Aadi Karmayogi: ভোল পাল্টাবে ভারতের, আদিবাসী উন্নয়নকে বাস্তবায়িত করতে অভিনব পদক্ষেপ
Aadi Karmayogi: বিকশিত ভারত @২০৪৭-এর পথে এগোতে গেলে, আদিবাসী ক্ষমতায়ন কতটা জরুরি তাও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই সেই ভাবনা থেকেই আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রক গর্বের সঙ্গে উদ্বোধন করছে 'আদি কর্মযোগী' ক্যাম্পেনের। এটি এমন এক বিশেষ উদ্যোগ যার মাধ্যমে একদম তৃণমূল স্তরে আদিবাসী অঞ্চলে গিয়ে সেই অঞ্চলের মানুষদের সমস্যা জেনে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আরেকটি বড় অংশ ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়। এঁরা কেবল ভারতের বসবাস্কারী জনজাতি নয়। প্রাচীন পরিবেশগত প্রজ্ঞা, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং স্থিতিশীলতাই যুগ যুগ ধরে আমাদের সভ্যতার নীরব রক্ষক। আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য অনেক নীতি প্রণয়ন হলেও আজও অনেক আদিবাসী অঞ্চল মূলধারার উন্নয়নের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে। অবশ্য আদিবাসী উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে না বিজপি সরকার। বিশেষ করে বিকশিত ভারত @২০৪৭-এর পথে এগোতে গেলে, আদিবাসী ক্ষমতায়ন কতটা জরুরি তাও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই সেই ভাবনা থেকেই আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রক গর্বের সঙ্গে উদ্বোধন করছে ‘আদি কর্মযোগী’ ক্যাম্পেনের। এটি এমন এক বিশেষ উদ্যোগ যার মাধ্যমে একদম তৃণমূল স্তরে আদিবাসী অঞ্চলে গিয়ে সেই অঞ্চলের মানুষদের সমস্যা জেনে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সেবাপ্রদানের মাধ্যমে রূপান্তর ঘটানোই মূল উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগের।
আদি কর্মযোগী শুধুই একটি মিশন নয়, বলা যেতে পারে এক আন্দোলন। একটি জনআন্দোলন। যার মূল লক্ষ্য ২০ লক্ষ প্রশিক্ষিত, উদ্দীপিত ক্যাডার তৈরি করা যারা বিভিন্ন মিশনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। এঁরাই পৌঁছে যাবে ১ লক্ষেরও বেশি আদিবাসী-প্রধান গ্রামে। যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভারতের ৩০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ৫৫০ বেশি জেলা এবং ৩,০০০ ব্লকে। যেখানে বাস ১০.৫ কোটিরও বেশি আদিবাসী নাগরিকের। তাঁদের উন্নয়নের জন্য কাজ করাই হবে এই ক্যাডারদের উদ্দেশ্য।
এই আদি কর্মযোগীরা হবেন—সরকারি কর্মকর্তা (কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত), যুবনেতা, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, সামাজিক কর্মী, ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানধারক এবং স্বেচ্ছাসেবক—যারা কেন্দ্র থেকে শুরু করে সবচেয়ে প্রত্যন্ত পিভিটিজি (বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ আদিবাসী গোষ্ঠী) বসতিগুলোতেও একসঙ্গে কাজ করবেন।
এই ক্যাডার হবে এক নতুন আদিবাসী পুনর্জাগরণের ইঞ্জিন। যারা তৃণমূল স্তরে আদিবাসী উন্নয়নের পরিকল্পনাকে আরও শক্তিশালী করবে। আদিবাসী সংস্কৃতি এবং ভাষা রক্ষা করবে। সেতুবন্ধন করবে আদিবাসী সম্প্রদায় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
আসলে বহু প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জীবিকার মতো প্রাথমিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে এখনও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। অনেক সময় প্রান্তিক মানুষদের চাহিদা সঠিক ভাবে সরকারের কাছে গিয়ে পৌঁছয় না। সেখানেই স্থানীয় মানুষের এই নেটওয়ার্ক দ্রুত এবং লক্ষ্যভিত্তিক ফলাফলকে আরও নিশ্চিত করতে পারবে বলেই ধারণা।
আদিবাসী ক্ষমতায়ন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। জানা গিয়েছে আদি কর্মযোগীদের নির্বাচন হবে গ্রাম সভার পরামর্শে, যাতে বিশ্বাস, মালিকানা এবং সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
উন্নয়ন যেন সাংস্কৃতিক বিলোপ না ঘটায় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। এই ক্যাডাররা সক্রিয়ভাবে আদিবাসী ভাষা, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং শিল্পকলার দলিলীকরণ ও সংরক্ষণ করবে।
এই প্রকল্পকে আর সফল করে তুলতে ৬টি আঞ্চলিক প্রসেস ল্যাব-এ রাজ্যস্তরের মাস্টার ট্রেনারদের জন্য ৭ দিনের নিবিড় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা হবে।
৩০ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ৭ জন করে ট্রেনার, অর্থাৎ ২১০ জন কর্মকর্তা আদিবাসী প্রেক্ষাপট, ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং নেতৃত্ব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন। ৫৫০ জেলা থেকে ৫ মাস্টার ট্রেনার অর্থাৎ মোট ২৭৫০ জন জেলাস্তরের ট্রেনার থাকবে। ব্লকস্তরের মাস্টার ট্রেনার হবেন ১৫,০০০ কর্মকর্তা। ৩,০০০ ব্লক থেকে ৫ জন করে ট্রেনার।
আদি কর্মযোগীতে থাকবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রশিক্ষণ, তথ্য-ভিত্তিক সরঞ্জাম, জ্ঞান বিনিময়ের ব্যবস্থা। অবসরপ্রাপ্ত আমলা, আদিবাসী প্রবীণ, পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং খাতভিত্তিক নেতারা তরুণ আদি কর্মযোগীদের এই বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।
আদি বিষয়ক উন্নয়ন মন্ত্রকের মতে ‘আমরা আদি কর্মযোগী ক্যাডারকে আদি সেবা পথ হিসেবে কল্পনা করি। যেন দেশের নিরাপত্তা বাহিনী—যারা নীরবে, দক্ষতা ও সহমর্মিতার সঙ্গে ভারতের প্রতিটি আদিবাসী অঞ্চলে সেবা দেবে।
