‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিবাদ করাই রাস্তা’, সন্দেশখালি নিয়ে বললেন রঞ্জিত মল্লিক

Sucharita De | Edited By: জয়িতা চন্দ্র

Feb 28, 2024 | 8:30 PM

Ranjit Mallick Exclusive: বাড়ির ড্রয়িং রুমে নীল রঙের শার্ট পড়ে অপেক্ষা করছেন। বাড়ির অন্দরমহলে দেওয়াল থেকে সোফা... সবই সাদা রঙের। পৌঁছতে সেই চেনা হাসি মুখে বসতে বললেন, তারপর ছবি থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক সমাজের পরিস্থিতি নিয়ে চলল আড্ডা।

‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিবাদ করাই রাস্তা’, সন্দেশখালি নিয়ে বললেন রঞ্জিত মল্লিক

Follow Us

 

প্রথম ছবিতেই (মৃণাল সেন পরিচালিত ‘ইন্টারভিউ’) আন্তর্জাতিক স্তরের সম্মান। তারপর তাঁকে আর পিছন ফিরতে হয়নি, বাংলা সিনেমার বিবেক হয়ে দর্শকদের মনে দশকের পর দশক রাজত্ব করেছেন। মাঝে কিছুটা বিরতি নিলেও এখন প্রায়শই তাঁকে বড়পর্দায় দেখা যাচ্ছে। তিনি হলেন ‘বেল্টম্যান’ রঞ্জিত মল্লিক। নতুন ছবি ‘দারগা মামুর কীর্তি’ ছবি নিয়ে আড্ডা দিতে তাঁর বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল TV9 বাংলা। বাড়ির ড্রয়িং রুমে নীল রঙের শার্ট পড়ে অপেক্ষা করছেন। বাড়ির অন্দরমহলে দেওয়াল থেকে সোফা… সবই সাদা রঙের। পৌঁছতে সেই চেনা হাসি মুখে বসতে বললেন, তারপর ছবি থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক সমাজের পরিস্থিতি নিয়ে চলল আড্ডা।

প্রশ্ন: আপনি স্যোশাল মিডিয়া দেখেন?

রঞ্জিত: না, এমনিতে আমি দেখি না। তবে খবর তো কানে আসেই (হাসি)।

প্রশ্ন: আপনাকে নেটিজেনদের অনেকে ‘বেল্টম্যান’ নাম দিয়েছে। এই ছবিতেও দেখলাম আপনার হাতে বেল্ট।

রঞ্জিত: আসলে ‘ছোটবউ’ ছবিতে প্রসেনজিতকে এক দৃশ্যে বেল্ট দিয়ে মেরেছিলাম। তখন থেকেই নানা ছবিতে আমার এই রকম দৃশ্য রাখেন পরিচালকরা। আর আমি জীবনে বহু পুলিশের চরিত্র করেছি, আসলে সমাজে তো নানা রকমের পুলিশ আছে। এই ছবিতেও পুলিশ এর চরিত্র তবে একটু অন্যরকম। এই পুলিশ আবার কবিতা লেখে। মানে অন্তমিল মিলিয়ে দিয়েই ভাবেন দারুণ লিখেছেন। আসলে সমাজে ঘটে চলা নানা ঘটনা, চরিত্রই তো সিনেমার পর্দায় গল্প হিসেবে উঠে আসে। তবে এই ছবিতে মজার মোড়কে একটা বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আমার আশা দর্শকদের ভাল লাগবে।

প্রশ্ন: আপনি বলছেন, সমাজের ছবি সিনেমার গল্প হিসেবে ফেরে। এখন খবরের শিরোনামে সন্দেশখালি। আপনার কী মতামত, এই যে মহিলারা প্রতিবাদ করছেন…

রঞ্জিত: আমাদের এই ছবি দু’বছর আগে শুট করা। তবে এই সমাজের এই গল্পই দেখতে পাবেন ছবিতে। আসলে সন্দেশখালি তো এখন শোনা যাচ্ছে। তবে অসামাজিক কাজের ট্রেন্ড তো সেই একই রকম। জমি কেড়ে নেওয়া, গরিবকে সর্বস্বান্ত করা… তখন জমিজমা হারিয়ে গরিব কী করবে? চুরিই করবে। এদের এই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে তো সেই শোষণ। মহিলারা তো প্রতিবাদ করবেনই। এই অন্যায় তো মেনে নেওয়া যায় না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিবাদ করাই রাস্তা। এই ছবিতেও এই রকম গল্পই দেখা যাবে। আমি তো বলেছি, সমাজের নানা ঘটনার চিত্র সিনেমায় চিত্রনাট্য হয়ে ফিরে আসে। দর্শক এই ছবি দেখলেই সম্পর্ক খুঁজে পাবে। আমি নিশ্চিত দর্শকদের পছন্দ হবে গল্প। তবে মজার মোড়কে তৈরি হয়েছে ছবিটা। দর্শক তো আনন্দ পেতে সিনেমা হলে আসে। তাই বিনোদনও হবে, আবার দর্শকদের বার্তাও পাবে।

প্রশ্ন: আপনার প্রথম ছবিতেই আপনি আন্তর্জাতিক সম্মান পান, দুই বিশ্ববিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে কাজ? কতটা আলাদা তাঁরা?

রঞ্জিত: ভগবানের আশীর্বাদ আমি ‘ইন্টারভিউ’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান পেয়েছি। কার্লোইভেন চলচ্চিত্র উৎসবের বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ড পাই। সে বহুযুগ আগের কথা (হাসি)। আমার জীবনের প্রথম কাজ ‘ইন্টারভিউ’। মৃণাল সেনের হাত ধরেই সিনেমাতে আশা, কিছুই জানতাম না। আমায় হাতে ধরে শিখিয়েছেন। যা বলেছেন, করেছি। আর সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যখন কাজ করি, তখন আমার কেরিয়ারের ২০ বছর কেটে গিয়েছে। সত্যজিৎ রায় চরিত্র বুঝিয়ে দিয়ে অভিনেতার উপর ভরসা করতেন। অনেক বেশি স্বাধীনতা দিতেন। তবে মৃণাল সেনের ছবিতে আমার প্রথম কাজ, তাই মৃণাল সেনকে আমার উপর অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। আর দু’জন দু’ধরনের কাজ করতেন। সত্যজিৎ রায় আগে থেকেই সব সাজিয়ে রাখতেন চিত্রনাট্যে। কী রঙের পোশাক সেটাও লেখা থাকত। আর মৃণাল সেন সেটে এসে সব ঠিক করতেন। সব পাল্টে ফেলতেন।

প্রশ্ন: আপনি স্বর্ণ যুগের মহানায়ক উত্তম কুমার ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন এর সঙ্গে কাজ করেছেন। সেই সময় এদের থেকে কতটা প্রভাবিত হয়েছেন।

রঞ্জিত: আমি তো কোনও প্রথাগত অভিনয়ের শিক্ষা নিইনি। দেখে-দেখেই শিখেছি। এই দু’জনের থেকে সব থেকে বড় শিক্ষা হল এঁদের ডেডিকেশন। উত্তম কুমারের একটা গল্প বলি। ‘দুই পৃথিবী’ ছবির শুটিং চলছে, এমনিতেই আমরা জানি চেনা-পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হলে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান একটা সৌজন্য। তা শুটিংয়ের ফাঁকে দেখলাম পাছে সবাইকে দেখলে হাসতে হয় বা অভিবাদন জানাতে হয়, উত্তম কুমার দেওয়ালের দিকে মুখ করে বসে আছেন। মানে যাতে মনসংযোগ নষ্ট না-হয়, কারণ তখন তিনি চরিত্রের মধ্যেই রয়েছেন। আমার শুট না-থাকলেও এদের কাজ বসে দেখতাম।

প্রশ্ন: এখন তো আমরা দেখি হিরো মানেই দারুণ নাচ জানবে, সিক্স-প্যাক অ্যাবস থাকবে। এখানকার সময় যদি আপনার কেরিয়ার শুরু হত, এগুলোর দিকে নজর দিতেন?

রঞ্জিত: না, সিক্সপ্যাক নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। অভিনয়ের জন্য অবশ্যই শরীর ফিট থাকতে হবে। আর একটা কথা বলি, শক্তিটা মাথায় থাকে। শরীর বড় হলেই হয় না। অমিতাভ বচ্চন তো রোগা, লম্বা। সে তো একটা মার দিতেই সব বড়-বড় চেহারা হাওয়ায় উড়ে পড়ত (হাসি)। তবে হ্যাঁ, নামাতে সেভাবে গুরুত্ব দেইনি। ওটা করলে ভালই হত।

প্রশ্ন: অভিনেতা নাহলে কী হতেন?

রঞ্জিত: অভিনেতা না হলে লেখক হতাম অথবা ঘুরে বেড়াতাম। ভবঘুরে হতাম। নতুন-নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ আমার ভাল লাগে।

প্রশ্ন: আপনি সারাজীবন নায়ক হয়েও খুব সাধারণ জীবন যাপন ও সবার সঙ্গেই খুব স্বাভাবিক মেলা মেলামেশা করেন।

রঞ্জিত: এটা হল পারিবারিক সূত্রে পাওয়া। আমার বাবা-মা সকলকে সম্মান দিতেন। সে যে-ই হোক। সেটাই আমি শিখেছি। আবার আমার মেয়ে কোয়েল শিখেছে। এটায় আমাদের কোনও ভূমিকা নেই, এটা পারিবারিক মূল্যবোধ, যেটা আমরা পেয়েছি।

প্রশ্ন: আপনাকে বিচলিত করে সন্দেশখালির মত ঘটনা?

রঞ্জিত: অবশ্যই কষ্ট পাই। এই যে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ, যেটা হচ্ছে, সে তো এই ছবিতেও রয়েছে। জমি দখল অত্যাচার। দর্শক এই ছবি দেখলে রিলেট করতে পারবে।

Next Article