তেহরান: সোমবার (১৩ মে), ভারতের ৯টি রাজ্য ও ১টি কেন্দ্রশাসিত এলাকার ৯৬টি লোকসভা কেন্দ্রে যখন ভোটগ্রহণ চলছে, সেই সময় তেহরানে এক ঐতিহাসিক চুক্তি সাক্ষর করল ভারত ও ইরান। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১০ বছর ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনা করবে ভারত। এই প্রথম দেশের বাইরে কোনও বন্দর পরিচালনা করবে নয়া দিল্লি। এই পদক্ষেপ, ভারত, ইরান এবং সামগ্রিকভাবে মধ্য ও পশ্চিম এশিয় অঞ্চলের জন্য ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই চুক্তি, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া এবং ইউরেশিয়ার সঙ্গে ভারতের সংযোগ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে, পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর এবং চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর এক বিকল্প বাণিজ্য পথ খুলে যাবে। বজায় থাকবে ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য।
চুক্তি অনুযায়ী, চাবাহার বন্দরকে একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং যোগাযোগ কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য, তেহরানকে সহায়তা করবে নয়া দিল্লি। বাণিজ্যিক ও যোগাযোগের দিক থেকে, ভারতের জন্য এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এতদিন, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় যাওয়ার জন্য ভারতকে পাকিস্তানের উপর দিয়ে যেতে হত। চাবাহার বন্দর হাতে আসায়, পাকিস্তানকে এড়িয়ে এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারত সহজেই যোগাযোগ ও বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবে। এই বন্দরকে অদূর ভবিষ্যতে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে, ভারত থেকে ইরান হয়ে সুদূর রাশিয়া পর্যন্ত একটি নয়া বাণিজ্যিক পথ খুলে যাবে। পাকিস্তানের গ্বদর বন্দরকে কেন্দ্র করে, তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল চিন। নিঃসন্দেহে ভারত ও ইরানের এই চুক্তি, তাদের কপালে ভাঁজ ফেলবে।
বিদেশ দফতরের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, চাবাহার শহিদ বেহেশতি বন্দর পরিচালনার জন্য এই দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড এবং পোর্টস অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশন অব ইরান। চুক্তি স্বাক্ষরের সময়, ইরানে উপস্থিত ছিল এক ভারতীয় প্রতিনিধিদল। উপস্থিত ছিলেন ভারতের বন্দর, নৌপরিবহন ও জলপথ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ।
২০১৬ সালে ইরান সফরে চাবাহার নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই চুক্তিটি ছিল শুধুমাত্র চাবাহার বন্দরের শহিদ বেহেশতি টার্মিনাল পরিতালনার বিষয়ে। প্রতি বছর এই চুক্তি নবায়ন করা হয়। ২০১৮ সালে, ভারত সফরে এসেছিলেন ইরানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি। সেই সময় বন্দরে ভারতের ভূমিকা সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। নতুন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিটি, মূল চুক্তিটিকে প্রতিস্থাপন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। গত বছর অগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনের সময়ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইরানের রাষ্ট্রপতির মধ্যে চাবাহার বন্দর চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।