তিরুঅনন্তপুরম: চিকিৎসা করাতে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন ৫৯ বছরের রবীন্দ্রন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী শ্রীলেখাও। স্ত্রী চাকরি করেন ওই হাসপাতালেই। চিকিৎসককে দেখানোর পর রবীন্দ্রন একাই নীচে নামছিলেন। লিফটে চেপে নীচে নামছিলেন তিনি। লিফটের দরজাও বন্ধ হয় স্বাভাবিক নিয়মেই। কিন্তু হঠাৎই আটকে যায় সেই লিফট। তারপর বাকি ৪২ ঘণ্টা যা হল, তা হয়ত কোনওদিন ভুলতে পারবেন না ওই ব্যক্তি।
রবীন্দ্রন একজন সিপিআই নেতা। তিন এক্স রে করাতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানেই লিফটে আটকে পড়েন তিনি। ৪২ ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়। বেরনোর পর তিনি জানিয়েছেন লিফট আটকে যাওয়ার পর কোনও হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি, বারবার অ্যালার্ম বেল চেপেও কোনও লাভ হয়নি।
গত শনিবার দুপুরে আটকে পড়েন তিনি। এরপর অ্যালার্ম বেল বাজানোর পরও যখন কেউ আসে না, তখন তিনি বসে পড়েন লিফটের একটি কোণায়। ফোনটাও একটা সময়ের পর বন্ধ হয়ে যায়। মূত্রত্যাগও করেন লিফটেই। এরপর হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে, পরের দিন রবিবার অর্থাৎ লিফট খোলার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই বসে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁর কাছে।
ওই ব্যক্তি বলেন, ‘চেঁচিয়ে কাঁদলাম, কেউ শুনতে পেল না। ঘুমোতেও পারিনি। খিদে-তেষ্টায় যখন অস্থির হয়ে যাচ্ছি, তখনও তা মেটানোর কোনও উপায় ছিল না। শুধু অ্যালার্ম বেলটা বাজিয়ে যাচ্ছিলাম বারবার।’ লিফটে কোনও আলো বা পাখাও ছিল না, তবে হাওয়া ঢোকার সামান্য একটু জায়গা ছিল। তাতেই অক্সিজেন মিলছিল একটু।
এদিকে, শনিবার বাড়ি না ফেরায় কেউ চিন্তিত হননি তেমন। কারণ রবীন্দ্রন কাজের সূত্রে প্রায়ই এমন করতেন। কিন্তু রবিবারও না ফেরায় সন্দেহ হয় পরিবারের। তাঁর স্ত্রী সিপিআই অফিস সহ সম্ভাব্য সব জায়গায় যোগাযোগ করেন। কোথাও কোনও খোঁজ না পেয়ে মিসিং ডায়েরি করা হয়।
সোমবার সকালে লিফট চেক করতে গিয়ে হাসপাতালের কর্মী দেখেন লিফট খুলছে না। এরপরই সামনে আসে পুরো বিষয়টা। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন লিফট চেক করা হল না ওই দিন? লিফট যে খারাপ ছিল, সেই তথ্যও ছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। ইতিমধ্যেই লিফট অপারেটর সহ তিন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।