তাঁকে বলা হত ‘বেসুরো’ রুদ্রনীল। কারণ তিনি বারবার তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ ‘দুর্নীতি’ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। এ হেন সাতে পাঁচে না থাকা রুদ্রনীল ঘোষ ‘বিজেপি’-তে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে শুনতে হয়, তিনি ‘সুবিধেবাদী’, ‘পাল্টিবাজ’ এবং ‘দলবদলু’। তবে সে সবে কান দেননি অভিনেতা, বলেছেন “আমি মানুষের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছি”।
সেই রুদ্রনীল ঘোষ যখন আবার তাঁর আবিষ্কৃত ‘কভিনয়’-এর (কবিতা এবং অভিনয়) নতুন ভিডিয়ো আপলোড করেন, তা যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। আজই রুদ্রনীল ফেসবুকে পোস্ট করলেন মোনোক্রোম ভিডিয়োটি। ছলে-বলে-কৌশলে তিনি পরোক্ষভাবে এক হাত নিলেন শাসকদল এবং বামপন্থী দলকে। তাঁর ভিডিয়োতে বেশ কিছু বিতর্কিত শব্দ সাবলীলভাবে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় আওড়ে গিয়েছেন রুদ্রনীল।
‘টেট না দিয়ে লক্ষ বেকার’, ‘ক্লাবের পুজোয় দেদার টাকা’, ‘গরু পাচার’, ‘স্বাস্থ্য সাথী ঢপের কার্ড’, ‘ভাইপো-ভাইজি ও দল চালায়, দিদি হাতের পুতুল, ‘গরুর পিঠে কয়লা পাচার’ । ‘কভিনয়’টির ভিডিয়ো পোস্ট করার পর হু হু করে বাড়ছে শেয়ার, সংখ্যায় বাড়ছে লাইকস।
ফোনে তাঁকে ধরা হলে, প্রথম প্রশ্নে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, বিজেপি প্রার্থী হওয়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটপ্রচার শুরু করে দিলেন? রুদ্রনীলের সহাস্য উত্তর, “এটা আমার রাজনৈতিক পেজ নয়। আমি এই পেজে রাজনীতি করি না বরং যাঁরা কমেন্ট করেন তাঁরাই রাজনৈতিক কথা বলেন।” এরপর ‘দিদি হাতের পুতুল’ প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কি এমন ‘দিদি’র কথা বলেছেন যাঁকে বাংলা চায়? তখন প্রশ্নের পাশ কাটিয়ে রুদ্রনীলের পাল্টা প্রশ্ন “আপনার ঘরে কি দিদি-পিসি নেই। আমার বাড়িতে নেই?” কবিতার এক অংশে
রক্তমাখা হস্তে ধরা /জং পড়া এক কাস্তে
শত্রুরা মিত্র কোলাকুলি /দেখছি আস্তে আস্তে।”
এই ‘কাস্তে’ কি বাংলার একটা রাজনৈতিক দলের কাস্তে? পরোক্ষভাবে কি রাজনীতির কথা না টেনেও এটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক কবিতা নয়? ফ্রন্ট ফুটে না এলেও রেখেঢেকে সামলালেন প্রশ্নবাণ। অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ রুডি বলেন, “হলফ করে কি বলা যায়, আমি যা যা কবিতায় বলেছি, তা সিপিএমের চৌত্রিশ বছরে হয়নি! যদি কেউ মনে করেন বাংলায় এসব হচ্ছে না, তাঁরা বাংলায় থাকেন না।”
কথোপকথনে রুদ্রনীল বুঝিয়ে দিলেন, যে চৌত্রিশ বছরের এক সরকারকে বাংলার জনগন যেভাবে উৎখাত করে তৃণমূল কংগ্রেসকে আসনে বসিয়েছেন। ঠিক তেমনভাবে আবার সেই মানুষই বিজেপিপন্থী হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ যদি পাল্টি খেতে পারেন, তাহলে আমাদর মতো অল্প পরিচিতরা ‘পাল্টি’ খেলে সমস্যা কোথায়!
রুদ্রনীল ঘোষের কবিতা—ইকিড়মিকিড়
ইকিড় মিকিড় চাম চিকিড়/কাউন্টডাউন শুরু,
এবার ভোটে কি যে হবে/কুঁচকে গেল ভুরু!
ছোট বড় ফুলের সাজে/ছেয়ে গেছে পাড়া,
কোন ফুলেতে আস্থা এবার/মানুষ দেবে সাড়া!?
বুঝতে হাওয়া প্রতিবেশীর /ঘরে গেলাম ভাই,
চমকে গেলাম এ দত্তদা/সেদত্তদা নাই!!!
একি দেখছি……??
দত্তবাবু ,কাল ঘুমোলেন /সবুজ লুংগি পরে,
আজ সকালে দাঁত মাজছেন /গেরুয়া ধুতি ধরে?!!!- হচ্ছেটা কি?
ঘাবড়ে গিয়ে বলেই দিলাম/এমন কেন হলো??
উলটে তিনি বল্লেন আমায়/মইদুল কেন মরলো??
টেট না দিয়ে লক্ষ বেকার /কাঁদছে কেন ঘরে?
মন্ত্রী কেন ১৩ খানা /চাকরি চুরি করে???
ক্লাব পুজোতে দেদার টাকা/কিসের জন্য ঢালা?
এসব করে রাজ্য ফতুর/গায়ে ধরেনা জ্বালা??
স্বাস্থ্যসাথীর ঢপের কার্ডে/পেসেন্ট ঘুরে মরে,
টিভি খুলে দেখেননি সব/চোখটা ওপেন করে???
করোনাতে মৃত্যু গোপন/গেলেন কেন ভুলে,
পাড়ার হাওয়া মাপতে এলেন/ন্যাকা হেলে দুলে?
গ্রাজুয়েট ছেলে টোটো চালায়/কিম্বা বেচে চপ,
আর কতদিন সহ্য করব/কাটমানি আর ঢপ?
হারিয়ে গেল যুক্তি আমার/কুঁকচে গেল ভুরু,
আমার পাড়াও পালটে যাচ্ছে/বুক যে দুরু দুরু।
বুকে সাহস নিয়ে তবু /উঠলাম আমি বলে,
প্রতিবেশী দত্তবাবু/যায় যদি ওই গলে!
ইয়ে দেখুন,
সব দেশেতেই একটু আধটু /এসব কিছু হয়,
মিছিমিছি আপনি কিন্তু/দেখাবেন না ভয়!!
উন্নয়নের জোয়ারেতে /বাংলা যাচ্ছে ভেসে,
এমন রাজ্য কোথায় আছে/দেখান সারা দেশে?হুম?
২৯৪ কেন্দ্র জুড়ে/প্রার্থী দিদিই নিজে,
বিরোধীদের প্যান্টুল তাই /যাচ্ছে রোজই ভিজে”!
মুচকি হেসে দত্তবাবু /গেরুয়া ধুতি ঝেড়ে,
খপাত করে থুতনি ধরে /আমায় দিলেন নেড়ে।
বললেন,
২৯৪ তে উনিই… ?? হুঁহুঁ..
আগের বারেও এক ডায়লগ/শুনিয়েছিলেন দিদি,
৫ টা বছর মুরগী হলাম/দূনীর্তি আজ নদী।
ভাইপো ভাইঝি ও দল চালায়/দিদি হাতের পুতুল,
মুখ খুললেই বেইমান সব /প্র-শান্ত কিশোর ধুঁধুল!
সবার দিদি ছিলেন যিনি/পালটে এখন পিসি,
ভাইপো নিয়ে ব্যাস্তু উনি/আপনি করুন হিসি।
গরীব লোকের টাকা মেরেও/হয়েছে কারো জেল?
আজ যে নেতার দামী গাড়ি /কাল ছিল সাইকেল!
বাড়ি করার সময় আপনার/নেয়নি ওরা টাকা?
কর্পোরেশন রাস্তা খোঁড়া/ইঁট বালি সব ফাঁকা!!
এই সরকার চেয়েছিলেন, /এটাই উন্নয়ন?
হাফ প্যান্টুল পরে করুন/নিজের অন্নপ্রাশন!
আর কতদিন দু চোখ বুজে/থাকবেন সেজে ন্যাকা?
সাড়া পাড়া পালটে যাচ্ছে/আপনি থাকুন একা!!
ধমকে দিলেন দত্তবাবু/করলো অপমান,
সত্যি কথা বললো তো তাই, /হয়নি অভিমান।
চুলকে আমার চুল উঠে যায়/চোখের তলায় কালি,
যে বাগানে প্লাস্টিক ফুল/(আমি) সেই বাগানের মালি?? ছি ছি
গরুর পিঠে কয়লা পাচার /তাহলে তো সত্যি,
আমার বউও বলতো এসব/ভুলিনি এক রত্তি!
শিল্প কোথায় এই রাজ্যে/ভাষণ কাঁড়ি কাঁড়ি,
লোকাল নেতা ঘুষতো নিল/করলাম যখন বাড়ি।
আম্পানেতে চাল আর ত্রিপল/হয়েছে বটে চুরি,
কোন শালার হয়নি তো জেল/ওপেনলি জোচ্চুরি!!
উমম…দিদি যদি অনেস্ট হতেন/পুরতেন এদের জেলে,
পোরেন নিতো,.. তার মানে কি/ওনিও ওদের দলে?!! এমা-
ফের ক্ষমতায় আবার যদি/এরাই ফিরে আসে,
মান ইজ্জত করবে চুরি/ভরবে পিছন বাঁশে।
ওবাবা না না……
দত্তবাবু মিত্রবাবু /সবাই কি আর ভুল,
এতো লেটে ঘুম ভাংগলো?/ছিঁড়ব মাথার চুল।
আর ওদিকে ৩ মক্কেল/করল বিরাট জোট,
ভোট আসলেই শুখনো পিরিত/সবাই জানে ঘোঁট।
রক্তমাখা হস্তে ধরা /জং পড়া এক কাস্তে,
শত্রুরা মিত্র কোলাকুলি /দেখছি আস্তে আস্তে।
ইকিড় মিকিড় চাম চিকিড় /আদর্শতে বালি,
ধর্মগুরু’ও নাকি সেকুলার/ঢপের নামাবলি।
লালকে দিলাম ৩৪ বছর/সবুজকে ১০ সাল,
দেখাই যাক না গেরুয়াকে/বদলায় কিনা হাল!!
ইয়েস,
পালটে গেলাম আমিও আজই/যে যাই বলুক প্রভু,
সবুজ আমের বদলেতে/খাবোই/ চাইছি কমলালেবু।
ইকিড় মিকিড় চাম চিকিড়/৫ টা বছর দেখি,
বুঝে নেব কোনটা খাঁটি/কোনটা ছিল মেকি!
ইকিড় মিকিড় চাম… /গিন্নিঃ এই.. শুনচো??
#কত্তাঃ উঃ কি? /গিন্নিঃ সব্বোনাশ হয়েচে…আবার পালিয়েছে!!
#কত্তাঃ কে পাশের বাড়ির ন্যাকা পিংকি?/
গিন্নিঃ উঃ,আরে না না! চারটে এমএলএ,৫ টা কাউন্সিলার আর এক কাঁড়ি কর্মী।
#কত্তাঃ এবাবা এবাবা এবাবা!!!