নয়াদিল্লি: দুবাইয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন এজেন্ট। সেই আশ্বাস দিয়েই ভারতের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু, দুবাই নয়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় করাচিতে। সেখানেই কেটেছে ২২ বছর। আর দুই দশক পর ইউটিউবে তাঁর ভিডিয়ো দেখে চিনতে পারে পরিবার। শেষপর্যন্ত ভারতে ফিরলেন বছর পঁচাত্তরের হামিদা বানু।
মুম্বইয়ে থাকেন হামিদার পরিবার। স্মৃতির সরণি বেয়ে হামিদা জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর রান্নার কাজ করে চার সন্তানকে মানুষ করছিলেন। দুবাই, কাতার, সৌদি আরবে রান্নার কাজ করতে গিয়েছেন। ২০০২ সালে এক এজেন্ট তাঁকে দুবাইয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তার জন্য হামিদার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন ওই এজেন্ট।
হামিদা বলেন, দুবাইয়ে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে পাকিস্তানের হায়দরাবাদ শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি ঘরে তিনমাস আটকে রাখা হয়েছিল। এরপর করাচির ফুটপাথের এক দোকানদারকে বিয়ে করেন হামিদা। করোনাকালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পাকিস্তানে তাঁর স্বামী কখনও অত্যাচার করেননি বলে জানান হামিদা।
২০২২ সালের জুলাইয়ে পাকিস্তানের এক ইউটিউবার তাঁর সাক্ষাৎকার নেন। ইউটিউবে সেই ভিডিয়ো দেখেন এক ভারতীয় সাংবাদিক। তিনি ভিডিয়োটি সোশ্য়াল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। হামিদার নাতি ভিডিয়োটি দেখেন। তারপরই পাকিস্তানের ওই ইউটিউবার ও ভারতীয় সাংবাদিকের সহায়তায় হামিদার সঙ্গে তাঁর পরিবারের ফোনে কথা হয়।
মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় আবেগে গলা বুজে আসছিল হামিদার কন্যা ইয়াসমিনের। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “আমায় চিনতে পারছো? এতদিন কোথায় ছিলে?” হামিদা বলেন, “কোথায় ছিলাম, কেমন আছি, জিজ্ঞাসা করো না। তোমাদের খুব মিস করেছি। আমি নিজের ইচ্ছায় এখানে থাকিনি। আমার কাছে অন্য পথ খোলা ছিল না।” হামিদা জানান, পাকিস্তানে ২২ বছর তিনি জীবন্ত লাশের মতো কাটিয়েছেন।
এরপর দুই দেশের আধিকারিকরা হামিদার পরিচয় যাচাই করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে তাঁর ভারতীয় পরিচয় যাচাই শেষ হয়। হামিদা বলেন, “২ বছর আগে আমার ভিডিয়ো শেয়ার হয়েছিল। আমি জানতাম না, ভারতে ফিরতে পারব কি না। এক বছর আগে ভারতীয় দূতাবাস আমাকে ফোন করেছিল। তারা জানিয়েছিল, আমি ভারতে ফিরতে পারি।”
পরিবারের সদস্যদের ফের দেখতে পেয়ে আবেগে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না হামিদা। তবে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি কারও উপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।”