কবি নজরুল ইসলামের একটি জনপ্রিয় গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ নিয়ে উত্তাল বাংলা। অস্কারজয়ী ভারতীয় কম্পোজ়ার এআর রহমান নিজের মতো করে গানটি তৈরি করেছেন এবং তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেছেন। ভিউজ় হয়েছে ৮২,০০০ (এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত)। খুব বেশ ভিউজ় না হলেও (নেতিবাচক আলোচনা হতেই যদিও লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে গানের ভিউজ়) এই গান এখন বাঙালির আঁতে ঘা দিয়েছে। এবং সাধারণ থেকে বিখ্যাত সঙ্গীতপ্রেমী বাঙালিদের ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠেছে রহমানের এই ‘কারার ওই লৌহ কপাট’। ভারতীয় তথা বাঙালি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী TV9 বাংলাকে জানালেন তাঁর ক্ষোভ। তবে ক্ষোভ ছাপিয়ে তাঁর কণ্ঠে ধরা পড়েছে অসহায়তা। সাহিত্যকে ধরে রাখতে যে বাঙালি ব্যর্থ, অকপটে সে কথা জানিয়েছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। আইনি পদক্ষেপ করার কথাও বলেছেন এই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী।
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী বলছেন, “গানটিকে কেবল ধিক্কার জানালে হবে না। সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রতি আমাদের কতখানি দায়িত্ববোধ… সেটারও প্রমাণ হচ্ছে।” এরপরই তাঁর আক্ষেপ, “সাহিত্যকে ধরে রাখতে আমরা বিফল। সেই সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা হারিয়ে যাচ্ছে।” পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রশ্ন, “আজ যদি আমি ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’কে যা খুশি সুর করে দিই, ভাল লাগবে তো?” বাংলা গান নিয়ে বারবার এই ছিনিমিনি খেলা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পণ্ডিতজি। তাঁর কথায়, “আর একটা বাংলা গান, বাংলা ভাষাতেই যা রেকর্ড হচ্ছে, যা খুশি করা হবে সেই গানটা নিয়ে। এটা নিয়ে তো মামলা হওয়া উচিত! এ আর রহমানের মতো একজন এত নামী লোক, এটা কী করলেন! এটা ওঁর থেকে আশা করিনি… সুমিতাব্রত দত্ত এই গানটি গেয়েছিলেন… কী চমৎকার গেয়েছিলেন। এইভাবে গানটাকে বিকৃত করার আগে তাঁর গাওয়া গানটা অন্তত শুনে নিতে পারতেন।”
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী সেনও তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন গানটিকে। বাঙালি হিসেবে তিনি লজ্জাবোধ করেছেন এবং বলেছেন, “গানটা খুব খারাপভাবে কম্পোজ় করেছেন রহমান। এটা আশা করিনি তাঁর থেকে। নজরুলের যে গানগুলি শুনে শরীরে কাঁটা দেয়, রক্ত গরম হয়ে ওঠে, সেই রকম একটি কালজয়ী গান নিয়ে এ কী ছিনিমিনি খেলা। এটা মানা যায়? কোন দিকে যাচ্ছি আমরা? কোথায় যাচ্ছে আমাদের সঙ্গীতের রুচিবোধ?” এরপর গায়িকার সংয়োজন, “আমি চাই রহমান তাঁর ইউটিউব চ্যানেল থেকে গানটি সরিয়ে নিন।” শ্রবাণীর বক্তব্য, গানের সঠিক অর্থই বুঝতেন পারেননি এআর রহমান। বলেছেন, “গানটা নিয়ে হইচই দেখে শুনতে গিয়েছিলাম। পুরোটা শুনতেই পারলাম না এত্ত খারাপ লাগল। মাঝপথেই বন্ধ করে দিলাম… সহ্য করতে পারছিলাম না।”