MI17:দেশের বিপর্যয়ে যেমন লড়ার নজির রয়েছে, তেমনই আছে অভিশপ্তের ইতিহাস

Army Helicopter Crash: এই হেলিকপ্টারের প্রথম উড়ান হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। পরে অবশ্য অনেক আপগ্রেড বা আধুনিকীকরণ করা হয়েছে মডেলগুলিতে। ৪৫ বছরের পুরানো প্রযুক্তির এই হেলিকপ্টার এখনও ভীষণভাবে কাজের।

MI17:দেশের বিপর্যয়ে যেমন লড়ার নজির রয়েছে, তেমনই আছে অভিশপ্তের ইতিহাস
বায়ুসেনার এমআই - ১৭ হেলিকপ্টার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 09, 2021 | 12:15 AM

বিক্রম ভোরা ( লেখক, সাংবাদিক)

২২ নভেম্বর, ১৯৬৩ সাল। জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের খবরের দিকে তখন সবাই তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎই দেশে এক বড়সড় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবর এল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতি অনুসারে, ওই হেলিকপ্টারে ছিলেন ওয়েস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল দৌলত সিং, ওয়েস্টার্ন কমান্ডে এয়ার অফিসার কমান্ডিং এয়ার ভাইস মার্শাল ই ডব্লিউ পিন্টো, ১৫ কর্পসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিক্রম সিং, ২৫ নম্বর পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল কে.এন.ডি. নানাবতী, ব্রিগেডিয়ার এস.আর. ওবেরয় এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এসএস সোধি।

ভারতের জন্য এ এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা এবং এর পরে একটি হেলিকপ্টারে শীর্ষ আধিকারিকরা কতজন যেতে পারবেন, তার একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। আর তারপর এখন আবারও একটি বড়সড় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা

এখনও পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি এমআই ১৭ হেলিকপ্টার তৈরি করা হয়েছে এবং ভারতের কাছে এর মধ্যে ২০০ টিরও বেশি হেলিকপ্টার রয়েছে। তিন সপ্তাহ আগেই অরুণাচল প্রদেশে এই হেলিকপ্টার ভেঙে পড়েছিল। এমআই ১৭ হেলিকপ্টারে একজন পাইলট, কো-পাইলট এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার সহ তিন জন ক্রু থাকতে। এই হেলিকপ্টার ২৪ জন যাত্রী এমনকী ছোট গাড়িও বহন করতে সক্ষম। বিশেষ এই হেলিকপ্টারে চার হাজার কেজিরও বেশি অভ্যন্তরীণ পেলোড বহন করার ক্ষমতা রয়েছে। সম্পূর্ণ সমর সজ্জায় ৩৬ জন জওয়ানকে বহন করতে সক্ষম এই হেলিকপ্টারটি। এখনও পর্যন্ত ৬০ টিরও বেশি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে এই এমআই ১৭ বিমান।

হেলিকপ্টারে যাত্রীদের অংশে একটি বড় কেবিন রয়েছে এবং এটি ভিআইপি পরিষেবার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই হেলিকপ্টারটিই ব্যবহার করা হয়েছিল জেনারেল বিপিন রাওয়াতের জন্য। সেনা কমান্ডাররা মাঝেমধ্যেই এই হেলিকপ্টারটি ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি এক উদ্ধার অভিযান এমআই ১৭ হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন অন্ধ্র প্রদেশের অনন্তপুর জেলার বন্যা দুর্গত চিত্রাবতী নদীতে আটকে পড়া ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল এই হেলিকপ্টারে করেই।

এই হেলিকপ্টারের প্রথম উড়ান হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। পরে অবশ্য অনেক আপগ্রেড বা আধুনিকীকরণ করা হয়েছে মডেলগুলিতে। ৪৫ বছরের পুরানো প্রযুক্তির এই হেলিকপ্টার এখনও ভীষণভাবে কাজের। এটি বহুমুখী কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই এমআই ১৭ হেলিকপ্টার ২০১৯ সালে বুদগামে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে হারিয়ে গিয়েছিল এবং ছয়জনের মৃত্যু হয়েছিল। বায়ুসেনার তরফে পরে স্বীকার করা হয়েছিল, এটি ভুল করে হয়ে গিয়েছিল। ২০১১ সালে পবন হান্স লিভারিতে একটি এমআই ১৭ হেলিকপ্টার তাওয়াং শহরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। একটি খাদে পড়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় ২৩ জনের মধ্যে ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

১৯২০ সালে, ভারতীয় বায়ু সেনার (IAF) একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার সিকিমের চাটেন থেকে মুকুটাং পর্যন্ত একটি রুটিন টহলদারি চলাকালীন জরুরিকালীন অবতরণে বাধ্য হয়েছিল। যদিও সেই সময় কারও প্রাণহানি হয়নি। এই বছরের অগস্টে মেক্সিকান নৌবাহিনীর একটি এমআই-১৭ হিপ ইউটিলিটি হেলিকপ্টার মেক্সিকোতে একটি ছোট উপকূলীয় শহরের কাছে উড়ানেক পরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। হেলিকপ্টারটির দুর্ঘটনায় পড়ার সময় তাতে সওয়ারিদের মধ্যে ভেরাক্রুজ প্রদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়। ২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারী আফগান এয়ার ফোর্সের এমআই ১৭ হেরাতে ভেঙে পড়ে। আফগানিস্তানের চার আঞ্চলিক কমান্ডারের মধ্যে অন্যতম মেজর জেনারেল ফজল আহমেদ সায়ার সহ হেলিকপ্টারে থাকা ১৩ জনের প্রত্যেকেই মারা গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি এমআই-১৭ গিলগিটের কাছে ভেঙে পড়ে। এতে নরওয়েজিয়ান এবং ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের স্ত্রীরা নিহত হন। গুরুতর জখম হন পোলিশ ও ডাচ রাষ্ট্রদূত। ২০১৮ সালে কুয়েত সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আল-খুদার এবং কুয়েত নৌবাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালিদ মাহমুদ আবদুল্লাহকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার শ্রীমঙ্গলে ভেঙে পড়ে, যদিও সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন : CDS Bipin Rawat Passes Away: ‘আপনার সেবা দেশ কোনওদিন ভুলবে না’, প্রতিরক্ষা প্রধানের প্রয়াণে শোকবিহ্বল মোদী