Ronnie Chakraborty : ‘বাচ্চার মুখেভাত ছিল সামনেই, রনির এভাবে মৃত্যু আজও রহস্য’, লিখলেন রাজদীপ

হার্ট অ্যাটাক, নাকি পরিকল্পিত খুন--- তা নিয়ে হিয়েছিল একরাশ জলঘোলা। সময়ের নিয়মে সেই ঘোলা জল থিতিয়ে গেলেও রনিকে আজও ভোলেনি ইন্ডাস্ট্রি। তাঁর জন্মদিনে টিভিনাইন বাংলার জন্য লিখলেন অভিনেতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা রাজদীপ গুপ্ত।

Ronnie Chakraborty : 'বাচ্চার মুখেভাত ছিল সামনেই, রনির এভাবে মৃত্যু আজও রহস্য', লিখলেন রাজদীপ
রাজদীপ ও রনি। ছবি- ফেসবুক।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 24, 2022 | 7:58 PM

একটা মৃত্যু থমকে দিয়েছিল গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে। মে ১৫। সন্তোষপুরের এক পুকুরে খোঁজ মিলেছিল দুর্দান্ত সাঁতারু-অভিনেতা রনি চক্রবর্তীর নিথর দেহের। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জানিয়েছিল পাকস্থলী থেকে মেলেনি মদ। পরিবার অভিযোগ দায়ের করেছিল খুনের। হার্ট অ্যাটাক, নাকি পরিকল্পিত খুন— তা নিয়ে হয়েছিল একরাশ জলঘোলা। সময়ের নিয়মে সেই ঘোলা জল থিতিয়ে গেলেও রনিকে আজও ভোলেনি ইন্ডাস্ট্রি। তাঁর জন্মদিনে টিভিনাইন বাংলার জন্য লিখলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা রাজদীপ গুপ্ত।

 

প্রায় একসঙ্গেই কেরিয়ার শুরু আমাদের। না, রনির বোধহয় একটু আগে। ওর স্ত্রী আমার পাড়াতুতো বন্ধু। সেই সূত্রে চেনাশোনাটা ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার আগে থেকেই। রনি মানেই এক গাল হাসি, প্রচণ্ড হুজুগে, মজা করতে ভালবাসে। মেকআপ রুম থেকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ একাই জমিয়ে রাখার দায়িত্ব সামলিয়েছে বরাবর। বছরটা ঠিক মনে নেই মাকুদির (পল্লবী চট্টোপাধ্যায়) একটা শো-য়ে আমরা দুজনেই অংশ নিয়েছিলাম। ও ছিল অ্যাঙ্কর। তার আগে অবশ্য সঙ্গীত বাংলাতেও ও বেশ কিছু অ্যাঙ্কারিং করেছে। আমার আবার তখন ইচ্ছে ছিল ডিজে হওয়ার। যাই হোক পেশা আমাদের মিলিয়ে দিল আবারও।

ওগো বধু সুন্দরীতে আবারও একসঙ্গে আমরা। আমার প্রথম ধারাবাহিক আর রনিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। তখনও তো ওই সিরিয়ালে ১০ ঘণ্টা কাজের বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। দিনের ১৫ ঘণ্টা কাটত কো-স্টারদের সঙ্গেই। মেকআপ রুমের আড্ডা থেকে বাড়ির আড্ডা– কোথাও গিয়ে আমাদের বন্ডিংটা জাস্ট ক্লিক করে গেল। আমার বাবা ওকে ডাকত বড় ছেলে বলে। ওর বাচ্চা আর আমার জন্মদিনও এক দিনে। অদ্ভুত সমাপতন না?

১৫ মে– সেই অভিশপ্ত দিন। আমাদের এক বন্ধুদের গ্রুপ ছিল। সেখানে সবাই যে ইন্ডাস্ট্রির এমনটা নয়। ওই গ্রুপ থেকেই প্রথম ফোনটা আসে। আমি ভেবেছিলাম মিথ্যে। কী করে বিশ্বাস করব বলুন তো? যেদিন ঘটনাটা ঘটে ওইদিন ও ওর বাচ্চার অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণ করতে বের হয়েছিল। তার চার-পাঁচ দিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করে আড্ডা দিয়েছিল। কত কথা, কত গল্প হল একসঙ্গে। এখনও মনে আছে উইকেন্ড নাইট ছিল। আমায় বলল রাউডি মানে ওর বাচ্চার অন্নপ্রাশনে কী কী প্ল্যান করেছে। সেই মানুষটাই চার-পাঁচ দিন পর নেই, জাস্ট নেই। আমি বিশ্বাস করিনি।

ওর বাড়ি যখন গেলাম তখন মিডিয়া আর লোকের ভিড় উপচে পড়ছে। কাকিমার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। ওর মৃত্যুর কারণ নিয়ে এর পর শুরু হল একের পর এক রটনা। অনেকে অনেক কিছু বলেছিল। লেখা হয়েছিল জলে ডুবে মৃত্যু। কিন্তু একজন জাতীয় স্তরের সাঁতারুর কী করে জলে দুবে মৃত্যু হতে পারে এই কয় বছরেও মাথায় ঢুকল না আমার। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে যখন ওকে নিয়ে কথা হয় তখন ভাবি ঠিক কী হয়েছিল সেই দিন। কীভাবে একটা জলজ্যান্ত মানুষ জাস্ট নেই হয়ে গেল। জানি না ওর কেসটা আর খুলবে কিনা। কিন্তু রনির এভাবে চলে যাওয়াটা আজও আমার কাছে রহস্য।
তবে একটা জিনিস কী জানেন, মানুষ কিন্তু আজও ওকে ভোলেনি। আজও যদি ওকে নিয়ে পোস্ট করি মানুষ তাতে লেখে একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তের কথা, নানা স্মৃতির কথা। ওকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনও খারাপ কথা কেউ বলেনি কোনওদিন।

রনি তুই ভাল থাকিস। তুই তো শুধু সহকর্মী ছিলি না, ছিলি পরিবার। হ্যাপি বার্থ ডে, বন্ধু।

অনুলিখন- বিহঙ্গী বিশ্বাস