জয়সলমের: হাউ হাউ করে কেঁদে চলেছেন এক মহিলা। আর তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে আগুনের চারপাশে সাতপাকে ঘুরছে এক পুরুষ। গত কয়েকদিন ধরে এরকমই এক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনাটি রাজস্থানের জয়সলমের জেলার বলে জানা গিয়েছে। ওই মহিলাকে জোর করে বিয়ে করার এই ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে নেটিজেনদের মধ্যে। এই ভিডিয়ো নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেন দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়ালও। মঙ্গলবার, এই ভাইরাল ভিডিয়ো ক্লিপটি টুইট করে তিনি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের কাছে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান হিন্দিতে টুইটে করে বলেছেন, “বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেবন অনুযায়ী, ভিডিয়োটি জয়সলমেরের। খবর অনুযায়ী, জনসমক্ষে মেয়েটিকে অপহরণ করে, একটি অনুর্বর মরুভূমিতে আগুন জ্বালিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। এটা খুবই মর্মান্তিক ও ভয়ঙ্কর ঘটনা। অশোক গেহলট বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন।”
মাত্র ছয় সেকেন্ড দীর্ঘ এবং অস্পষ্ট এই ভিডিয়ো ক্লিপটিতে এক পুরুষকে দেখা যাচ্ছে জোর করে ওই মহিলাকে কোলে তুলে নিয়েছেন এবং আটকে রেখেছেন। মরুভূমির মধ্যে এক জায়গায় আগুন জ্বালানো হয়েছে। মহিলাকে কোলে নিয়ে পুরুষটি সেই আগুনের চারপাশে চক্কর কাটছে, অনেকটা হিন্দু বিয়ের রীতির সাতপাকে ঘোরার মতো করে। পুরো ভিডিয়ো জুড়ে, ওই মহিলাকে কাঁদতে শোনা যাচ্ছে। ভিডিয়োটিতে একটি সাদা রঙের গাড়ি এবং আরও কয়েকজন মহিলা এবং এক পুরুষকেও দেখা গিয়েছে। স্বাতি মালিওয়াল ভিডিয়োটি শেয়ার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য জয়সলমের পুলিশ জানায় যে, প্রধান অভিযুক্তকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
জয়সলমের পুলিশের মতে, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (১ জুন)। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “১ জুনের ওই ঘটনার বিষয়ে, জয়সলমেরের মোহনগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিডিয়োতে দেখা প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের জন্য একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে।”
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলে মহিলাদের জোর করে বিয়ে করা কোনও নতুন বিষয় নয়। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি (NCRB)-র তথ্য অনুসারে ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতে এই ধরনের ২৮,০০০-এরও বেশি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। কাজেই প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ, এই ধরণের ক্ষেত্রে অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে চান না। বিশেষ করে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরাই চান না বিষয়টি জানাজানি হোক। ভারতে বাল্যবিবাহ অপরাধ। অথচ, ভারতে এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার মাত্র ১০ শতাংশ। এই কারণে সমস্যাটি আরও বেড়েছে।
।