আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কোনও না-কোনও যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকে। সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের পর্দায় যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আমরা দেখি, তাঁদের জীবনেও যন্ত্রণার শেষ নেই। পর্দায় তাঁদের অভিনয়ে যতখানি মন কাড়ে বাস্তবজীবনেও তাঁদের প্রতি কৌতূহল কম থাকে না দর্শকের। ফলে তারকাদের ব্যক্তিজীবন দর্শকের কাছে অমোঘ আকর্ষণের জায়গা। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল তেমনি এক তারকার জীবনের সবচেয়ে আক্ষেপের কাহিনি।
তারকার নাম অপরাজিতা আঢ্য। তিনি বাংলা বিনোদন জগতের এই সময়কার অন্যতম দাপুটে অভিনেত্রী। মাত্র ২৩ বছর বয়সে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন অপরাজিতা। বিষয়টিকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। এবং সেই চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন দর্শকের ভালবাসা পেয়ে। অপরাজিতার মধ্যে এক মাতৃমূর্তি লুকিয়ে রয়েছে, তা এককথায় স্বীকার করে নিয়েছেন সকলেই। যে কারণে ধারাবাহিকভাবে এবং সিনেমার পর্দায় তাঁকে মায়ের চরিত্রে কাস্ট করা হয়। কিন্তু এই অপরাজিতার জীবনেও আক্ষেপ রয়েছে।
অপরাজিতার পালিত কন্যা গার্গী রায় TV9 বাংলাকে বলেছিলেন, “আমি কুড়ি বছর ধরে মণিমা (এই নামে গার্গী সম্বোধন করেন অপরাজিতা)-কে দেখছি। তিনি বড়দের অসম্ভব সম্মান করেন। এবং নিজেও অত্যন্ত ভাল সন্তান। আমি তাঁর মতো সন্তান হতে চাই।” অপরাজিতা যে সত্যি ভাল সন্তান, তা তাঁর কর্তব্যবোধ থেকেই প্রমাণিত। শ্বশুরবাড়িতে সকলের সঙ্গে হাসি-মজা করে থাকতে ভালবাসেন এই অভিনেত্রী। কেবল তাই নয়, প্রত্যেকের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি তাঁর মনযোগ রয়েছে শুরু থেকেই।
এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁর অসুস্থ দিদি শাশুড়িকে নিজের কাছে নিয়ে রেখেছিলেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ ছিলেন। নিজের কাছে রেখেই সেবা-শুশ্রূষা করছিলেন অপরাজিতা। তারপর অভিনেত্রীদের জীবনে যা ঘটে, তাই ঘটল। বিপুল কাজের চাপ আসতে শুরু করল। দিদি-শাশুড়ির দিকে মন দেওয়া হয়ে উঠল দুষ্কর। অপরাজিতার মাসি শাশুড়ি এসে দিদি শাশুড়িতে নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়িতে। প্রত্যেকদিন সেই দিদি শাশুড়ি আক্ষেপের সুরে বলতেন, “মনা এলো না।” অপরাজিতার শ্বশুরবাড়িতে সকলে তাঁকে ‘মনা’ বলেই ডাকেন।
দিদি শাশুড়ি সেই ডাবে সাড়া দিতে পারেননি অপরাজিতা। বললেন, “আমি কিন্তু দিদি শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারিনি। এত কাজের চাপ ছিল। তিনি রোজ বলতেন, ‘মনা এলো না’। আমি কিন্তু শেষমেশ তাঁর কাছে গিয়ে উঠতেই পারিনি। এটা একজন পেশাদার অভিনেত্রীর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা। এই আক্ষেপ নিয়ে আমাকে সারাজীবন বাঁচতে হবে যে, যে মানুষটা আমাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবেসেছিলেন, সেই দিদিশাশুড়ির শেষ আঁকুতি আমি মেটাতে পারিনি। ‘মনা’ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।”