ব্লাউজের পাশ থেকে পেনটা খুলে উত্তমের হাতে দিলেন শর্মিলা, চোখ সরাতে পারলেন না ‘নায়ক’! তারপর…
এই সিনেমার শুটিংয়ের হাজারো গল্প রয়েছে। যা আজও মানুষের কাছে সমান গুরুত্ব পায়। ঠিক যেমন, ছবিতে শর্মিলা ও উত্তমের সাক্ষাতের দৃশ্য। যেখানে শর্মিলা, উত্তমের কাছে অটোগ্রাফ চাইতে যান!

‘নায়ক’ ছবি কি আসলে মহানায়কেরই বায়োপিক? নাকি উত্তমকে সামনে রেখে শুধু সুপারস্টারের গল্প, তৎকালীন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও সমাজের গল্প বলেছেন সত্যজিৎ? যে কোনও ফিল্মচর্চায় ১৯৬৬ সালের ‘নায়ক’ নিয়ে কথা উঠলেই, এ প্রসঙ্গ আসা বাধ্য। হ্য়াঁ, ‘নায়ক’ এমনই ছবি, যা নিয়ে সিনেমা প্রেমী মানুষের উৎসাহর শেষ নেই। কারণ, এই ছবির প্রতিটি ফ্রেমই যেন এক দ্বন্দ্ব। আর সেই উৎসাহকে ফের উসকে দিতে শুক্রবার ফের বড়পর্দায় মুক্তি পেলে সত্যজিতের এই কালজয়ী ছবি।
১৯৬৬ সালে এই ছবি মুক্তি পাওয়ার পর হইচই ফেলে দিয়েছিল তৎকালীন ফিল্ম সাক্রিটে। তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবি না হয়েও, এই ছবি বক্স অফিস সাড়া ফেলেছিল। উত্তমকে অনুরাগীরা পেয়েছিল একেবারেই অন্যভাবে। এত বছর কাটিয়েও নায়ক ছবি তাই ফিল্ম ছাত্রদের অন্যতম পাঠ্য। কীভাবে নানা রূপক ব্য়বহার করে, এক নায়কের মানসিক, আর্থিক ও জীবন লড়াইকে ফ্রেমে ধরা যায়, তা সত্য়জিৎ খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছিলেন এই ছবিতে।
এই সিনেমার শুটিংয়ের হাজারো গল্প রয়েছে। যা আজও মানুষের কাছে সমান গুরুত্ব পায়। ঠিক যেমন, ছবিতে শর্মিলা ও উত্তমের সাক্ষাতের দৃশ্য। যেখানে শর্মিলা, উত্তমের কাছে অটোগ্রাফ চাইতে যান!
সত্যজিৎ রায়, তৎকালীন এক ফিল্ম ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জানিয়ে ছিলেন, নায়ক ছবিতে শর্মিলাকে উত্তমের অটোগ্রাফ দেওয়ার দৃশ্যটি যেমন দেখানো হয়েছে, সেটা একেবারে তাঁর প্ল্য়ানের বাইরে ছিল। সত্যজিৎ যেমনটি ভেবেছিলেন, মোটেই তেমনটি হয়নি। বরং দৃশ্যটা নিজেই বদলে ফেলেছিলেন উত্তম।
এই সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ জানিয়ে ছিলেন, নায়কের এই দৃশ্যটা কীভাবে শুট হয়েছিল।
সত্যজিৎ বললেন অ্যাকশন, তারপর…
শর্মিলা ঠাকুর, টেবিলে বসে থাকা উত্তমের সামনে এসে দাঁড়ালেন। ব্লাউজের পাস থেকে কলম বার করে উত্তমের হাতে দিলেন। অপলক শর্মিলার দিকে তাকিয়ে উত্তম। ফ্লোর জুড়ে নিস্তব্ধতা। ক্যামেরার পিছনে তখন সবটা দেখছেন সত্য়জিৎ। দৃশ্যটা এরকমই হওয়ার কথা ছিল। সত্যজিৎ উত্তমকে বলেছিলেন, শর্মিলার কলম দিয়েই অটোগ্রাফ দিতে। কিন্তু লাস্ট মিনিটে উত্তম সেটা করলেন না, বরং নিজের কোটের পকেট থেকে কলম বার করলেন। সেই দিয়ে লিখতে গিয়েই দেখলেন, কালি নেই! দুবার কলম ঝাঁকালেনও। তবুও পড়ল না দাগ। তারপর পাশে থাকা একগ্লাস জলে কলমের ডগা চুবিয়ে নিয়ে অটোগ্রাফ দিলেন শর্মিলাকে। এসব যখন চলছে, তখন একবার কাট বললেও, সত্যজিৎ ক্যামেরা চালিয়েই রেখেছিলেন। উত্তম যেটা করলেন, তা একেবারেই নিজের থেকে। পরে অবশ্য, সত্য়জিতের প্ল্যান করা দৃশ্যটিও শুট হয়। কিন্তু এডিট টেবিলে উত্তমের তৈরি করা দৃশ্যটা দেখে সত্যজিতের দারুণ পছন্দ হয়। তাই সেটাই রেখে দেন পরিচালক। আর বাদ পড়ল শর্মিলার কলম দেওয়ার দৃশ্য। উত্তমের মগজ থেকে বের হওয়া নায়কের সেই দৃশ্যই জন্ম দেয়, সিনেমার নতুন ভাষার। না ভুলতে পারা ইমেজের।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, শুক্রবার ফের মুক্তি পেয়েছে উত্তম কুমার, শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত, সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছবি নায়ক। এই ইমেজের সাক্ষী থাকতে হলে, অবশ্য়ই বড়পর্দায় দেখুন উত্তমের ‘নায়ক’।

