লখনউ: দেশ জুড়ে সিবিএসই (CBSE) বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার সময়, অনেক ছাত্রছাত্রীই অনেক রাত অবধি জেগে পড়াশোনা করে। রাতে যাতে ঘুম না পায়, তার জন্য অনেকেই চা বা কফি পান করছে। আবার অনেকেই এর জন্য খাচ্ছে ‘ঘুম-রোধী ওষুধ’। ঘুম না পাওয়ার এই ওষুধগুলি, তাদের ঘুমের স্বাভাবিক চক্রকে ব্যাহত করছে। এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, তাদের স্বাস্থ্যের উপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের লখনউয়ে তার হাতে-নাতে প্রমাণ পাওয়া গেল। এখানকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে পড়াশোনা করবে বলেই সে নিয়মিত ঘুম-রোধী ওষুধ খাচ্ছিল। এই ওষুধের প্রভাবেই সম্প্রতি সে সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কে বড় মাপের অস্ত্রোপচার করে তাৎ প্রাণ রক্ষা করা গিয়েছে। ওই ছাত্রীর নাম প্রজক্তা। দীর্ঘদিন ধরে সে ঘুম-রোধী বড়িগুলি খাচ্ছিল। বড়ির প্রভাবে ঘুম কমিয়ে পড়াশোনার সময় বাড়িয়েছিল সে। তার মা অবশ্য এই ওষুধের কথা জানত না। তিনি আবার ওই ওষুধের উপর, তাকে ঘুম তাড়ানোর জন্য কফি খাওয়াচ্ছিলেন। সম্প্রতি এক রাতে, পড়াশোনা করতে করতে সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা। তাকে সঙ্গে সঙ্গে কাছের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে, তার টেবিলের ড্রয়ারে বাবা-মা একটি ঘুম-রোধী ওষুধের বোতল খুঁজে পান। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানতে পেরেছিলেন, তাঁর মস্তিষ্কের স্নায়ু ফুলে গিয়েছিল। তা থেকে, তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। সেই কারণেই সে সংজ্ঞা হারায়। এই ঘটনা এই সব ঘুম-রোধী ওষুধগুলির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে নিউরোসার্জন ডা. শরদ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, পরীক্ষার সময় জেগে থাকার জন্য এই বড়িগুলি ব্যবহার করা বিপজ্জনক। তিনি আরও জানিয়েছেন, ব্যাংকক-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এই ওষুধগুলি ভারতে পাচার করা হচ্ছে। ‘চুনিয়া’ বা ‘মিথি’ নামে বিক্রি হচ্ছে এই ওষুধগুলি। ক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ঘুম-রোধী বড়িগুলি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এই ওষুধগুলির বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে ক্যাফেইনের সঙ্গে, অর্থাৎ, অনেক কাপ কফির সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত মাত্রায় এই বড়িগুলি গ্রহণ করলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। প্রজক্তার ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। এই বড়িগুলি আসলে মোডাফিনিলের বিভিন্ন রূপ। এই ওষুধ প্রাথমিকভাবে নারকোলেপ্সি এবং শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডারের মতো রোগের চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘুম না হতে পারে।
তবে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ডা. আর কে সাক্সেনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, কেন শিক্ষার্থীরা এই ধরনের ওষুধ খেতে চাইছে, তা নিয়ে। তাঁর মতে, নম্বর পাওয়ার জন্য বাবা-মা’রা শিক্ষার্থীদের উপর যে ধরনের চাপ দিচ্ছেন, তাতেই শিক্ষার্থীরা এই বড়িগুলি ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছে। বন্ধুদের থেকে একটু কম নম্বর পেলেও, অভিভাবকরা তাদের তিরস্কার করছেন। এই নম্বর পাওয়ার চাপ, ধীরে ধীরে তাদের ভিতর থেকে মেরে ফেলছে। প্রত্যেকে বেশি নম্বর পাবে না, এই সত্যটা অভিভাবকদের মেনে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। প্রজক্তার বাবা-মা মেনে নিয়েছেন, পরীক্ষা-পড়াশোনা নিয়ে তাঁদের মেয়ের উপর কতটা চাপ ছিল, তা তাঁরা বুঝতেই পারেননি।