Father’s Day: ‘বাপি চলে যাওয়ার পর স-অ-অ-অ-ব আমি জানতে পারছি’, সৌমিত্রকন্যা পৌলমী বসু

Sneha Sengupta |

Jun 20, 2022 | 1:01 PM

Soumitra Chatterjee-Paulami Bose: বাবাকে হারিয়েছেন পৌলমী। বাংলার সংস্কৃতির জগৎ হারিয়েছে এক লেজেন্ডকে, এক অভিভাবককে। পিতৃহীন মেয়েটি আজ কেমন আছেন?

Fathers Day: বাপি চলে যাওয়ার পর স-অ-অ-অ-ব আমি জানতে পারছি, সৌমিত্রকন্যা পৌলমী বসু
পিতৃদিবস স্পেশ্যাল।

Follow Us

স্নেহা সেনগুপ্ত

বাবা অন্তঃপ্রাণ ছিল মেয়েটি। বাপির ছায়াসঙ্গী ছিল সে। আদুরে, আহ্লাদি… বাবার একমাত্র মেয়েরা যেমনটা হয় আর কী। বাবাকে সে চোখে হারাত। বাবাও তা-ই। বাবাকে আদর করে ‘বাপি’ বলে ডাকত মেয়েটি। এখনও সেই নামেই ডাকে। এ ডাক বাঙালি পরিবারে—বিশেষ করে—মেয়েরা বাবাকে সম্বোধন করে। সেই মেয়েটিও তা-ই করত। মেয়েটির নাম পৌলমী বসু। তিনি নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী। বাবার নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ তো ‘ফাদার্স ডে’। বাবাকে ভালবাসার আরও একটা দিন। বাবাকে হারিয়েছেন পৌলমী। বাংলার সংস্কৃতির জগৎ হারিয়েছে এক লেজেন্ডকে, এক অভিভাবককে। পিতৃহীন মেয়েটি আজ কেমন আছেন? একান্ত আলাপচারিতায় TV9 বাংলাকে কী জানালেন সৌমিত্রকন্যা?

আজ তো ‘ফাদার্স ডে’, বাপিকে কিছু বলবেন?

পৌলমী: প্রথমেই একটা কথা বলে দিতে চাই—আমার কাছে ‘ফাদার্স ডে’ কিংবা ‘মাদার্স ডে’-র আলাদা করে কোনও গুরুত্ব নেই। প্রত্যেক দিনই আমার কাছে ‘ফাদার্স ডে’, প্রত্যেক দিনই ‘মাদার্স ডে’। তবে একটা কথা বলতে চাই, আমি মিস করি। খু-উ-উ-উ-ব মিস করি। ব্যক্তিগতভাবে বাপিকে মিস করি যে কেবল, তা কিন্তু নয়। আমার বারবারই মনে হয়, বাপির মতো একজন মানুষের এখন খুব প্রয়োজন ছিল। বাপির উইজ়ডম, বাপির অগাধ পড়াশোনা, লেখা… অগাধ জ্ঞানের ভাণ্ডার। এরকম একজন মানুষের এই পৃথিবীতে খুব প্রয়োজন। আমি এখন জানতে পারছি, উনি কত লোকের জন্য কত কী করেছেন। কিন্তু কোনওদিনও সেটা মুখ ফুটে আমাদের বলেননি। বাপি চলে যাওয়ার পর সেগুলো স-অ-অ-অ-ব আমি জানতে পারছি। আমার মনে হচ্ছে নতুন করে মানুষটাকে মূল্যায়ন করছি। আমি চারিদিকেই দেখি লোকজন কিছু করলে বলে বেড়ায়, আমি এটা করেছি, ওটা করেছি। কিন্তু বাপি কোনওদিনও আমাদেরও বলেননি।

যেমন…কী ধরনের সাহায্য?

পৌলমী: অনেক ছেলেমেয়েকে সাহায্য করেছেন… আমিও এই নিয়ে বিস্তারিতভাবে কথা বলতে চাই না। বাপি তো কোনওদিন বলেননি। আমারও বলা উচিত হবে না। আজ ‘ফাদার্স ডে’-তে এটুকু আমি বলতে পারি—সবসময় চেষ্টা করব, বাপি যেমন কোনওদিনও নিজেকে তুচ্ছতার মধ্যে রাখেননি, সবসময় উচ্চ দর্শন/চিন্তাভাবনাকে বেছে নিয়েছেন, আমিও সেই পথেই যেন থাকতে পারি। বাপির মতো আভিজাত্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করব।

এই মুহূর্তে একটা কথা খুবই শোনা যাচ্ছে, ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’… আলাদা করে বাঙালি দর্শককে এই কাতর আর্তি জানাতে হচ্ছে এখন… সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই স্লোগান শুনলে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করতেন বলে আপনার মনে হয়?

পৌলমী: আমার মনে হয়, তিনি বলতেন ছবি ভাল হলে আপনা-আপনিই দর্শক সেটি দেখবেন। সেটা আসলে সব ধরনের শিল্পকলার জন্যই সত্য। ভাল কাজ হলে মানুষ নিজে থেকেই যাবেন। মানুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবেন।

আপনার ছেলে (রণ) এখন কেমন আছেন? দাদু অন্তঃপ্রাণ ছিল…

পৌলমী: আমার ছেলের পায়ে একটা সার্জারি হয়েছে। সেটা নিয়ে আমরা খুবই ব্যস্ত ছিলাম। ও এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভাল আছে। পা’টা এখন আস্তে-আস্তে সারছে। সবে একমাস হয়েছে।

দাদুকে কতখানি মিস করে?

পৌলমী: আমার ছেলেমেয়ে দু’জনেই খুবই মিস করে বাপিকে। আমরা সকলেই মিস করি। বাপি চলে যাওয়ার পর আমাদের বাড়িতে বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে। পদে-পদে অনুভব করি। তবে এটাও মনে করি উনি আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমাদের কাজে, আমাদের ব্যবহারে, আমাদের পথ চলায়, আচরণে আমাদের সঙ্গে আছেন। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে দিয়েই বাপি বেঁচে আছেন।

বাবার সঙ্গে একজন বন্ধুকে আপনি হারিয়েছেন। প্রায় সব কথাই আপনি ওঁকে বলতেন। এখন সেই কথাগুলো কীভাবে ওঁকে জানান… লিখে?

পৌলমী: আমি লিখি না। মনের মধ্যেই রাখি। আর কী করব।

আপনি ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ‘হোমাপাখি’তে অভিনয় করেছিলেন। আপনার চরিত্রের নাম ছিল শ্রাবণী। গল্পে আপনার এক তরুণী রোগীর মৃত্যুর পর শোক ভুলতে বন্ধুরা পাব-এ যায়। আপনি যাননি। আপনার সংলাপের সারমর্ম এই ছিল, সেদিন আপনি যাননি, নিজের বাড়িতেই একা ছিলেন। সঙ্গ দিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ। সৌমিত্রবাবু চলে যাওয়ার পর পৌলমীও কি রবীন্দ্রনাথকেই স্মরণ করেন?

পৌলমী: রবীন্দ্রনাথ কেবল আমার নন, আমাদের গোটা পরিবারের সহায়-সম্বল। ‘হোমাপাখি’র শ্রাবণীও রবীন্দ্রনাথের কাছে আশ্রয় পেয়েছিল। আমিও তা-ই। বাপি আমাদের বারবার বলতেন, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়…’ আমি সেটাই মেনে চলি। আমার বাবার হাত ধরেই রবীন্দ্রনাথের মধ্যে আশ্রয় খুঁজেছি আমি। বাবা চলে যাওয়ার পর আরও বেশি করে রবীন্দ্রনাথের গান, লেখা, চিঠিপত্র পড়তে শুরু করেছি। পড়ছি অনেকটাই আমার বাবাকে মনে করে। সেদিন একটা রেকর্ডিং শুনছিলাম। ‘প্রতিদিনও তব গাঁথা’। পাঠ করতাম আমি ও বাপি। সেখানে লেখা আছে, সোমির মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ যখন মুঙ্গের থেকে ট্রেনে করে আসছেন, দেখছেন, জ্যোৎস্নায় ভরে গিয়েছে সারা পৃথিবী। তিনি বলছেন, কোনও কিছুই বদলায়নি। সেখান থেকেই আমি শিখছি রবীন্দ্রনাথ সমস্ত মৃত্যুকে কীভাবে গ্রহণ করেছিলেন। বাপি আমাদের সব সময় বলতেন, রবীন্দ্রনাথের থেকে শিখবে। সেটাই শেখার চেষ্টা করছি।

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ

Next Article