রাহুল দেব বসু
আমি বিড়লা হাই স্কুলে পড়তাম। ওখানে আমার অনেক বন্ধু ছিল। এখনও আমরা খুব ভাল বন্ধু। ফলে বন্ধু বলতে ছোটবেলার চড্ডি-বড্ডিরাই রয়ে গিয়েছে। আমাদের একটা অদ্ভুত বিষয় ছিল। আমরা আমাদের নামগুলো উল্টো করে বলতাম। আমার নাম রাহুল। আমাকে ওরা ‘লুহার’ বলে ডাকত। অনুরাগ বলে আমার যে বন্ধু আছে, তাকে আমি ‘গরুনা’ বলে ডাকতাম। সৌরভকে ডাকতাম ‘ভারুয়াস’ নামে। টিফিন নিয়ে খুব মারপিঠ হত। তবে যে জিনিসটা আমাদের এক করে রেখেছিল, তা হল ফুটবল। সকলেই ফুটবল ভালবাসতাম। স্কুলে পৌঁছে গিয়েই ফুটবল খেলা শুরু করে দিতাম। অ্যাসেম্বলিও শুরু হত না তখন। মনে আছে, ছোট রবর বল নিয়ে আমরা খেলা শুরু করে দিতাম।
আমরা কোনওদিনও সামনের সিটে বসতাম না। ব্যাকবেঞ্চার ছিলাম সকলে। পিছনের বেঞ্চে বসে ‘পেন ফাইট’ খেতলাম। জামায় পিনআপ করার জন্য ছোট-ছোট গোল-গোল ব্যাজ ছিল আমাদের। সেই ব্যাজগুলো নিয়ে ‘ব্যাজ ফাইট’ খেলতাম। রেজ়াল্ট বেরলে যে খুব ভাল করত, তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকতাম। মনে হত, কেন ভাল রেজ়াল্ট করেছে। আমরা খারাপ করেছি, ও কেন ভাল করবে, এই ছিল আমাদের রাগের জায়গা।
সৌরভ ও অনুরাগ লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিল। আমিও ভালই ছিলাম। কিন্তু ফাঁকিবাজও ছিলাম। কম লেখাপড়া করতাম। ইতিহাস ও সাহিত্যে ভাল ছিলাম। সৌরভ আমাদের সঙ্গে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছিল। তারপর অন্য স্কুলে চলে যায়। অনুরাগ ছিল। তারপর যা হয়, স্কুলের পর আমাদের পথ আলাদা হয়ে যায়। সৌরভের সঙ্গে আমার বহু বছর কথা হয়নি। অনুরাগের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয়। ও মুম্বই চলে গিয়েছিল। ফেসবুকে পিং করে আমাকে।
এখন এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মনে হয়, ওই দিনগুলোই আসল দিন ছিল – দোজ় ওয়্যার দ্য ডেজ়। কোনও কিছু ভাবতাম না। কোনও কিছুর চিন্তা ছিল না। সব কিছু সুন্দর ছিল। খালি ভাবতাম, পরদিন স্কুলে গিয়ে কী-কী করব। আক্ষেপ হয়, খুব একটা যোগাযোগ রইল না সৌরভ-অনুরাগের সঙ্গে। কিন্তু আজও আমার ওদের কথা খুব মনে পড়ে… মিস ইউ ব্রো…
তবে এই লেখাটার পর আরও বেশি করে মনে পড়ে যাচ্ছে। আজই ওঁদের সঙ্গে কথা বলব!