তিরুবনন্তপুরম: ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে খোঁজ চলছে বিকল্প শক্তির। সম্প্রতি, ঘরে ঘরে সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসানোর প্রকল্প চালু করেছে মোদী সরকার। এরই মধ্যে, কেরলের আইআইটি-পালক্কাড়ের গবেষকদের একটি দল তৈরি করল এক বিশেষ চুল্লি। এই চুল্লি একদিকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ জৈব সার তৈরি করতে পারে। আবার, একই সময়ে প্রস্রাবে উপস্থিত রাসায়নিক ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ, আইআইটি পালাক্কাড়ের বিজ্ঞানীদের এই বৈপ্লবিক প্রযুক্তিতে, মানুষের মূত্র ব্যবহার করে একই চুল্লি থেকে বিদ্যুৎ এবং সার দুইই তৈরি করা যাবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মূত্রে উপস্থিত আয়নের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে চুল্লিটি।
আইআইটি পালাক্কাড় জানিয়েছে, এই প্রযুক্তিতে উৎস-বিচ্ছিন্ন প্রস্রাব ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, প্রস্রাব মলের সঙ্গে মিশ্রিত হলে চলবে না। এটি শহরাঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চল – দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল চুল্লি, অ্যামোনিয়া শোষণকারী কলম, ডিকালারাইজেশন এবং ক্লোরিনেশন চেম্বার, প্লাম্বিং এবং ইলেক্টিকাল ম্যানিফোল্ড নিয়ে গঠিত এই প্রযুক্তিটি। ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল চুল্লিতে ম্যাগনেসিয়াম অ্যানোড এবং একটি কার্বন ক্যাথোড ব্যবহার করে।
চুল্লিটি অ্যাক্রিলিকের তৈরি। তার মধ্য়েই থাকে অ্যানোড এবং ক্যাথোডটি। তার মধ্যে প্রস্রাব ঢেলে দিলেই ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল বিক্রিয়া শুরু হয়। এই বিক্রিয়ার ফলে একইসঙ্গে বিদ্যুৎ এবং জৈব সার উৎপন্ন হয়। এই জৈব সার নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হয়। এই উপাদানগুলি উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য অপরিহার্য। আর প্রতি চক্রে এই প্রযুক্তিতে ৫০০ মিলিওয়াট এবং ৭ থেকে ১২ ভোল্টের বিদ্যুৎ তৈরি হয়। বর্তমানে এটি মোবাইল ফোন এবং এলইডি আলো চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, আইআইটির গবেষকদের দাবি, ভবিষ্যতে থিয়েটার এবং শপিং মলের মতো বড় জায়গার বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারবে এই প্রযুক্তি।
বর্তমানে এই প্রযুক্তিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। গবেষণা দলে রয়েছেন সঙ্গীতা ভি, সৃজিত পিএম এবং রিনু আনা কোশি। ‘সেপারেশন অ্যান্ড পিউরিফিকেশন টেকনোলজি’ জার্নালে তাঁরা তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন। এই গবেষণার জন্য অর্থ দিয়েছে, ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন, সায়েন্স ফর ইক্যুইটি এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। হয়তো এরপর এমন এক সময় আসবে, যখন আমাদের রোজ মূত্র জমিয়ে রাখতে হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।