স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, লোন নিয়ে, পরবর্তীকালে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের সাহায্যে কোনও মতে ছবির কাজ শেষ করেছেন পরিচালক কুমার চৌধুরী। ছবির নাম ‘প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন’। ইংরেজি নাম ‘ফায়ার অফ টিক ফ্লেম অফ চিনার’। ছাব্বিশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (KIFF 2021) দেখানো হচ্ছে ছবিটি।
কলকাতার একটি হোমে থাকে এক মেয়ে। সেখান থেকে সে তার দিদিমাকে চিঠি লেখে। উদ্বেগের সঙ্গে ব্যক্ত করে, ‘তোমাদের সঙ্গে কি আর কোনওদিন দেখা হবে আমার?’ রোহিঙ্গা গোষ্ঠীতে জন্ম মেয়েটির। ভারতে রেফিউজি হয়ে পালিয়ে এসেছে সে। গল্পে রয়েছে একটি ছেলেও। সে সেই মেয়েটির হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে খোঁজার চেষ্টা করে। ছেলেটি মূলত কাশ্মীরের বাসিন্দা। দুটি ভিন্ন দেশের হয়েও বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার কারণে একে অপরের সান্নিধ্যে আসে তারা৷ এবং সেটাই হয়ে ওঠে প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুনের গল্প।
আরও পড়ুন, সামাজিক বার্তাবাহী ছবি সমাজ বদলাতে পারে না: অনুভব সিনহা
চলছে ছাব্বিশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। নেটপ্যাক বিভাগে মনোনীত হয়েছে কুমারের এই ছবি। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছিলেন পরিচালক। যতদিন এগিয়েছে বদলাতে থেকেছে তাঁর চিত্রনাট্য। ছবির গল্প বাস্তব থেকে উঠে আসা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। TV9 Bangla ডিজিটালকে কুমার বলেন, “ম্যাগাজিনে একটি মেয়ের ব্যাপারে পড়েছিলাম। সে পালিয়ে এসেছিল ভারতে। দক্ষিণ পরগনার একটি হোমে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখাও করেছিলাম। আমার গল্পে রয়েছে রোহিঙ্গা, কাশ্মীরের উল্লেখ। চিত্রনাট্য লেখার সময় সিরিয়ার ছোট্ট শিশু আলান কুর্দির মৃত্যুও আমাকে খুব ভাবিয়েছিল। এরকম আরও অনেকেই হয়তো আছে, যাদের খবর আমরা পাই না।”
ছবির প্রযোজক হিসেবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কুমার চৌধুরীর স্ত্রী পিয়ালী চৌধুরী। চিত্রনাট্য লিখেছেন কুমার নিজেই। সিনেমাটোগ্রাফার প্রসেনজিৎ কোলে। সম্পাদনা করেছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। সংগীত পরিচালনা করেছেন মেঘ বন্দোপাধ্যায়। ছবির অভিনেতা অভিনেত্রীরা অধিকাংশই থিয়েটারের। অভিনয় করেছেন পিয়ালী সামন্ত, ক্যাপ্টেন আরমান শাও, ইকবাল সুলতান।
আরও পড়ুন, কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এ ‘চিকেন তেহারি’
ছবি তৈরি করতে গিয়ে কোনও প্রযোজকই পাচ্ছিলেন না পরিচালক। কুমারের বক্তব্য, “একটু অন্য ধরনের গল্প হলেই প্রযোজকরা পিছিয়ে যান৷ তাঁরা আমাকে এও বলেছেন, প্রথম ছবি তৈরি করার পর দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ছবি তৈরি করতে তাঁরা আমাকে সাহায্য থাকবেন।”
এর পরে বেশকিছু ছবি পাইপলাইনে রয়েছে পরিচালক কুমার চৌধুরীর। তিনটে বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করতে চান। যেমন, কীভাবে লকডাউন সারা পৃথিবীর মানুষের জীবন পাল্টে দিল, কীভাবে বিজ্ঞাপনের কারণে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বলি হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ নিয়েও একটি চিত্রনাট্য তৈরি আছে তাঁর। কুমার বলেন, “প্রত্যেকটি বিষয় এই সময়ের। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তেমনই ভাবনা রয়েছে আমার। যাতে আন্তর্জাতিক উৎসবে পাঠাতে পারি, সেটা মাথায় রেখেই সবকটি ছবি তৈরি করব।”