রনাথের গান, মীরার ভজন, চণ্ডী-স্তোত্র, দেশ-বিদেশের বহু গান। স্বাগতালক্ষ্মীর কথায়, “এতো শুধু গান নয়, যেন এক একটা সিনেমা।” সিনেমার প্রতি আলাদা ঝোঁক স্বাগতালক্ষ্মীর। তিনি চান সিনেমা বানাতে।

স্বাগতালক্ষ্মী কখনও ছোট করে কিছু ভাবতে পারেন না। তিনি যে ‘আকাশ’। এর আগে তিনি গোটা ‘গীতবিতান’ গেয়ে ফেলেছেন। পাঠ করেছেন গোটা চণ্ডী-স্তোত্র। গানই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই তো স্বাগতালক্ষ্মী অবলীলায় বলতে পারেন, “থ্যাঙ্ক ইউ ক্য়ানসার।” শুধু এক টুকরো প্রশ্ন-মেঘ জমেছে আকাশ-মনে। “আমার না-হয় এই একরত্তি শরীরে ক্য়ানসার বাসা বেঁধেছে। তার চিকিৎসাও চলছে। কিন্তু সমাজের শরীরে যে ক্য়ানসার বাসা বাঁধল, তার চিকিৎসা কি সম্ভব?”

ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ভালবেসে ‘আকাশ’ বলে ডাকে। আজ এই ‘আকাশ’-এ এক টুকরো মেঘ জমেছে। যদিও এই মেঘ ‘আকাশ’-এর মনে বৃষ্টি নামাতে পারেনি। ভেজাতে পারেনি মনের মাটি। বরং এই জলদগম্ভীর মেঘ জমতে-জমতে ‘আকাশ’-এর মনকে করে তুলেছে আরও শক্ত। নতুন করে বাঁচার মানে শিখিয়েছে তাঁকে।

এই ‘আকাশ’ স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। আজ বছর দুই হল তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। শরীর কাবু হলেও মনে থাবা বসাতে পারেনি এই মারণ রোগ।
কী করেই বা বসাবে? আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবসে TV9 বাংলার তরফে স্বাগতালক্ষ্মী সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি তো এই রোগ নিয়েই জন্মেছি, অন্তত ডাক্তার আমায় তেমনটাই বলেছেন। সেই কোন ছোটবেলা থেকেই তো আমি ভুগছি। ছ’-সাত বছর অন্তর-অন্তর একের পর এক অস্ত্রপোচার হয়েছে আমার শরীরে। তবু দমে যায়নি আমি। কেউ ঘুণাক্ষরে টেরও পায়নি। আমার শরীরের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে আমার গান। ক্যানসার কিন্তু তখনও ঘাপটি মেরে ছিল আমার শরীরে।”

২০১৯-এর স্মৃতি হাতড়ে স্বাগতালক্ষ্মীর কথায় বেরিয়ে আসে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের কথা। স্বাগতালক্ষ্মী বলেন, “আর আটকানো গেল না। আমার শরীর ফুঁড়ে বেড়িয়ে এল এই রোগ। যখন লড়াই করলাম,কেউ জানল না। কিন্তু যখন সুস্থতার দিকে চারিদিকে জানাজানি হল। আর যখনই জানাজানি হল, অবাক হলাম। কীভাবে যেন আমার এত দিনের গান-জীবন, আমার এত দিনের সাধনা সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠল আমার ক্যানসার! অথচ এই রোগটা তো আমি সেই কোন ছোটবেলা থেকে তিলে-তিলে শরীরে বহন করে চলেছি! নতুন করে এই রোগ আমায় আর কীভাবেই বা মারবে?”

বিশ্ব ক্যানসার দিবসের আলাদা কোনও তাৎপর্য বা বিশেষত্ব নেই স্বাগতালক্ষ্মীর কাছে। এই দিনটা আলাদা করে উদযাপন করতে চান না তিনি। তাঁর প্রশ্ন, “ক্যানসারকে কখনও সেলিব্রেট করা যায়? এটা তো ভীষণভাবে ব্যক্তিগত একটা লড়াই। যাঁর হয়েছে তিনি বোঝেন। এই ব্যক্তিগত লড়াইকে, কষ্টকে কখনও উদযাপন করা সম্ভব? আনন্দকে সেলিব্রেট করা যায়। রোজ় (গোলাপ) ডে, দুর্গাপুজো—এই সব নিয়ে সেলিব্রেশন চলে। কিন্তু ক্য়ানসার তো কোনওভাবেই আনন্দের হতে পারে না। তাহলে এই দিনটা নিয়ে কেন আলাদা করে উৎযাপন করব?” স্বাগতালক্ষ্মীর অকপট বক্তব্য়, “শরীর থাকলে রোগ হতেই পারে। কিন্তু রোগ নিয়ে সেলিব্রেশন চলে না। রোগে মন যেন নুইয়ে না পড়ে, বরং সেই দিকে খেয়াল রাখা দরকার। মন ঠিক থাকলেই শরীর ঠিক থাকবে।”

কীভাবে মন ঠিক রাখেন স্বাগতালক্ষ্মী? তাঁর মন ঠিক রাখার একমাত্র মন্ত্র গান। সঙ্গীতই তাঁর সঞ্জীবনী সুধা। কোভিড-পর্বে টানা তিনশো দিন ধরে তিনি গান গেয়ে চলেছেন। ক্য়ানসার যেমন তাঁকে বিদ্ধ করেছে, করোনা তেমনই তো গোটা বিশ্বকে ছারখার করে দিয়েছে! মুক্তির জন্যই তিনি একের পর এক গেয়ে চলেছেন রবীন্দ্রনাথের গান, মীরার ভজন, চণ্ডী-স্তোত্র, দেশ-বিদেশের বহু গান। স্বাগতালক্ষ্মীর কথায়, “এতো শুধু গান নয়, যেন এক একটা সিনেমা।” সিনেমার প্রতি আলাদা ঝোঁক স্বাগতালক্ষ্মীর। তিনি চান সিনেমা বানাতে।

স্বাগতালক্ষ্মী কখনও ছোট করে কিছু ভাবতে পারেন না। তিনি যে ‘আকাশ’। এর আগে তিনি গোটা ‘গীতবিতান’ গেয়ে ফেলেছেন। পাঠ করেছেন গোটা চণ্ডী-স্তোত্র। গানই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই তো স্বাগতালক্ষ্মী অবলীলায় বলতে পারেন, “থ্যাঙ্ক ইউ ক্য়ানসার।” শুধু এক টুকরো প্রশ্ন-মেঘ জমেছে আকাশ-মনে। “আমার না-হয় এই একরত্তি শরীরে ক্য়ানসার বাসা বেঁধেছে। তার চিকিৎসাও চলছে। কিন্তু সমাজের শরীরে যে ক্য়ানসার বাসা বাঁধল, তার চিকিৎসা কি সম্ভব?”

Next Article