Boudi Canteen: ‘মিলন হবে কত দিনে?’… ‘ক্যান্টিন’ খোলার দিনে রিয়েল লাইফ ‘বৌদি’ কৃষ্ণার সঙ্গে আলাপচারিতা

Sneha Sengupta |

Sep 30, 2022 | 4:55 PM

Bengali Films: ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর শুভমুক্তির দিনে TV9 বাংলা রিয়েল লাইফ ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর কৃষ্ণাদেবীর সঙ্গে।

Boudi Canteen: ‘মিলন হবে কত দিনে?’... ‘ক্যান্টিন’ খোলার দিনে রিয়েল লাইফ ‘বৌদি’ কৃষ্ণার সঙ্গে আলাপচারিতা
বাস্তবজীবনের কৃষ্ণা'বৌদি' যিনি মিলনদার ক্যান্টিনের 'বস'...

Follow Us

স্নেহা সেনগুপ্ত

আচ্ছা সিনেমার সঙ্গে যদি বাস্তব মিলে যায়… ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হয় তাই না। আসলে বাস্তবের অনেক গল্প থেকেই উঠে আসে সিনেমার রসদ। ফলে রুপোলি পর্দার আড়াল থাকলেও কিছু কাহিনি জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকে। কিঞ্চিৎ মিল হলেই বুকের মধ্যে আন্দোলিত হতে থাকে নানা রঙের রূপকথা। সেই রূপকথার পাতা থেকেই বাস্তব উঁকি দিতে শুরু করে। যেমনটা এখন উঁকি দেবে। আজ (৩০.০৯.২০২২) পঞ্চমী। আজই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে একগুচ্ছ বাংলা ছবি। সেই তালিকায় আছেন এক ‘বৌদি’ও। এক সাধারণ বৌদির আগ্রহ রান্নায়। সেই আগ্রহ থেকে তাঁর ব্য়বসায়ী হওয়ার জেদ। পুরোটাই বড় পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন অভিনেতা-পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবির নাম দিয়েছেন ‘বৌদি ক্যান্টিন’। মুখ্য চরিত্রে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। শুরুতেই বাস্তবের সঙ্গে সিনেমার যোগ কেন তৈরি করা হল জানেন? তার কারণ, সত্যি-সত্যিই এক ‘বৌদি’ রয়েছেন, যিনি নিজে এমনই একটি ক্যান্টিনের ‘বস’। ছবির প্রোমোশনের সূত্রে এহেন রিয়েল লাইফ ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এ গিয়েছেন পরমব্রত।

সুভাষগ্রামে বাড়ি এই ‘বৌদি’র। নাম কৃষ্ণা। রোজ ভোর ৬টায় ট্রেনে চেপে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ক্যান্টিন খোলেন। সারাদিন ধরে ছাত্রছাত্রী, মাস্টারমশাই-ম্যামদের খাবারের জোগান দেন… আবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে ক্য়ান্টিন বন্ধ করে ফিরে যান বাড়ি।

আরও একটু পিছনের দিকে ফিরে যাওয়া যাক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরেই খাবার-দাবারের দোকান বেশ কিছু আছে। নামও ভারি বিচিত্র… ‘এসি’, ‘মণিদা’, ‘মিলনদা’। কলকাতায় ছাত্রজীবন কাটানো অনেকেই যাদবপুরের ‘ঢপের চপ’-এর নাম শুনেছেন। চেখেও দেখেছেন। সেই চপের আবিষ্কর্তা মিলনদা। কেবল তাঁর ক্যান্টিনেই মেলে। তাঁর ক্যান্টিন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, গোটা শহরে বিখ্যাত। কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজ়ে যেমন ইনফিউশন-এ চুমুক দিতে ছোটে বাঙালি, তেমনই ছুটে আসে ‘মিলনদা’য়। সে এক বিচিত্র মিলনক্ষেত্র…

ফ্ল্যাশব্যাক: ক্যান্টিনে মিলনদা…

পাঁচ বছর আগের কথা। ২০১৭ সাল। হঠাৎ ফুসফুসে কর্কটরোগ বাসা বাঁধে মিলনদার। বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই তিনি পাড়ি দেন না-ফেরার দেশে। হাহাকার জমে ওঠে ক্যান্টিন ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। আজ দাদা না-থাকলেও দাদার সঙ্গী ‘বৌদি’ আছেন। দাদার অর্ধাঙ্গিনী। দাদার ছায়াসঙ্গী এই কৃষ্ণাই পরবর্তীতে হাল ধরেন ক্যান্টিনের। আজ মৃত্যুর পাঁচ বছর পর মিলনদা বেঁচে আছেন কৃষ্ণা বৌদির অদম্য জেদের কারণেই। আজও রমরমিয়ে চলছে ‘মিলনদার ক্যান্টিন’।

‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর শুভমুক্তির দিনে TV9 বাংলা রিয়েল লাইফ ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর কৃষ্ণাদেবীর সঙ্গে:

প্রশ্ন: মিলনদার অবর্তমানে আপনিই তো এই ক্যান্টিনের বস?

কৃষ্ণাবৌদি: হ্যাঁ। আমিই পুরোটা দেখছি… ওই আর কী!

প্রশ্ন: কীভাবে সামলাচ্ছেন?

কৃষ্ণাবৌদি: ঠিক যে ভাবে মিলনদা সামলাচ্ছিলেন, আমিও তেমনভাবেই সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আসলে ওঁর সঙ্গেই অনেকগুলো বছর ধরে আমিও ক্যান্টিনে ছিলাম। সকালে উঠে ছেলেদের স্কুলে পৌঁছে ক্যান্টিনে চলে যেতাম। সারাক্ষণ ক্যান্টিনেই পড়ে থাকতাম। ওটাই আমার সংসার হয়ে ওঠে। ছেলেমেয়েগুলো (এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা) মনে হয়েছে আমারই সন্তান সব। মিলনদার পাশেপাশেই ছিলাম বলে আজ ক্যান্টিনটা চালাতে পারছি।

ফ্ল্যাশব্যাক: পরম স্নেহে ছাত্র-ছাত্রীদের খেতে দিচ্ছেন মিলনদা…

প্রশ্ন: আপনার তত্ত্বাবধানে ‘মিলনদার ক্যান্টিন’-এর জনপ্রিয়তা কি বাড়ল? কী মনে হয়?

কৃষ্ণাবৌদি: এটা তো আমি বলতে পারব না। কিন্তু আগের মতোই আছে সবকিছু। কিছু বদলায়নি। কেবল মানুষটা নেই।

প্রশ্ন: এখনও বিখ্যাত ঢপের চপ পাওয়া যায়?

কৃষ্ণাবৌদি: ওটা ছিল মিলনদার বিশেষত্ব। এখনও আছে।

প্রশ্ন: সেই স্বাদই আছে? নাকি…

কৃষ্ণাবৌদি: এখনও সেই স্বাদই আছে। আপনারা একদিন চলে আসুন। এসে খেয়ে দেখুন। আমার ভাল লাগবে। সঙ্গে আরও অনেক কিছু খাওয়াব।

প্রশ্ন: আচ্ছা, তাই? কী-কী?

কৃষ্ণাবৌদি: অনেককিছু যুক্ত হয়েছে মেন্যুতে। আগে নুডুলস পাওয়া যেত না। এখন পাওয়া যায়। আগে গ্রিল-করা স্যান্ডউইচ থাকত না। এখন রাখি। ‘ঢপের চপ’-এর মতো নতুন কোনও সিগনেচার খাবার রাখতে চাই। সেটা নিশ্চয়ই তৈরি করব। তক্কে-তক্কে আছি। ক্যান্টিনটাকে আরও বড় করতে হবে। মিলনদার নাম যাতে কোনওদিনও না-মুছে যায়, সেটা আমাকেই দেখতে হবে।

প্রশ্ন: মিলনদাকে মিস করেন?

কৃষ্ণাবৌদি: (একটু চুপ থেকে, কণ্ঠস্বর কেঁপে যায়) খুবই মনে পড়ে। ক্যান্টিন খুললেই মনে হয়, ও পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাই মনে জোর পাই।

প্রশ্ন: মিলনদাকে ছাড়া যাত্রা কীরকম ছিল বা চলছে?

কৃষ্ণাবৌদি: একই রকম আছে। সত্যি বলতে আমার কোনও অসুবিধে হয়নি। সবাই আমাকে সাহায্য় করেছে। আমার ছেলেরাই বাজার করে দেয়। আগে বাজার করতাম আমি নিজে। ক্যান্টিনের কর্মচারীরা সকলেই পাশে আছে। কেউ আমাকে ছেড়ে চলে যায়নি। সে দিক থেকে আমি ভাগ্যবতী। মিলনদার দেখানো পথেই হাঁটছি। আর ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা তো আছেই। ওদের মুখে হাসি দেখলেই তো মনটা ভরে যায়।

মিলনদার স্মৃতি আগলে কৃষ্ণাবৌদি…

প্রশ্ন: তা-ও, সবকিছু তো নিজেকেই সামলাতে হচ্ছে…

কৃষ্ণাবৌদি: তা হচ্ছে। কিন্তু সত্যি বলতে কী, কোনও কাজকে কঠিন মনে করলেই কঠিন। আর সহজ মনে করলেই সহজ। আসলে মানুষের ভাবনার উপরই সবটা নির্ভর করে।

প্রশ্ন: সে দিন তো পরমব্রত গিয়েছিলেন...

কৃষ্ণাবৌদি: হ্যাঁ, ও এসেছিল। আগের মতোই ‘ঢপের চপ’ খেয়ে গেল… আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি বলেছি ওকে, ‘বৌদি ক্যান্টিন’ দেখতে যাব।

Next Article