Force Feeding: বাচ্চাকে জোর করে খাওয়ানোর অভ্যাস বন্ধ করতে হবে মায়েদের, মত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের

Harmful Effects of Force-feeding Children: অধিকাংশ মা-ই জোর করে বাচ্চাদের খাওয়ান। বাচ্চার খিদে না থাকলেও একরকম চেপে, ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এই অভ্যাস খুবই খারাপ...

Force Feeding: বাচ্চাকে জোর করে খাওয়ানোর অভ্যাস বন্ধ করতে হবে মায়েদের, মত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের
জোর করে বাচ্চাকে খাওয়াবেন না
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 02, 2022 | 5:50 PM

৯৯ শতাংশ নয়, ১০০ শতাংশ মা-বাবারই অভিযোগ: তাঁদের সন্তান খেতে চায় না। সন্তানের স্বাস্থ্য যতই ভাল থাকুক না কেন, মায়েদের সব সময়ই যেন মনে হয়: সন্তান ঠিকমতো খাবার খাচ্ছে না। খাইয়ে-দাইয়ে বাচ্চার ওজন প্রয়োজনের তুলনায় ৫ কেজি বেশি হলেও মায়ের কাছে তাঁর বাচ্চা সব সময়ই ‘রোগা’। যে কারণে আজকালকার বাচ্চারা ওবেসিটির শিকার। তবে বাচ্চাদের ওবেসিটির জন্য মূলত অভিভাবকদেরই দায়ী করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে রয়েছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবও। আর তাই-ই সুস্থ থাকতে বাচ্চাদের সাপ্লিমেন্ট দিতে বারণ করছেন চিকিৎসকেরা। ভরসা রাখতে বলছেন বাড়ির খাবারেই। যে খাবার থেকে অধিকাংশ বাচ্চা ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠে, সেই খাবারেই ভরসা রাখতে বলছেন চিকিৎসকেরা। বর্তমানে অধিকাংশ বাচ্চাই ভুগছে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায়। সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিসের মত সমস্যাও বাড়ছে শিশুদের ক্ষেত্রে। বিষয়টি নিয়ে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নীলাঞ্জন ঘোষের সঙ্গে। বাচ্চাদের এই সমস্যার জন্য প্রথমেই তিনি দায়ী করছেন রোজকার জীবনযাত্রাকে। বললেন, ‘‘আজকাল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের মধ্যে ডায়েটের কোনও সু-অভ্যাস থাকে না। একই সঙ্গে আজকালকার বাচ্চারা কোনও রকম শরীরচর্চা করে না। সেই সঙ্গে সু-অভ্যাসও গড়ে ওঠে না।’’

তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আগেকার দিনে অধিকাংশ বাচ্চাই পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে স্কুলে যেত। এখান যায় পুলকার বা নিজস্ব গাড়িতে। ফলে দৈহিক পরিশ্রমের কোনও রকম সুযোগ নেই। সঙ্গে তারা সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে রয়েছে মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনে। এসব কারণেই বাড়ছে ওবেসিটির মতো সমস্যা। এই অতিরিক্ত ওজনের নেপথ্যে রয়েছে আরও একটি কারণ: যে সব বাচ্চার জন্মের সময় ওজন কম থাকে, পরবর্তীকালে তাদের মধ্যেই ওবেসিটির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ফলে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে মা-বাবাকেই।’’

অধিকাংশ মা-ই জোর করে বাচ্চাদের খাওয়ান। বাচ্চার খিদে না থাকলেও একরকম চেপে, ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এই অভ্যাস খুবই খারাপ—বলছেন চিকিৎসক। বাচ্চার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে অভিভাবকরা যখন চিকিৎসকের কাছে আসেন, তখন ১০০ শতাংশ মায়েরই অভিযোগ থাকে, ‘‘আমার বাচ্চা খেতে চায় না।’’ যদিও এর কারণ সম্বন্ধে তাঁরা ওয়াকিবহল নন। আর এই কারণের জন্য ডাঃ ঘোষ দায়ী করছেন, হোয়্যাটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিকেই। তাঁর কথায়, ‘‘মায়েদের মধ্যে আজকাল বিভিন্ন হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপের ছড়াছড়ি। কথায়-কথায় সকলেই গুগল থেকে ডায়েট চার্ট আমদানি করে তা এক লহমায় ছড়িয়ে দেন এ গ্রুপ-ও গ্রুপে। সেই চার্ট মেনে ১ ঘণ্টা অন্তর সন্তানকে খাওয়ান। তবে বিষয়টি নিয়ে বাচ্চার চিকিৎসকের সঙ্গে কোনও রকম পরামর্শ করেন না। এমনকী সেই চার্টটি আদৌ বাচ্চার বয়সের উপযোগী কি না, তা-ও খতিয়ে দেখেন না। যা কিছু বলা হয় বাচ্চাদের জন্য ভাল, তাই-ই মায়েরা অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। যে কারণে বিভিন্ন ব্লগ দেখে তাঁরা অনুপ্রাণিত হন। ভাবেন, সেই দেখে খাবার খাওয়ালেই বুঝি বাচ্চা সুস্থ থাকবে।’’

বড় থেকে ছোট—সবার জন্যই প্রয়োজন হল ব্যালান্সড ডায়েট। বাড়ির ভাত-রুটি খেয়েই বাচ্চারা সুস্থ থাকত। এখন ‘অপশন’ অনেক বেশি, তাই বাচ্চাদেরও চাহিদা বদলে গিয়েছে। ঘরোয়া খাবারেই বাচ্চাকে অভ্যস্ত করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে বাচ্চাকে রোজ একঘেয়ে খাবার দিতে বারণ করছেন ডাঃ ঘোষ। তাঁর পরামর্শ: ‘‘রোজ ভিন্ন স্বাদের খাবার দিতে হবে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার বেশি করে দিতে হবে। ফাইবার কম খাওয়ার কারণেই বাচ্চাদের মধ্যে বাড়ছে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।’’

এ প্রসঙ্গে আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন ডাঃ ঘোষ। আপাতদৃষ্টিতে শুনতে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে হলেও বাচ্চাদের ‘পটি ট্রেনিং’-এর উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন তিনি। আজকাল বাচ্চাদের পটি ট্রেনিং-এর জন্য বিভিন্ন শৌখিন কমোড পাওয়া যায় বাজারে। সেখানে একরকম জোর করেই বসানো হয় তাদের। মূলত মনভোলানোর অবলম্বন হিসেবে কিনে-আনা এইসব শৌখিন কমোডে বসে বাচ্চারা ব্যস্ত থাকে খেলায়। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে যেভাবে বাচ্চাদের দাঁড়িয়ে পটি করানোর অভ্যাস তৈরি হত, এখন তা প্রায় হয় না বললেই চলে—অভিমত বিশিষ্ট চিকিৎসকের। মা-বাবার ব্য়স্ততা থাকায় অনেক সময় ডায়াপার পরিয়ে দীর্ঘক্ষণ রেখে দেওয়া হয় বাচ্চাদের। সেই অবস্থাতেই অনেক শিশু মলমূত্র ত্যাগ করে, যার ফলে পেট ঠিকমতো পরিষ্কারই হয় না। ডাঃ ঘোষের কথায়, ‘‘এক্ষেত্রে আগেকর দিনে বাচ্চাদের যে ভাবে দাঁড় করিয়ে মলত্যাগের অভ্যাস করানো হত, তাই-ই অনেকবেশি স্বাস্থ্যসম্মত। এছাড়াও ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের টিনড ফুড খাওয়ানো হয়, যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।’’