WHO and COVID-19: কোভ্যাক্সিন টিকাকে অনুমোদন দিতে দেরি কেন? হু-এর ‘একপেশে’ সিদ্ধান্ত নিয়ে কী বলছেন বিশিষ্টরা?

২০২১ সালে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কোভ্য়াক্সিনের ব্যাপারে হুর স্ট্যাটাস ছিল প্রস্তুতকারকের আগ্রহের প্রকাশের স্বীকৃতির পর্যায়ে আরও তথ্যের প্রয়োজন। এফডিএ এই ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আবেদন জানায়। এখানে একটি অত্যন্ত কঠোর প্রক্রিয়া রয়েছে।

WHO and COVID-19: কোভ্যাক্সিন টিকাকে অনুমোদন দিতে দেরি কেন? হু-এর 'একপেশে' সিদ্ধান্ত নিয়ে কী বলছেন বিশিষ্টরা?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 29, 2022 | 10:00 PM

কোন রোগের নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনন অনুমোদন পেতে কত সময় নিতে পারে সে সম্পর্কে কোনও আগাম বার্তা দেওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তারপর কোভিড ১৯ এর টিকা  (COVID 19 Vaccine) আদৌও সুরক্ষিত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হযয়। ভাইরাসের সংক্রমণ হার দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পর ২০১৯ সালে থেকে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রায় প্রতিটি মহামারী (Pandemic)  সম্পর্কিত সুরক্ষা ব্যবস্থা ও টিকাকরণের(Vaccination) জন্য সুপারিশগুলি পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে পুরো ব্যাপারটি রাতারাতি কিছু হয়নি। এমনটাই জানিয়েছেন আইসিএমআরের প্রাক্তন প্রধান ড রমন গঙ্গাখেদকর। সম্প্রতি নিউজ নাইনকে দেওয়া সাক্ষাত্‍কারে ভ্য়াকসিন অনুমোদন , জরুরি ব্যবহারের তালিকা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থান নিয়ে অকপটে মুখ খুলেছেন তিনি। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বায়োটেক (BioNTech)  ও ফিজার (Pfizar) উভয়ই হু (WHO)  দ্বারা জরুরি ব্যবহারের তালিকায় অনুমোদন পেয়েছে। অন্যদিকে কোভিড টিকার অনুমোদনের জন্য ইউএসএফডিএ দ্বারা মাত্র ২০ দিন পরও কোভ্যাক্সিনকে (Covaxin) ৬ মাসেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

মহামারী বিশেষজ্ঞ এর সঙ্গে জানিয়েছেন, প্রমাণ ছাড়াই অভিযোদ করা আমাদের জন্য তা ভুল হবে। হুয়ের চিকিত্‍সা বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের মতে, আগে কোভ্যাক্সিনের সঙ্গে তথ্যের সমস্যা ছিল। ফলে তা যথাযথভাবে সংশোধন করে পাঠানোর পরই অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ফোর্টিস হাসপাতালের ইমিউনোলজিস্ট ড গীতা শর্মা জানিয়েছে, চোখের বাইরেও এর আরও অনেক কিছু রয়েছে। এমনকি চিনা ভ্যাকসিনগুলিকেও কিছু সময়ের মধ্যেই অনুমোদন দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

স্বাস্থ্য সংস্থার সুরক্ষা প্রোটোকলের সর্বোচ্চ মান রয়েছে। তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে এই প্রক্রিয়া ও যোগাযোগ আরও স্বচ্ছ হলে মঙ্গল হত। তিনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন, একটি ভারতীয় ভ্যাকসিন ও চিনের সিমোভাকের মধ্যে মিল থাকলেও পরে তা অবিলম্বে অনুমোদিত হয়। সেখানে কোভ্যাক্সিনকে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

হু অনুমোদিত ভ্যাকসিনের টাইমলাইন

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর – ফিত্‍জার ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি- অ্যাস্ট্রাজেনেকা ২০২১ সালের ১২ মার্চ জনসসেন ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল মডার্না ২০২১ সালের ৭ মে সিনোফার্ম ২০২১ সালের ১ জুন করোনাভ্যাক বা চিনের সিনোভ্যাক ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর ইইউএলের মাধ্যমে কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দেওয়া ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর কোভোভ্যাক্সটিএমের জন্য ইইউএল ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর নুভাক্সোভিড

জুনে, ভারতীয় ভ্যাকসিনের আগে সিনোভ্যাক সম্মতি পেলে কিছু বিজ্ঞানী প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই সময় প্রকাশিত ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তথ্য অনুসারে, চিন দ্বারা উত্‍পাদিত ভ্যাকসিনটি যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৫১ শতাংশের মধ্যে কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পেরেছিল। অন্যদিকে ১০০ শতাংশের টিকাকরণ করা হলে তাদের মধ্যে গুরুতর সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি পর্যন্ত করতে হয়েছিল। তারপরই চিন থেকে দ্বিতীয় ভ্যাকসিনকে জরুরি ব্যবহারের তালিকায় অনুর্ভুক্ত করা হয়। সিনোফার্মে বিআইবিপি ভ্যাকসিন অনেক আগেই মানে ২০২১ সালের ৭ মে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছিল। সিনোভ্যাকের জন্য ইইউএল ঘোষণা করা সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্বব্যাপী টিকাকরণের জন্য ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য বিশ্বের একাধিক কোভিড ভ্যাকসিনের প্রয়োজন।

ভারতীয় সংস্থা ভারত বায়োটেক ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল কোভ্যাক্সিনের জন্য ইইউএল-র জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছিল। কিন্তু প্রি-সাবমিশন মিটিং শুধুমাত্র জুনের নির্ধারিত হয়েছিল। উত্‍পাদনকারী সংস্থার একজন কর্মকর্তা এপ্রিলে একটি প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন যে তারা জুলাই ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইইউএল পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সময় সংস্থার প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছিল কোভিড ১৯ প্রতিরোধের জন্য উত্‍পাদিত টিকাটি ৭৮ শতাংশ কার্যকর।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল চিনের ভ্যাকসিনগুলি যখন দ্রুত অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছিল, তখনই ধাক্কাটা লাগে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে বিআইবিপি ও করোনাভ্যাক উভয়ই ইমিউন প্রতিক্রিয়ার লক্ষ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ব্যবহার করে। ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সিনেও এই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। পরবর্তীক্ষেত্রে নভেম্বর পর্যন্ত তা অনুমোদনের চেষ্টা করা হয়নি। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওই ভ্যাকসিন সম্পর্কে আরও ক্লিনিকাল তথ্য চেয়েছিল। এর এটাই ক্ষোভের কারণ বলে জানিয়েছেন ড শর্মা।

পর্যাপ্ত তথ্য না রাখার জন্য কি ভারতকে কোনও শাস্তি দেওয়া হয়েছিল?

কোভ্যাক্স হল কোভিড ১৯ টুলস এক্সেলারেটরের প্রক্রিয়ার তিনটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। যা এপ্রিল মাসে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য চালু করা হয়েছিল। কোভিড ১৯ এর রোগ নির্ণয়, চিকিত্‍সা ও ভ্যাকসিনে উদ্ভাবনী ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতি প্রদানের লক্ষ্যে সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা, নির্মাতা, বিজ্ঞানী, প্রাইভেট সেক্টর, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের একত্রিত করাই এই সুবিধার প্রাথমিক লক্ষ্য।

২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারত ও কোভ্যাক্সের সমস্যা

ইকোনমিক্স টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে, সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের দেশে টিকা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোটের মাধ্যমে বাকি দেশগুলির সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিন শেয়ার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মার্চ মাসে ভারত কোভ্যাক্স সুবিধার সরবরাহকে প্রভাবিত করে ভ্যাকসিনের সমস্ত বড় রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

২০২১ সালে মে মাস- ভারতে কোভিড সংক্রমণ অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধির কারণে, SII-এর সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছিলেন যে সংস্থা থেকে উত্‍পাদিত ভ্যাকসিন আরও বৃদ্ধি করা হবে ও ভারতীয়দের জন্যই অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত রাখা হবে। তিনি এও জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ কোভ্য়াক্স ও অন্যান্য দেশে ডোজ বিতরণ পুনরায় শুরু করা হবে। এই অবস্থায় সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সকল প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা না দেওয়া পর্যন্ত কোভ্যাক্সে সরবরাহ ফিরিয়ে আনতে থাকবে,”।

সেপ্টেম্বর, ২০২১- ভারত কোভ্যাক্স বিশ্বব্যাপী ভাগ করে নেওয়ার প্রচেষ্টায় ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে বিলম্ব করেছিল। সেই ঘটনায় দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল, এসআইআই প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং ইরানের মতো দেশগুলিতে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডোজ পাঠিয়েছিল, তবে কোভ্যাক্সে একটিও পাঠায়নি।

নভেম্বর, ২০২১- সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (SII) কোভ্য়াক্সিন ফের রপ্তানি শুরু করে। কোভিশিল্ডের প্রথম ব্যাচটি কোভ্যাক্স প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে বিতরণের জন্য পুনেতে এসআইআই উত্পাদন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, কোভ্যাক্সিন একই মাসে হু থেকে অনুমোদন পায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কি ইচ্ছাকৃতভাবে অনুমোদন আটকানোর চেষ্টা করছিল?

এটা নিশ্চিতভাবে বলা অসম্ভব। তবে কিছু পয়েন্ট রয়েছে যা অনুমোদনের বিলম্বের জন্য ভালভাবে নেওয়া যায় না। যদিও, সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার কোভ্যাক্সের প্রধান সরবরাহকারী ছিল। আমরা রপ্তানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম কারণ আমাদের নিজস্ব জনসংখ্যার অধিকাংশই প্রথম ডোজের জন্য অনুমোদন পায়নি। অন্যদিকে, চিন, ২০২১ সালের মে মাসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা কোভ্য়াক্সের জন্য ১০ মিলিয়ন ভ্য়াকসিন ডোজ সরবরাহ করবে। কিন্তু তাদের ভ্যাকসিন মাঝপথে কোথায় ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে হু তাদের তথ্য নিয়ে নানারকম অবস্থান রক্ষা করতে পারে বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ড জয়প্রকাশ মুলিয়িল।

হু-র প্রধান বিজ্ঞানী জানিয়েছিলেন কোভ্য়াক্সিনের অপর্যাপ্ত তথ্য সমস্যা ছিল।

WHO একটি ভ্যাকসিনের অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি চারটি ধাপে নির্ধারণ করে। প্রস্তুতকারকের আগ্রহের প্রকাশের স্বীকৃতি (EOI), হু এবং প্রস্তুতকারকের মধ্যে একটি প্রাক-সাবমিশন, গ্রহণযোগ্যতা। হু দ্বারা পর্যালোচনার জন্য ডসিয়ার, মূল্যায়নের অবস্থার সিদ্ধান্ত এবং অনুমোদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ২০২১ সালে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কোভ্য়াক্সিনের ব্যাপারে হুর স্ট্যাটাস ছিল প্রস্তুতকারকের আগ্রহের প্রকাশের স্বীকৃতির পর্যায়ে আরও তথ্যের প্রয়োজন। এফডিএ এই ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আবেদন জানায়। এখানে একটি অত্যন্ত কঠোর প্রক্রিয়া রয়েছে। সবার দেখার জন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও রয়েছে। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে ভ্যাকসিনের সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে। আর সেইগুলি যদি পড়ে থাকেন তাহলে ভ্যাকসিনের অনুমোদন পাওয়া কোনও সমস্যার নয়। কিন্তু কোভ্য়াক্সিনের সঙ্গে আমরা তা করিনি। কারণ সেইসময় হাতে কোনও বিশেষ তথ্য ছিল না। এমনকি বুস্টার ডোজ সম্পর্কে আমাদের সমস্যা হল যে আমাদের কাছে Covaxin-এর কোনও তথ্য ছিল না। কোভিশিল্ডের প্রাথমিক ডোজের তথ্য় সংগ্রহ করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনগুলির উপর গবেষণার কারণে আমাদের কাছে সেই তথ্য রয়েছে। তাই আমরা কোভিশিল্ডের সঙ্গে কী হতে পারে তা আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি। কিন্তু কোভ্যাক্সিনের সঙ্গে প্রিক্যশোন ডোজ হিসেবে কীভাবে আচরণ করবে সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। নিউজ নাইনকে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেেন হুয়ের প্রধান বিজ্ঞানী ড সৌম্য স্বামীনাথন।

আরও পড়ুন: NeoCov: ওমিক্রনের পর ধেয়ে আসছে করোনার আরও ভয়ংকর ভেরিয়েন্ট ‘নিওকোভ’! বাড়বে প্রাণহানির ঘটনা