পুরী: দেশের তীর্থক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল, পুরীর জগন্নাথ মন্দির। সারা বছরই এই মন্দিরে পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। রথযাত্রার সময় তো পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেরও বহু পর্যটক এই জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে পুরী আসেন। বিশ্বাস, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ অবতারে পুরীর এই মন্দিরে অধিষ্ঠান করেন। তাঁর সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই বলভদ্র এবং ছোট বোন সুভদ্রাও একই আসনে অধিষ্ঠান করেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে কোনও কিছু প্রার্থনা করলে সেটা পূরণ হবেই বলে ভক্তদের বিশ্বাস। ৮০০ বছরের পুরানো এই জগন্নাথ মন্দিরে আজও এমন অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এককথায় অলৌকিকতা ও রহস্যময়তায় ভরা পুরীর জগন্নাথ মন্দির।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কয়েকটি অলৌকিক ও রহস্যময় ঘটনা একনজরে
উল্টোদিকে ধ্বজা ওড়ে- পুরীর জগন্নাথ মন্দিরটি প্রায় ৪৫ তলা বাড়ির সমান উঁচু। সেই মন্দিরের একেবারে চূড়ায় একটি পতাকা লাগানো থাকে। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, যে দিকে হাওয়া চলে সবসময় তার বিপরীত দিকে পতাকাটি ওড়ে। প্রতি বছর মন্দিরের পুরোহিত চূড়ায় উঠে পতাকাটি বদলান। কিন্তু, হাওয়ার সঙ্গে পতাকা ওড়ার দিক বদল হয় না।
মন্দিরের ছায়া দেখা যায় না- জগন্নাথ মন্দিরটি প্রায় ৪ লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং ২১৪ ফুট উঁচু। অথচ এই মন্দিরের চূড়ার কোনও ছায়া দেখা যায় না। যা সাধারণ বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলে না।
মন্দিরের উপরে পাখি উড়তে দেখা যায় না- যে কোনও উঁচু বাড়ি হোক বা মন্দির, তার উপর দিয়ে পাখি ওড়ার ঘটনা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় কখনও কোনও পাখি বসতে দেখা যায় না। এমনকি মন্দিরের উপর দিয়ে কোনও পাখি উড়তে দেখা যায়নি।
চক্রের দিক- জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় একটি চক্র লাগানো রয়েছে। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, যে কেউ যে কোনও প্রান্ত থেকে ওই চক্রের দিকে তাকান, মনে হবে চক্রটি তাঁর দিকেই ঘোরানো। আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হল, চক্রটির ওজন প্রায় এক টন। ১২ শতকে মন্দিরটি তৈরির সময় এটি চূড়ায় বসানো হয়েছিল। কিন্তু, সেই সময় প্রযুক্তি বিশেষ উন্নত ছিল না। ফলে কীভাবে চূড়ার উপর অত ভারী চক্রটি বসানো হল, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
কাঠের মূর্তি- প্রতি ৮, ১২ ও ১৯ বছর অন্তর পুরীর মন্দিরের বিগ্রহ বদল হয়। অর্থাৎ পবিত্র নিম গাছের কাঠ দিয়ে জগন্নাথদেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রার নব কলেবর করা হয়। আর পুরানো মূর্তি কোইলি বৈকুণ্ঠের কাছে পুঁতে দেওয়া হয়। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, জগন্নাথদেবের নবকলেবরের জন্য যে গাছটি নির্বাচিত করা হয়, সেটি মন্দির কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত এক কাঠুরে গোপনে ২১ দিন ধরে কাটেন। কেউ জানতেও পারেন না।
মূর্তি বদল- নব কলেবরের পর মূর্তি বদল করা হয় বিশেষ নিয়ম মেনে। জগন্নাথ মন্দিরের প্রবীণ পুরোহিতের চোখ বেঁধে, হাতে দস্তানা পরিয়ে মূর্তি বদল করা হয়। সেই সময় গোটা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং মন্দিরের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কথিত আছে, মূর্তি বদল করা কেউ দেখে ফেললে তার বড় ক্ষতি হতে পারে, চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মহাপ্রসাদ তৈরি- পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘর বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘর বলা হয়। এই রান্নাঘরে জগন্নাথদেবের জন্য মহাপ্রসাদ তৈরির প্রক্রিয়াও অবাক করা। মাটির তৈরি উনুনে কাঠের আঁচ দিয়ে একটি পাত্রের উপর আরেকটি পাত্র করে পরপর ৭টি পাত্র বসিয়ে রান্না করা হয়। আজও এভাবে রান্না সম্পন্ন হয়। সবেচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রথমে উপরের পাত্রের রান্না সেদ্ধ হয়। তারপর এক-এক করে নীচের পাত্রগুলির রান্না হয়। উনুনের উপর যে পাত্রটি বসানো, সেটির রান্না সবশেষে সম্পন্ন হয়। মন্দিরে যতই ভক্ত আসুক, কখনও প্রসাদ কম পড়ে না।
আবাধা মহাপ্রসাদ- প্রতিদিন জগন্নাথদেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রাকে ৫ দফায় ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া রোজ ৫৬ ভোগ দেওয়া হয়। যার মধ্যে ভাত, ডাল, সবজি থেকে মিষ্টি, বাদাম-সহ নানা ধরনের খাবার থাকে। মন্দির চত্বরে আনাদা বাজারে এই ভোগ কিনতে পারেন ভক্তরা।
ঢেউয়ের শব্দ- পুরীর সমুদ্রের গর্জন কে না জানে! অনেক দূর পর্যন্ত সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়। কিন্তু, জগন্নাথ মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করলে সমুদ্রের গর্জন, ঢেউয়ের কোনও শব্দ শোনা যায় না। কথিত আছে, দেবী সুভদ্রা চেয়েছিলেন মন্দিরের ভিতর নীরবতা বজায় থাকবে। তাই মন্দিরের ভিতর সমুদ্রের শব্দ শোনা যায় না।
হাওয়ার গতি- সাধারণত উপকূলবর্তী এলাকায় দিনের বেলা সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে এবং রাতে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে। কিন্তু, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কাছে দিনে ও রাতে উল্টোদিকে হাওয়া চলে। যার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।