অযোধ্যা: রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক বহু যুগের। ১৯৯২ সালে আন্দোলনের মাঝেই ভাঙা হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ। দাবি করা হয়, ওই মসজিদ আসলে রামের জন্মভূমির উপরে তৈরি। এরপর মামলা অনেক দূর গড়ায়। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট রাম জন্মভূমি মামলার রায় দেয়। অযোধ্যার জমিতে তৈরি হয়েছে রাম মন্দির। বাবরি মসজিদ তৈরি করার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল জমি। রাম মন্দির তো প্রায় তৈরিই হয়ে গিয়েছে, কিন্তু বাবরি মসজিদের কী খবর?
প্রায় চার বছর হতে চলল বাবরি মসজিদ গঠনের জন্য ট্রাস্ট। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে মসজিদের ডিজাইনও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাবরি মসজিদের জন্য বরাদ্দ ৫ একর জমিতে নাকি একটি ইটও পাতা হয়নি!
অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি যেখানে, তার থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্যিপুর গ্রামেই নতুন বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার কথা। তবে আপাতত সেখানে একটি সাদা বোর্ডই লাগানো রয়েছে, যেখানে বাবরি মসজিদ তৈরির কথা উল্লেখ করা আছে। ব্যস, এইটুকুই। এর বাইরে আর কিছুই তৈরি হয়নি। যাবতীয় পরিকল্পনা ড্রয়িং বোর্ডেই রয়ে গিয়েছে।
রাম মন্দির তৈরির সময় যেখানে প্রথমদিনেই লক্ষাধিক টাকা অনুদান উঠেছিল, সেখানেই জানা গিয়েছে, চার বছর পেরিয়ে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৯০ লক্ষ টাকাই অনুদান উঠেছে। দ্য প্রিন্ট-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা বাবরি মসজিদ ট্রাস্টের চিফ ট্রাস্টি জ়াফর ফারুকি বলেন, “মানুষের মসজিদ নিয়ে আগ্রহ নেই। তাদের বিশেষ কোনও টান নেই। আমরা বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। জমা তহবিল থেকেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের আগ্রহ কত। ”
প্রাথমিকভাবে যখন বাবরি মসজিদ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেই সময় মসজিদের পাশে হাসপাতাল, মিউজিয়াম ও রিসার্চ সেন্টার তৈরির কথা ছিল। কিন্তু কম অর্থ জমা পড়ায়, সেই পরিকল্পনা আপাতত বাতিল।
আইআইসিএফের সেক্রেটারি তথা বাবরি মসজিদের ট্রাস্টি আথার হুসেন বলেন, “এগুলি নির্মাণ করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। আপাতত আমরা মসজিদ তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। শুধু মসজিদ তৈরি করতেই কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা খরচ হবে। আমাদের সেই তহবিলও নেই।”
শুধু অর্থের অভাব নয়, কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ধন্যিপুরের বাসিন্দারা। এক বাসিন্দা ক্ষোভ উগরে বলেন যে গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে কয়েকজন মৌলানা গিয়েছিলেন। তারা ছবি তুলে চলে এসেছেন। তারপর আর কিছু হয়নি। আদৌ মসজিদ তৈরি হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।