বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতের আত্মনির্ভরতার পথে টার্নিং পয়েন্ট ২০২৫
India’s Technological Self-Determination: আগামিদিনে বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। সেজন্যই ভারত AI মিশন নিয়েছে। আর এআই মিশনে কেন্দ্রীয় সরকার ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। গ্রাম-শহরের ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে AI-কে সামাজিক ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলাই এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য।

নয়াদিল্লি: আত্মনির্ভর ভারত। বিকশিত ভারত। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে দেশ। আর এই লক্ষ্যের পথে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকল ২০২৫ সাল। এই বছর ভারত শুধু বিশ্বের কাছ থেকে প্রযুক্তি গ্রহণকারী দেশ হিসেবে নয়, বরং প্রযুক্তির দিশা নির্ধারণকারী এক আত্মবিশ্বাসী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু শক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, সব ক্ষেত্রেই ভারতের অগ্রগতি দেখা গিয়েছে। যার স্পষ্ট বার্তা, প্রযুক্তিতে ভারতের আত্মনির্ভর হওয়া আর কোনও স্বপ্ন নয়। বরং বাস্তব। প্রযুক্তির এই অগ্রগতির যাত্রা ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে ‘বিকশিত ভারত’ করার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার পথে কতটা এগোল ভারত…
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) ভারতের অগ্রগতি-
আগামিদিনে বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। সেজন্যই ভারত AI মিশন নিয়েছে। আর এআই মিশনে কেন্দ্রীয় সরকার ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। গ্রাম-শহরের ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে AI-কে সামাজিক ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলাই এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য। এআই মিশনে ভারত যে বিশ্বে প্রথম সারিতে উঠে এসেছে, তারও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের গ্লোবাল AI ভাইব্রেন্সি টুলে ভারত তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের পরই রয়েছে ভারত। দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন, জাপান, সিঙ্গাপুর, কানাডা, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশকে পিছনে ফেলে এই অবস্থান ভারতের দ্রুত ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম ও শক্তিশালী প্রতিভা ভান্ডারের সাক্ষ্য বহন করে।

সেমিকন্ডাক্টরে আত্মনির্ভরতার নতুন অধ্যায়-
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও সরকার সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকে জাতীয় প্রযুক্তি মিশনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসে নয়ডা ও বেঙ্গালুরুতে ৩ ন্যানোমিটার চিপ ডিজাইনের দুটি অত্যাধুনিক কেন্দ্র চালু হয়েছে। ভারতের লক্ষ্য, আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব প্রযুক্তিগত ভবিষ্যৎ নির্মাণ।
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও সুপার কম্পিউটারের মূল ভিত্তি এই ৩nm চিপ। একই সঙ্গে IIT মাদ্রাজের SHAKTI উদ্যোগে ৭nm প্রসেসর ডেভেলপমেন্ট চলছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সেমিকন ইন্ডিয়া সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয় ভারতের প্রথম স্বদেশি ‘বিক্রম ৩২-বিট’ চিপ। যা ‘ভোকাল ফর লোকালের’ একটি উদাহরণ।
![]()
২০২৫ সালেই আরও ৫টি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে মোট ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০টি। ৬টি রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা এই প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা। আর এই মিশনের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব সেমিকন্ডাক্টর বাজারের ১০ শতাংশ দখল করা।
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ-
সেমিকন্ডাক্টর ও AI-এর মতো উন্নত প্রযুক্তির মূলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। তা বুঝেই ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মিশন। যার জন্য বরাদ্দ করা হয় ১৬,৩০০ কোটি টাকা। বিরল মৃত্তিকা ও অন্যান্য কৌশলগত খনিজে আত্মনির্ভরতা বাড়ানোই এর লক্ষ্য।
মহাকাশে ভারতের উড়ান-
২০২৫ সালে মহাকাশ গবেষণায় একাধিক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে ISRO। ২০২৫ সালের ৩০ জুলাই NASA-ISRO-র যৌথ উদ্যোগে NISAR স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত আর্থ অবজারভেশন রাডার স্যাটেলাইট। আবার জুলাইয়ে ইতিহাস রচনা করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। Axiom-4 মিশনে অংশ নিয়ে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান এবং ১৮ দিন সেখানে গবেষণায় অংশ নেন। ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন স্কাইরুট এয়ারোস্পেসের ইনফিনিটি ক্যাম্পাস ও বিক্রম-I অরবিটাল রকেট।
গবেষণায় বিপুল বিনিয়োগ-
২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-র লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। তার জন্য গবেষণা ও উন্নয়নকে পাখির চোখ করেছে মোদী সরকার। ২০২৫ সালের ৩ নভেম্বর রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন (RDI) স্কিম চালু করেছে। এর জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার ফান্ড হয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী ও দৃঢ় নেতৃত্বে ২০২৫ সাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বমঞ্চে প্রথম সারিতে নিয়ে এসেছে ভারতকে। বিশ্বে আজ আর কেবল অংশগ্রহণকারী নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির দিশা নির্ধারণকারী এক শক্তিশালী দেশ।
