ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের মন্তব্যের জের। তাঁকে মানহানির নোটিস পাঠানো হল ডিরেক্টর্স গিল্ডের তরফে। কিছু দিন আগে ফেডারেশন সভাপতি মন্তব্য করেন, “টলিউডে ৬০ শতাংশ যৌন হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে।” এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিস্তর আলোচনার সৃষ্টি হয়।
যে নোটিস পাঠানো হয়েছে তাতে নাম রয়েছে হরনাথ চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্ত,অশোক বিশ্বনাথন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সদস্যদের। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁদের মানহানি হয়েছে, এই মর্মে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে লেখা আছে, “আমরা সবাই জানি ,সম্প্রতি ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিসিয়ান এন্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র (FCTWEI) সভাপতি শ্রী স্বরূপ বিশ্বাস , বাংলা বিনোদন ও চলচ্চিত্র জগতে যৌন নিগ্রহের কথা বলতে গিয়ে সমগ্র পরিচালক গোষ্ঠীকে কীভাবে অপমান করেছেন| এতে আমরা অত্যন্ত বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিরেক্টরস গিল্ডের তরফে একটি বক্তব্য ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে , যাতে আমরা সুস্পষ্ট ভাবে বলেছি যে,যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হন ,তিনি যে বিভাগের হন না কেন ,তাকে কোনও মতেই আড়াল করা যাবে না। তার প্রমাণও আমরা দিয়েছি। কিন্তু সেটিকে হাতিয়ার করে, একটি গোটা সমষ্টিকে কলুষিত করার চেষ্টা হলে সেটিকে অভিসন্ধিমূলক ধরে নিতে হবে এবং তার প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন|বর্তমানে আমরা পরিচালকরা,শ্রী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি | নিয়ম মেনে,তাঁকে প্রথমে একটি আইনি নোটিস পাঠানো হবে|তাঁর উত্তরের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে |” এই চিঠিতে সই করেছেন টলিপাড়ার অনেক পরিচালকই। এ প্রসঙ্গে পরিচালক সংগঠনের সভাপতি সুব্রত সেন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ৬৩ জন পরিচালক একজোটে স্বরূপের বিরুদ্ধে এই আইনি পদক্ষেপ করেছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিচালকদের তরফ থেকে আইনজীবী সৌমাভ মুখোপাধ্যায় আইনি লড়াই লড়বেন।
মানহানির নোটিস প্রসঙ্গে TV9 বাংলার তরফে স্বরূপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই বিষয়ে তিনি এখন কোনও মন্তব্য করতে চান না। আইনের নোটিস এর উত্তর আইনগত ভাবেই দেবেন। উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে স্বরূপের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন অভিনেতা তথা পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও।
TV9 বাংলাকে তিনি বলেছিলেন, “এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, সকলের একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর। যে জঘন্য ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তার বিচার চাই। একদিকে যেমন যাঁরা এই কাজ করেছেন তাঁদের শাস্তি চাই, তেমনই যেসব গাফিলতির জন্য এই অবস্থা হয়েছে,প্রশাসনের কাছে তার জবাবদিহি চাওয়া হচ্ছে। এই বাতাবরণে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস খুব কদর্যভাবে এটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বলে আমাদের, মানে পরিচালকদের মনে হচ্ছে। তিনি ‘সুরক্ষা বন্ধু’ তৈরি করেছেন। খাতায়-কলমে সেটা যা, তা অত্যন্ত সাধুবাদ দাবি করে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এটা সৎ প্রচেষ্টা হলে, এটায় ফেডারেশনের আওতাভুক্ত পরিচালকদের গিল্ডকে বাদ রাখা হলো কেন? পরিচালকদের মিটিংয়ে ডাকা হয়নি। এদিকে ‘সুরক্ষা বন্ধু’-র আলোচনা ভাসিয়ে দেওয়ার পর স্বরূপ বিশ্বাস দাবি করেছেন, ৬০ শতাংশ যৌন হয়রানির অভিযোগ নাকি পরিচালক বা প্রযোজক-পরিচালকদের বিরুদ্ধে! আমরা এটা স্পষ্ট করছি, কোনও পরিচালক বা প্রযোজকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর সঙ্গে-সঙ্গে শাস্তি প্রয়োজন। কিন্তু এমন একটা বক্তব্য পেশ করে ৫০০ পরিচালককে এক রঙে রাঙিয়ে দেওয়া অত্যন্ত অপমানজনক! পরিচালকদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন তিনি।”