সদ্য জীবনের মাঠে করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। তবু আজও আট থেকে আশির ক্রাশ। ২২ গজে একের পর এক গড়েছেন রেকর্ড। ভারতীয় ক্রিকেট টিম ১৯৯৬ সালে পেয়েছিল বাংলার এক নতুন নায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। আবির্ভাবেই জোড়া টেস্ট সেঞ্চুরি যিনি বদলে দিয়েছেন স্বপ্নের সীমারেখা। যাঁর চিন্তাভাবনায় ছিল অন্য সুর। ক্যাপ্টেন হওয়ার পর সেই তিনি দেশের বাইরে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে। ওই সাফল্যের পিছনে ছিল দলগত ভাবনা। কখনও স্বজনপোষণে বিশ্বাস রাখেননি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে তুলে এনেছিলেন বহু ক্রিকেটারকে। যুবরাজ সিং, মহম্মদ কাইফ, হরভজন সিং, বীরেন্দ্র সেওয়াগরা বড় হয়ে উঠেছিলেন সৌরভের ছায়াতেই। বাংলার মহারাজের দাদাগিরি শুরু তখন থেকেই। সে দিনও মাঠে ময়দানে ছিল না তাঁর রাজনীতি, আজও তিনি নিজের গায়ে কোনও রাজনীতির রং লাগতে দেননি। সৌরভের এটাই বিশেষত্ব। তিনি সকলের থেকে আলাদা। রঙের রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাসী নন, বরং কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বরাবর।
সময়, পরিস্থিতি পাল্টালেও নিজের সেই বিশ্বাসে এক চুল সরেননি মহারাজ। বর্তমান থেকে প্রাক্তন হয়েও তাঁর গলায় সেই এক সুর। রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠলেও যিনি সারাধণের কথাই বলেন মুক্তকন্ঠে। রাজনীতি বাইশ গজে কখনও পা রাখবেন না, যেমন বলেও দিচ্ছেন মহারাজ। বর্তমানে রিয়্যালিটি শো দাদাগিরি নিয়ে ব্যস্ত তিনি। ক্যামেরার সামনেও ছক্কা হাঁকাচ্ছেন পর পর। সঞ্চালনার দুনিয়ায় যে এ ভাবে রাজত্ব করবেন, প্রাথমিক ভাবে অনেকে অনুমান করতে পারেননি।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ বার রাজনীতি নিয়েও মুখ খুললেন। প্রায়ই শোনা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রস্তাব নিয়ে মহারাজের বাড়ি পৌঁছে যান। শোনা যায়, রাজনীতিতে আসতে চলেছেন তিনি। সত্যি কি তাই হবে কখনও? সৌরভ জানিয়ে দিলেন তাঁর মনের কথা। তাঁর উত্তর, ”নাহ, রাজনীতিতে আসার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। তবে যদি আসি, একটা বিষয় লক্ষ্য রাখব, অনেকেই বলেন, ‘করে দিলাম’, ‘পেয়ে গেলেন’…, এটার বদল ঘটাব।’
মানুষের অধিকার নিয়ে সরব হলেন মহারাজ। হাসতে হাসতে বললেন, “করে দিলাম, এ ভাবে বলা যাবে না। পেয়ে গেলেন, সেটাও বলা যায় না। এটা আপনার অধিকার। এটা আপনার প্রাপ্য। তা বলে কাউকে দুঃখ দিচ্ছি না। যিনি বা যাঁরা আমার বাড়ি আসেন, তাঁরা আসতেই পারেন। আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে নেই।”
সৌরভ বরাবর নিজের ছন্দে হেঁটেছেন। তিনি যে স্টাইল এনেছেন, বরং পরবর্তী প্রজন্ম তাই গ্রহণ করেছে। সৌরভের দেখানো পথে হেঁটেই সফল হয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। পঞ্চাশ পেরনো এই সৌরভ যে এখনও নতুন প্রজন্মকে শেখানোর দায়-ভার নিচ্ছেন, তা আর বলে দিতে হবে না। তিনি রাজনীতিতে পা না দিলেও বাংলার সর্বকালের অন্যতম সেরা আইকন থেকেই যাবেন।