আজও শুটিংয়ে গিয়েছেন তিনি। রোজকার অভ্যেসে তৈরি হয়ে সামিল হয়েছে ‘রোল, ক্যামেরা, অ্যাকশনে’। দুপুর বেলা লাঞ্চ ব্রেকে টিভিনাইন বাংলা যখন শুভেচ্ছা জানাতে তাঁকে ফোন করেছিল, তখন হালকা হেসে অজান্তেই যেন দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ল তাঁর গলা থেকে। খানিক থেমে বললেন, “আর এখন এই সব… মানুষটাই যে…”। তিনি অর্থাৎ শঙ্কর চক্রবর্তী। ক্যালেন্ডার সকালেই জানিয়ে দিয়েছে, আজ তাঁর ও স্ত্রী সোনালী চক্রবর্তীর ৩৪ বছরের বিবাহবার্ষিকী। স্ত্রী বেঁচে থাকলে হয়তো আজ দিনটা অন্যরকম ভাবে কাটত ‘বরিশালের বর’-এর। কিন্তু ‘কলিকাতার কনে’ই তো আর নেই। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর ক্যানসার কেড়ে নেয় তাঁকে। আয়নায় আটকে থাকা লাল টিপে আঠা, ড্রেসিং টেবিলের এক কোণে অবহেলায় পড়ে থাকা সিঁদুর কৌটোর মধ্যে দিয়ে আজও হয়তো বাড়িতে উপস্থিতি টের পাওয়া যায়… তবে সত্য বড়ই নিষ্ঠুর।
শঙ্কর বলছিলেন, “আজও কাজে এসেছি, কাজ যে করতেই হবে। কমিটমেন্ট। এখন তো আর কেউ নেই বিবাহবার্ষিকী পালন করার”। একাই থাকেন এখন। সঙ্গী শারমেয়রা। বাড়িতে একজন সহকারী আছেন ঠিকই, তবে তিনিও যে সব সময় সঙ্গে থাকেন এমনটা নয়। গত বছর সোনালীর মৃত্যুবার্ষিকীতে যখন টিভিনাইন বাংলা যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে গলা ধরে এসেছিল শঙ্করে। সম্পর্ক কি আজকের? ভালবাসার বিয়ে, বহু সাক্ষাৎকারে অতীতে স্বীকার করেছেন, সোনালী যখন তাঁর হাত ধরেই কিছুই ছিল অভিনেতার। বলেছিলেন, “নেকবারই ভেবেছিলাম বাড়িটা ছেড়ে দেব। কিন্তু মেয়ে ‘না’ করেছে। ছেড়ে যাবই বা কোথায়… আমাদের শোয়ার ঘরে ঢুকলে খুব অশান্তি হতে থাকে। টিভি চালিয়ে দিই তখন। কবিতাও পড়ি। সোনালীর লেখা একটা কবিতার বই আছে। সেটার একটাও পাতা আমি ওল্টাতে পারি না।” বলেছিলেন, “পড়তেই পারি না। পড়তে গেলেই এমন কান্না পায়…! অদ্ভুত লাগে। মনে হয় অনেক কবিতার মধ্যেই আমি আছি।”
সামাজিক মাধ্যমে খুব একটা সক্রিয় না থাকা মানুষটিও বিশেষ দিনে স্ত্রীর জন্য চিঠি লিখেছেন আজ, মঙ্গলবার। লিখেছেন, “নয়ন তোমায় পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে… আজ আমাদের ৩৪তম বিবাহবার্ষিকী, যেখানে আছো খুব ভাল থেকো আবার দেখা হবে”। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, দেখা যে হবেই আবারও, দেখা হবে অন্য দুনিয়ায়।