Crying Tutorial: কীভাবে কাঁদতে শিখব? ইউটিউব দেখে কান্না শিখতে চাইছে মানুষ, এ কেমন ট্রেন্ড?

Mental Health: HBO-র বিখ্যাত সিরিজ় Succession-এর চরিত্র Siobhan Roy সারা দিনের একের পর এক মিটিংয়ের মাঝে ২০ মিনিটের জন্য কান্না schedule করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ‘scheduling grief’-ও ট্রেন্ডিং হয়েছে।

Crying Tutorial: কীভাবে কাঁদতে শিখব? ইউটিউব দেখে কান্না শিখতে চাইছে মানুষ, এ কেমন ট্রেন্ড?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 30, 2023 | 6:17 PM

শরীর-মনকে ভাল রাখতে প্রাণ খুলে হাসুন—এ কথা একবার হলেও শুনেছেন। সংবাদমাধ্যম, সিনেমা, সিরিজ়ের মাধ্যমে লাফটার ক্লাব (Laughter Club) সম্পর্কেও এ কথা-সে কথা, অনেক কথা জেনে গিয়েছেন এতদিনে। গবেষণায় দেখাও গিয়েছে, মন-প্রাণ খুলে হাসলে ইমিউনিটি সিস্টেম পোক্ত পায়, মানসিক চাপ কমে, শারীরিক ব্যথা-যন্ত্রণাও কমে। কিন্তু মনের বোঝা হালকা করতে দিনের কোনও একটা সময় নিয়ম করে কাঁদেন কি? রিলস, মিম দেখে মন ভাল করে নিলেও নিজের জন্য কাঁদেন কতক্ষণ? সময়ই বা পান কতটুকু?

কান্না—দুর্বলতার প্রতীক, তথাকথিত শহুরে-শিক্ষিত সমাজ অন্তত ভাবে তেমনটাই। প্রকাশ্যে হাসা গেলেও কান্না চেপে রাখতে হয়। শুধু ‘লড়কে রোতে নেহি’ (Boys Don’t Cry) নয়, ব্যক্তি হিসেবে যে কোনও মানুষই প্রকাশ্যে কান্না এড়াতে চান। বাসে-ট্রামে হঠাৎ কান্না পেলে তা লুকিয়ে ফেলতে হয়। ছোট বয়সে শিক্ষিকের কাছে বকা খেলে যেভাবে সহজেই কেঁদে ফেলা যেত, বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে ‘দায়িত্ববান’ হয়ে উঠলে তা আর করা যায় না। কিন্তু কেন? কান্না যদি ইমোশন বা অনুভূতি প্রকাশ্যের একটা মাধ্যম হয়, তাহলে কেন কাঁদা যাবে না?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ তার মনের কথা শেয়ার করতে গিয়ে, কোনও খারাপ লাগার বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। আর তার ঠিক পরের মুহূর্তে কান্নার জন্য ক্ষমা চান। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে ক্ষমা চাওয়ার কোনও কারণ নেই। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা চেয়েও কাঁদতে পারেন না। তাঁদের দলে আপনি-আমি যে কেউই পড়তে পারি।

ছোটবেলায় চোট লাগলে যে সহজে কেঁদে ফেলা যেত, তা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আর করা যায় না। এমনকী যখন আপনার কাঁধে অফিস, সংসারের কোনও চাপ ছিল না, তখনও আপনি আপনার ইমোশনকে গুরুত্ব দিতেন। তখন একটু বেশি সময় ভাবতেন আপনার ভাল লাগা, খারাপ লাগাগুলোকে নিয়ে। আর ঠিক যে মুহূর্ত থেকে দায়িত্ব বাড়ল, নিজের জন্য সময় কমল। এখন আর সেই গুরুত্ব দেন না নিজের ইমোশনকে। এমন উদাহরণ আপনি হাজার-হাজার পেয়ে যাবেন।

আবার এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা বয়স বৃদ্ধি এবং দায়িত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁদতে ভুলে গিয়েছেন। ভুলে গিয়েছেন কীভাবে নিজের ফিলিংস প্রকাশ করতে হয়। এমন কোনও ঘটনা যা তাঁকে কাঁদতে ভুলিয়ে দিয়েছে। মনের মধ্যে উথাল-পাতাল চললেও, হাজার কষ্ট হলেও চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল পড়ে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও মানসিক ট্রমা অথবা কোনও ঘটনার মনের গভীরে এতটাই জোরে আঘাত করে ও প্রভাব ফেলে, যার জেরে চোখ দিয়ে জলও পড়ে না। যাতে তাঁরা কাঁদতে পারেন, তার জন্য ইউটিউবে রয়েছে ‘How To Cry’ ভিডিয়ো। কীভাবে নিজেকে কাঁদতে সাহায্য করবেন, তার জন্য রয়েছে স্টেপ বাই স্টেপ গাইডেন্স।

গ্রেট ব্রিটেন আর জাপানের মতো দেশে একাংশের মানুষ লাফটার ক্লাবের মতো ক্রাইং ক্লাবে (Crying Club) যান। হাজার-হাজার টাকা খরচ করেন কান্নার জন্য। কান্না পেলেও না কাঁদতে পারাকে এক প্রকার মানসিক সমস্যা বলে মনে করেন মনোবিদদের একটা বড় অংশ। আর এই না কেঁদে-কেঁদে, আপনার চোখের জলের উৎপাদনও কমে যেতে পারে। এটা এক ধরনের শারীরিক অবস্থা। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হলেও এখনও মানুষ এই কান্না নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না। এখন মন খারাপ হলেও মানুষ সেটা নিয়েও খুব বেশি ভাবে না। সময় কাটায় না নিজের সঙ্গে, নিজের ফিলিংসের সঙ্গে। তাছাড়া আমাদের সমাজে প্রকাশ্যে কাঁদা যায় না। মন খারাপ হলে সে প্রসঙ্গে হাজার একটা কৈফিয়ৎ দিতে হয়। এটাও এক ধরনের পারিপার্শ্বিকের প্রভাব ও চাপ (Peer Pressure), যার চাপে পড়ে মানুষ ভুলে গিয়েছে কান্নাকে।

কোনও শান্ত জায়গায় বসে দিনের নির্দিষ্ট সময় কাঁদলে সহমর্মিতা বা সহানুভূতি বাড়ে। তৈরি হয় সামাজিক বন্ধন। স্বস্তির অনুভূতি মেলে। কিন্তু যাঁরা কাঁদতে পারেন না, তাঁদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা জার্নাল বা ডায়েরি লেখার পরামর্শ দেন। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, পোস্ট, টুইট, রিলস আজকাল মানুষকে সাহায্য করছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার। বিশেষত, যাঁরা কাঁদতে পারেন না, তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। ঠিক যেমন কান্নার টিউটোরিয়াল ভিডিয়ো।

HBO-র বিখ্যাত সিরিজ় Succession-এর চরিত্র Siobhan Roy সারা দিনের একের পর এক মিটিংয়ের মাঝে ২০ মিনিটের জন্য কান্না schedule করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ‘scheduling grief’-ও ট্রেন্ডিং হয়েছে। বিজ্ঞান জার্নাল ‘Psychotherapy’-তে প্রকাশিত তথ্য বলছে, একজন মহিলা এক মাসে গড়ে ২ থেকে ৫ বার কাঁদেন। সেখানে একজন পুরুষ কাঁদেন মাত্র একবার। অন্তত ৫০ শতাংশ মানুষ কান্নার পর হালকা বোধ করেন। অন্যদিকে, ১০ শতাংশ মানুষ কান্নার পর নিজেদের আরও বিপর্যস্ত বলে মনে করেন। প্রসঙ্গত, ভারতে ২০১৭ সালে Laughter Therapist কমলেশ মসালাওয়ালা (Kamalesh Masalawala) সুরাতে খুলেছেন তাঁর Healthy Crying Club।