রহস্যজনক রোগে কাশ্মীরে আক্রান্ত একের পর এক। অজানা রোগের হানায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। যা নিয়ে উদ্বেগে প্রশাসন। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসক এবং প্যারা মেডিকেল কর্মীদের সব ছুটি বাতিল করে দিয়েছে প্রশাসন। জম্মু রাজৌরি জেলার প্রত্যন্ত বাধল গ্রামকে ‘কন্টেনমেন্ট’ জোন বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও রোগটি ছোঁয়াচে নয় বলেই জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে।ম
৭ ডিসেম্বর ভারত-শাসিত জম্মুর রাজৌরি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বাধলে প্রথম একজন ১২ বছরের শিশুর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই একই ভাবে মৃত্যু হয় আরও ১৬ জনের।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোগীদের প্রাথমিক উপসর্গ দেখে মনে হয়েছিল খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। কেন কী ভাবে মারা যাচ্ছেন রোগীরা তাও এখনও স্পষ্ট নয়।
বাধল গ্রামটিকে একটি কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে, যদিও কর্মকর্তাদের দাবি এই রোগ সংক্রমক নয় এবং মহামারি হওয়ার ভয় নেই।
স্থানীয় হাসপাতালের প্রধান ডাঃ এএস ভাটিয়া জানান, প্রথম পাঁচজন রোগীর মধ্যে চারজন ছিল শিশু। প্রত্যেকের বমি এবং ডায়রিয়া সহ খাদ্য বিষক্রিয়ার লক্ষণ ছিল। কারও কারও আবার গলা ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল। তবে সবাই হঠাৎ করে জ্ঞান হারান।
ফেডারেল সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ, প্যাথলজিস্ট এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্থানীয় প্রশাসন একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটি এই পর্যন্ত কয়েক ডজন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে বিষাক্ত খাবার বা পানীয় কোনও কিছু খাওয়ার ফলেই এই রোগ হচ্ছে বলে ধারণা। পরীক্ষার নমুনায় বিষাক্ত কীটনাশকের চিহ্ন রয়েছে। এরপরেই প্রশাসনের তরফ থেকে স্থানীয় ঝর্ণার জল পান করতে নিষেধ করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু ঘটে। নিহতরা তিনটি পরিবারের সদস্য, এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। মৃত শিশুদের মধ্যে ৬ জন ভাইবোন ছিল, যাদের বয়স ৭-১৫ বছরের মধ্যে। তাঁদের বাড়িও তদন্তের জন্য সিল করে দিয়েছে প্রশাসন।
যদিও চিকিৎসকরা বলেছেন রোগটি সংক্রমক নয়, তবে প্রশাসনের তরফে তিনটি পরিবারের ঘনিষ্ঠ বা সংস্পর্শে আসা ব্যাক্তিদের রাজৌরির একটি সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সেখানেই তাঁদের স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ করা হবে। বাধল গ্রামের অনান্য বাসিন্দাদের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র প্রশাসনের তরফে দেওয়া খাবার এবং জল খাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
সংক্রমিত পরিবারের সমস্ত ভোজ্য সামগ্রী তদন্তের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। চণ্ডীগড় এবং রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে, চিকিৎসার জন্য অন্তত ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজৌরির সরকারি মেডিকেল কলেজের মহামারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজা কাদরি জানিয়েছেন, এটি একপ্রকার স্থানীয় রোগ। ভাইরাস জনিত, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়াল এবং জুনোটিক সংক্রমণের সম্ভাবনাকেও অস্বীকার করেছেন তিনি।
১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এক জন শিশু সহ মোট ৫জন সুস্থও হয়ে উঠেছেন। ডাঃ ভাটিয়া বলেন, “এটাই আমাদের কাছে আশার আলো।”