NCERT: স্কুলবইতে আর থাকছে না ‘ইন্ডিয়া’
বুধবার (২৫ অক্টোবর), 'ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং' বা 'এনসিইআরটি' জানাল, স্কুলবইতে এবার থেকে 'ইন্ডিয়া'র পরিবর্তে 'ভারত' লেখা থাকবে। এই বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক এক উচ্চ-স্তরের কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করল এনসিইআরটি।
নয়া দিল্লি: ‘ইন্ডিয়া’ নয়, এবার থেকে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’ বা ‘এনসিইআরটি’ অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকে লেখা থাকবে ‘ভারত’। বুধবার (২৫ অক্টোবর), ‘ইন্ডিয়া’ নামটি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক এক উচ্চ-স্তরের কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করল এনসিইআরটি। এর পাশাপাশি সুপারিশ মেনে পাঠ্যসূচিতে ‘প্রাচীন ইতিহাসে’র পরিবর্তে ‘ক্ল্যাসিক্য়াল হিস্ট্রি’ বা ‘চিরায়ত ইতিহাস’। স্কুল পাঠ্যক্রম সংশোধনের জন্য একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি গঠন করেছিল এনসিইআরটি। কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সিআই আইজ্যাক। ইতিহাসবিদ আইজ্যাক আরএসএস মতাদর্শী হিসেবেই পরিচিত। এই কমিটিই সুপারিশ করেছে, ‘ইন্ডিয়া’ নয়, প্রাথমিক থেকে উচ্চ বিদ্যালয় স্তরের পাঠ্যপুস্তকে দেশের নাম হওয়া উচিত ভারত। এদিন এই সুপারিশেই সুলমোহর দিল এনসিইআরটি।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনসিআরটি কমিটি পাঠ্যক্রমে ‘হিন্দু পরাজয়ের’ ঘটনা কমানোরও পরামর্শও দিয়েছে। সিআই আইজ্যাক জানিয়েছেন, কমিটির সাত সদস্যই এই সুপারিশগুলির সঙ্গে একমত হয়েছেন। আইজ্যাক বলেছেন, “বিষ্ণু পুরাণে ভারত নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। কালিদাসও ভারত নামটি ব্যবহার করেছিলেন। এটি একটি প্রাচীন নাম। ইন্ডিয়া নামটি এসেছে অনেক পরে, তুর্কি, আফগান এবং গ্রীকদের আক্রমণের পর। তারা সিন্ধু নদীর ভিত্তিতে ভারতকে শনাক্ত করেছিল। হামলাকারীরা ইন্ডিয়া নামটা উচ্চারণ সুবিধাজনক বলে মনে করেছিল। আমি জোর দিয়েছি, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে শুধু ভারত নামটি ব্যবহার করা হবে। অন্যান্য সদস্যরাও সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।”
কমিটির সুপারিশে আরও একটি দিক উঠে এসেছে। কমিটির মতে, প্রচলিত পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকগুলিতে যুদ্ধে ‘হিন্দুদের পরাজয়’-এর উপর খুব বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। আইজ্যাক বলেছেন, “উল্টোদিকে, হিন্দুদের বিজয়ের উল্লেখ নেই। কেন আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ছাত্রদের শেখানো হয় না যে, ভারত লুণ্ঠন করে ফিরে যাওয়ার সময় ভারতীয় উপজাতিদের হাতে নিহত হয়েছিলেন মহাম্মদ ঘোরি? ত্রিবাঙ্কুর বনাম ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে হওয়া কোলাচেলের যুদ্ধ আমাদের পাঠ্যবইয়ে নেই? কেন জরুরি অবস্থার ইতিহাস বিস্তারিতভাবে শেখানো হয় না?” ইসাক আরও জানিয়েছেন, ভারতীয় ইতিহাসে প্রাচীন মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মতো সময়কালের শ্রেণিবিভাগ করা বন্ধের সুপারিশ করেছে তাঁর কমিটি। তিনি বলেছেন, “প্রাচীন শব্দটি আমাদের ক্লাসিক্যাল বা চিরায়ত দিয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত।” সিআই আইজ্যাক আরও জানিয়েছেন, এনসিআরটি প্যানেল, সমস্ত বিষয়ের পাঠ্যক্রমে ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশও করেছে।
এর আগে, ৫ সেপ্টেম্বর, জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় ভারতের রাষ্ট্রপতির পাঠানো নৈশভোজের আমন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দেশের নাম বিতর্ক উসকে উঠেছিল। জি২০ নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রের ইংরাজী ভাষায় ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ লেখা হয়েছিল। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সামনেও, দেশের নাম ইংরাজিতে ভারত লেখা ছিল। চার দিন আগেই অসমের গুয়াহাটিতে এক সভায় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও বলেছিলেন, ইন্ডিয়া নয়, ভারত নামটিই ব্যবহার করা উচিত। তবে, সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া, অর্থাৎ ভারত, একটি যুক্তরাষ্ট্র।’