শ্রেণীহীন এক নিঃশব্দ প্রেমের গল্প ‘স্যর’

শুভঙ্কর চক্রবর্তী |

Jan 23, 2021 | 6:39 PM

পরিচালক রোহিনা গেরা মেনস্ট্রিম এবং নন মেনস্ট্রিমের মাঝের এক পথ বেছে নিয়েছেন। এমন এক প্রেমের গল্প বলেছেন, যা বারবার শ্রেণী বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে তো বটেই, সঙ্গে বেশ কিছু জানা প্রশ্নের উত্তর আবার করে জানতে চেয়েছেন।

Follow Us

মুম্বইয়ের বহুতলের ছাদ থেকে দেখা যায় অনন্ত আকাশ, জ্বলতে থাকা তারা, হাওয়ায় ভাসতে থাকা মেঘ কিংবা নীচে ছোট-ছোট বাড়িগুলো। কিন্তু যা দেখা যায় না, তা হল এই মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনযাপন। আকাশ-তারা-মেঘ দেখায় শ্রেণীবৈষম্য থাকে না। উচু-নিঁচু জাতের মধ্যে এ বৈষম্য ধরা পড়ে রোজকার জীবনে। বড় লোকেরা গাড়ি চড়ে। আর গরিব পায়ে হাঁটে। গরিবেরা স্বপ্ন দেখে বড়লোক হওয়ার। আর বড়লোকেরা ভাল থাকার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু যদি কখনও প্রেম ঢুকে পড়ে এক বিলেতফেরত বড়লোকের জীবনে? ভালবেসে ফেলে বাড়ির পরিচারিকাকে?

 

 

ঠিক তখন গুলিয়ে যায় সবকিছু। সব মনে হয় ভুল। মনে হয় ‘সমাজ মেনে নেবে না’।
এক অপ্রত্যাশিত প্রেমের গল্প। দু’জন, যাঁদের সামাজিক স্তরগুলো বিভক্ত, রীতিনীতি আলাদা, ভাবনা পৃথক। কিন্তু তবুও আমেরিকা ফেরত আর্কিটেক্ট অশ্বিন (বিবেক গোম্বার) রত্নাকে (Tillotama shome) ভীষণ ভালবেসে ফেলে। এক নিঃশব্দ ভালবাসা। যা ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিচারিকা যখন বোনের বিয়ের জন্য তিনদিনের ছুটিতে বাড়ি যায়, অশ্বিনের মন খারাপ হয়। সে ফোন করে রত্নাকে। রত্না প্রশ্ন করে, “স্যর, কুছ কাম থা?” স্যর অশ্বিনের উত্তর, “নেহি, অ্যয়সে হি ফোন কিয়া”। রত্না-অশ্বিনের যে ভীষণ কথা হয়, তা-ও নয়। কিন্তু এই কম কথা হওয়া থেকে একেবারে না-কথা হওয়া যেন অশ্বিনের মনে আরও প্রেম বইয়ে দেয়।

 

 

প্রথম ভারতীয় সবাক চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’ও এমন এক শ্রেণীবৈষম্যর গল্প বলে। রাজপুত্র প্রেমে পড়ে এক যাযাবর মহিলার। তারপর ববি (১৯৭৩), পরদেশ (১৯৯৭), সিং ইজ কিং (২০০৮), নমস্তে ইংল্যান্ড (২০১৮) মেনস্ট্রিম ছবি হওয়া সত্বেও শ্রেণীবৈষম্যর গল্প বলেছে। নাগরাজ মঞ্জুলের এক অন্য ধারার মারাঠি ছবি, ‘ফ্যান্ড্রি’তে উচ্চ বর্ণের মেয়ের প্রতি এক দলিত ছেলের প্রেম ধরা পড়েছে।

 

তবে পরিচালক রোহিনা গেরা মেনস্ট্রিম এবং নন মেনস্ট্রিমের মাঝের এক পথ বেছে নিয়েছেন। এমন এক প্রেমের গল্প বলেছেন, যা বারবার শ্রেণী বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে তো বটেই, সঙ্গে বেশ কিছু জানা প্রশ্নের উত্তর আবার করে জানতে চেয়েছেন। বাড়ির পরিচারিকার টেবিলে নয়, মাটিতে বসে খাবার খান। এক বিধবা গ্রামের মেয়ে হাতে চুড়ি পরে না, আর না পারে তারা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। ২০২১-এ দাঁড়িয়েও উঁচু-নিচু জাতের প্রেমের সম্পর্ক এখনও সামাজিক স্বীকৃতি পায় না। এমন অনেক কিছু ভারতীয় সমাজে নিয়মমাফিক ঘটছে তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। পরিচালক বারবার এমন ছোট- ছোট মুহুর্ত বুনেছেন যা সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে প্রশ্ন করে।

 

তিলোত্তমা।

 

‘ফ্যাশন ডিজাইনার’ হতে চাওয়ার যে স্বপ্ন রত্না দেখে, সে স্বপ্ন তো শুধু রত্নার একার নয়। অশ্বিনেরও। অশ্বিনও বিশ্বাস করে রত্না ‘ব্রেভ’। রত্না যদিও ‘ব্রেভ’ শব্দের অর্থ বোঝে না। সে অন্যের থেকে শব্দের অর্থ জেনে খুশি হয়। সে খুশি হয় নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে। খুশি হয় যখন এক অনুষ্ঠানে সে মাটিতে অনেকের সঙ্গে খেতে বসে, অশ্বিন ‘স্যর’ তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘রত্না, আমি কি তোমার জন্য অপেক্ষা করব?’

 

 

তিলোত্তমা সোম ‘রত্না’ হয়ে উঠতে পেরেছেন। তাঁর অভিব্যক্তি তীক্ষ্ণ, যা দর্শকের মন ভেদ করে। অশ্বিনের ভূমিকায় বিবেক অল্পভাষী এবং তাঁর অনুভূতিগুলো তাঁর চাহনিতে ব্যক্ত হয়। অভিনয়ে রত্না, অশ্বিনের পরিপূরক।
শেষ দৃশ্যে ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে রত্না ‘স্যর’-এর ফোন ধরে। আর ঠোঁটে ‘স্যর’ নয় ফুটে ওঠে ‘অশ্বিন’। এটাই তো চেয়েছিল অশ্বিন, “‘স্যর’ নয় প্রেমিক বলে ডেকো আমাকে”।
ঠিক এরকম মন মন ভাল করা এক দৃশ্য যা সেরা প্রাপ্তি হয়ে থেকে যাবেই যাবে…

মুম্বইয়ের বহুতলের ছাদ থেকে দেখা যায় অনন্ত আকাশ, জ্বলতে থাকা তারা, হাওয়ায় ভাসতে থাকা মেঘ কিংবা নীচে ছোট-ছোট বাড়িগুলো। কিন্তু যা দেখা যায় না, তা হল এই মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনযাপন। আকাশ-তারা-মেঘ দেখায় শ্রেণীবৈষম্য থাকে না। উচু-নিঁচু জাতের মধ্যে এ বৈষম্য ধরা পড়ে রোজকার জীবনে। বড় লোকেরা গাড়ি চড়ে। আর গরিব পায়ে হাঁটে। গরিবেরা স্বপ্ন দেখে বড়লোক হওয়ার। আর বড়লোকেরা ভাল থাকার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু যদি কখনও প্রেম ঢুকে পড়ে এক বিলেতফেরত বড়লোকের জীবনে? ভালবেসে ফেলে বাড়ির পরিচারিকাকে?

 

 

ঠিক তখন গুলিয়ে যায় সবকিছু। সব মনে হয় ভুল। মনে হয় ‘সমাজ মেনে নেবে না’।
এক অপ্রত্যাশিত প্রেমের গল্প। দু’জন, যাঁদের সামাজিক স্তরগুলো বিভক্ত, রীতিনীতি আলাদা, ভাবনা পৃথক। কিন্তু তবুও আমেরিকা ফেরত আর্কিটেক্ট অশ্বিন (বিবেক গোম্বার) রত্নাকে (Tillotama shome) ভীষণ ভালবেসে ফেলে। এক নিঃশব্দ ভালবাসা। যা ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিচারিকা যখন বোনের বিয়ের জন্য তিনদিনের ছুটিতে বাড়ি যায়, অশ্বিনের মন খারাপ হয়। সে ফোন করে রত্নাকে। রত্না প্রশ্ন করে, “স্যর, কুছ কাম থা?” স্যর অশ্বিনের উত্তর, “নেহি, অ্যয়সে হি ফোন কিয়া”। রত্না-অশ্বিনের যে ভীষণ কথা হয়, তা-ও নয়। কিন্তু এই কম কথা হওয়া থেকে একেবারে না-কথা হওয়া যেন অশ্বিনের মনে আরও প্রেম বইয়ে দেয়।

 

 

প্রথম ভারতীয় সবাক চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’ও এমন এক শ্রেণীবৈষম্যর গল্প বলে। রাজপুত্র প্রেমে পড়ে এক যাযাবর মহিলার। তারপর ববি (১৯৭৩), পরদেশ (১৯৯৭), সিং ইজ কিং (২০০৮), নমস্তে ইংল্যান্ড (২০১৮) মেনস্ট্রিম ছবি হওয়া সত্বেও শ্রেণীবৈষম্যর গল্প বলেছে। নাগরাজ মঞ্জুলের এক অন্য ধারার মারাঠি ছবি, ‘ফ্যান্ড্রি’তে উচ্চ বর্ণের মেয়ের প্রতি এক দলিত ছেলের প্রেম ধরা পড়েছে।

 

তবে পরিচালক রোহিনা গেরা মেনস্ট্রিম এবং নন মেনস্ট্রিমের মাঝের এক পথ বেছে নিয়েছেন। এমন এক প্রেমের গল্প বলেছেন, যা বারবার শ্রেণী বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে তো বটেই, সঙ্গে বেশ কিছু জানা প্রশ্নের উত্তর আবার করে জানতে চেয়েছেন। বাড়ির পরিচারিকার টেবিলে নয়, মাটিতে বসে খাবার খান। এক বিধবা গ্রামের মেয়ে হাতে চুড়ি পরে না, আর না পারে তারা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। ২০২১-এ দাঁড়িয়েও উঁচু-নিচু জাতের প্রেমের সম্পর্ক এখনও সামাজিক স্বীকৃতি পায় না। এমন অনেক কিছু ভারতীয় সমাজে নিয়মমাফিক ঘটছে তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। পরিচালক বারবার এমন ছোট- ছোট মুহুর্ত বুনেছেন যা সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে প্রশ্ন করে।

 

তিলোত্তমা।

 

‘ফ্যাশন ডিজাইনার’ হতে চাওয়ার যে স্বপ্ন রত্না দেখে, সে স্বপ্ন তো শুধু রত্নার একার নয়। অশ্বিনেরও। অশ্বিনও বিশ্বাস করে রত্না ‘ব্রেভ’। রত্না যদিও ‘ব্রেভ’ শব্দের অর্থ বোঝে না। সে অন্যের থেকে শব্দের অর্থ জেনে খুশি হয়। সে খুশি হয় নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে। খুশি হয় যখন এক অনুষ্ঠানে সে মাটিতে অনেকের সঙ্গে খেতে বসে, অশ্বিন ‘স্যর’ তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘রত্না, আমি কি তোমার জন্য অপেক্ষা করব?’

 

 

তিলোত্তমা সোম ‘রত্না’ হয়ে উঠতে পেরেছেন। তাঁর অভিব্যক্তি তীক্ষ্ণ, যা দর্শকের মন ভেদ করে। অশ্বিনের ভূমিকায় বিবেক অল্পভাষী এবং তাঁর অনুভূতিগুলো তাঁর চাহনিতে ব্যক্ত হয়। অভিনয়ে রত্না, অশ্বিনের পরিপূরক।
শেষ দৃশ্যে ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে রত্না ‘স্যর’-এর ফোন ধরে। আর ঠোঁটে ‘স্যর’ নয় ফুটে ওঠে ‘অশ্বিন’। এটাই তো চেয়েছিল অশ্বিন, “‘স্যর’ নয় প্রেমিক বলে ডেকো আমাকে”।
ঠিক এরকম মন মন ভাল করা এক দৃশ্য যা সেরা প্রাপ্তি হয়ে থেকে যাবেই যাবে…

Next Article