সকাল থেকে কী হল বাড়িতে?
দিদা মারা গিয়েছেন ২০১৮তে। তার পর থেকে বাড়িতে প্রতি বছর এটা হয়ে আসছে। দিদার একটা বড় বাঁধান ছবি রয়েছে বাড়িতে। সেখানে মালা পরাই। জল-মিষ্টি দিই। পুজো হয়। তার পর দিদার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে প্রার্থনা করি। দুঃখ নয়, ওঁর জীবন উদযাপন করি আমরা। এ বারেও তাই হল যথারীতি।
আর তিন বছর আগে? বা তারও আগে?
দিদা যখন বেঁচে ছিলেন আমাদের লাউডেন স্ট্রিটের বাড়িতে বেশ বড় একটা সেলিব্রেশন হতো। ময়রা স্ট্রিটের বাড়ি, যেখানে দিদা এবং উত্তমকুমার থাকতেন সেই বাড়ি আমি কোনওদিন দেখিনি। তবে এই বাড়িতে দেখেছি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে অনেকে আসতেন। বেশ একটা এলাহি ব্যাপার।
(একটু থেমে)
আমাদের বাড়িতে একজন রাঁধুনি ছিলেন বংশীদা। দিদার হাতেই তৈরি বলা যায়। দিদা তো রান্না করে খাওয়াতে ভালবাসতেন, বংশীদাও সাহায্য করত। ভাল ভাল সব পদ। আমার স্মৃতিতে সে সব যদিও খুবই আবছা। তখন বয়স অনেকটাই কম। কিন্তু মনে আছে, গোটা বাড়িটা উৎসবের গন্ধে ম-ম করত। কত লোক… আজ যদিও দিদাও নেই। বংশীদাও মারা গিয়েছেন।
ময়রা স্ট্রিটের বাড়ির সেলিব্রেশন নিয়ে গল্প শুনেছেন পরিবারের অন্যদের কাছ থেকে?
আগেই বললাম, ময়রা স্ট্রিটের স্মৃতি আমার একেবারেই নেই। কারণ আমি জন্মাবার আগেই সেই বাড়ি স্মৃতি হয়েছে। তবে শুনেছি, সেখানে নাকি আরও জোরকদমে চলত সেলিব্রেশন। বাড়ির বড়দের মুখ থেকেই শোনা। তারাদের ঢল নামতো সেখানে।
সিক্রেট শেয়ার করতেন দিদাকে? প্রথম ক্রাশ বা প্রথম প্রেম? জানতেন দিদা?
(হাসি) সব শেয়ার করতাম। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম দিদা আমাকে খুব বোঝে। যারা আমায় ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন তাঁরা জানেন, আমি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে কিন্তু বেশ চুপচাপ। অনেক কিছুই ঠিক প্রকাশ করা হয়ে ওঠে না। লজ্জা পাই। দিদার কাছেই ওই লজ্জা, ভয়, সংকোচগুলো কেমন যেন নিমেষে মিলিয়ে যেত। দিদা চুপ করে শুনত। আমায় গাইড করত। আসলে দিদাকেও তো জীবনে কম সাফার করতে হয়নি।
বাড়ির লোক তো চাইতেন না আপনি অভিনেতা হন
একদমই। তখন আমায় খুবই কম বয়স। ইচ্ছে ছিল অভিনেতা হব। বাড়ি থেকে সাপোর্ট পাইনি। একমাত্র দিদাই পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে সময় আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভাল ছিল না আমাদের। দিদা বলল, একদম চিন্তা করিস না। যাই হোক না কেন, আমি আছি। একদিকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বারণ, পয়সাকড়ি বাড়ন্ত। আই ওয়াজ লস্ট। সে সময় যে মানুষটাকে পাশে পেয়েছি। সে আমার দিদা। আপনাদের সুপ্রিয়া দেবী। শুধু একটাই আক্ষেপ, অভিনেতা হলাম। সব হল। শুধু দিদা দেখে যেতে পারল না।
সুপ্রিয়া দেবীর নাতি শন, নাকি শুধুই শন বন্দ্যোপাধ্যায়, কোন পরিচয় বেশি গর্বের?
পুরোটাই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর। অনেকেই আমায় জিজ্ঞাসা করেন, তোমার ব্যাকগ্রাউন্ডটা এত স্ট্রং, এত রিচ। কোথাও না কোথাও গিয়ে ভয় করে না তোমার? ভয় কেন পাব বলুন তো? আমার এই বাড়তি পরিচয় তো গর্বের। আই ফিল প্রিভিলেজড।
তার মানে বাড়তি সুবিধেও রয়েছে?
একদমই নয়। জনপ্রিয়তা বা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার এই ট্যাগলাইন (সুপ্রিয়া দেবীর নাতি) কিন্তু কখনওই আমায় হেল্প করবে না। নেপোটিজম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অনেকে অনেক কিছু বলেওছে। কিন্তু নেপোটিজম কথাটাই আমি বিশ্বাস করিনা। নেপোটিজম শর্টকাট হতে পারে। তবে টিকে থাকার ক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করাটা খুব জরুরি। এক বার নয়। বহু বার…