নয়া দিল্লি: ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম গারখুন। গ্রামের তিন মেষপালক তাশি, মোরাপ এবং আলি। তিনজন পাহাড়ের ওপরে পশু চরাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গে দূরবীন ছিল। দূরবীন দিয়ে তাঁরা হারিয়ে যাওয়া চমরি গাইয়ের খোঁজ করছিলেন। তখনই তাঁদের চোখে পড়ে একদল নতুন মুখ। লোকগুলো মাটি ছুঁড়ে কী সব করছে। প্রথম দিন খুব একটা গুরুত্ব দেননি ওই তিনজন। পরের দিন আবার যে কে সেই! লোকগুলো একইভাবে সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে। সেটা দেখে আর বসে থাকেননি তাশিরা।
তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান স্থানীয় পঞ্জাব রেজিমেন্টের চৌকিতে। এটা জানাতে যে পাকিস্তানের লোকজন আমাদের দেশে ঢুকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে। আপনার গিয়ে দেখুন। জওয়ানরা প্রথমদিন খুব একটা পাত্তা দেননি। যে জায়গার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কে ঢুকবে? কীভাবে ঢুকবে? সেনা ছাড়া অন্য কারও যাওয়া সম্ভবই না। তাই বোধহয় সেনা-জওয়ানরা পাত্তা দেননি। তিনজনের মধ্যে দুজন হাল ছেড়ে দিলেও একজন হাল ছাড়েননি। তিনি প্রতিদিনই ওই জায়গায় যেতেন আর দূরবীণ দিয়ে দেখতেন, অচেনা লোকগুলো কী করছে।
একটা সময় তিনি বুঝতে পারেন, মারাত্মক ব্যাপার। ওরা ওখানে বাঙ্কার খুঁড়ছে। অস্ত্র মজুত করছে। পাহারা দিচ্ছে। তিনি আবার ছুটে যান সেনা চৌকিতে। তখন আর সেনাবাহিনী বিষয়টা হালকাভাবে নেয়নি। আর্মি কমান্ডে খবর যায়। কিন্তু তারপরেও তিন-চারদিন কোনও অর্ডার আসেনি। সেই অর্ডার এল অনেকটা পরে।
পঞ্জাব রেজিমেন্টকে বলা হল, ‘আপনারা গিয়ে দেখুন, ওখানে কী হচ্ছে’। পঞ্জাব রেজিমেন্টের চৌকি যেখানে ছিল, সেখান থেকে জায়গাটা অনেকটা উপরে। খাড়াই পাহাড় বেয়ে বেয়ে উঠতে উঠতেই ছুটে এল ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। ভারত ভাবতেই পারেনি, বরফঘেরা পাহাড়ে পেরিয়ে ভারতের জমিতে ঢুকে বসে আছে পাক সেনা। ওখানে বসেই বাঙ্কার তৈরি করে যুদ্ধপ্রস্তুতি নিচ্ছে।
পাক সেনার দুঃসাহসিক পরিকল্পনার আঁচ সেই প্রথম পেয়েছিল সেনা। আর কার্গিলে বাতালিক রেঞ্জে অচেনা লোকেদের বাঙ্কার তৈরির খবর যিনি দিয়েছিলেন, তিনি তাশি নামগিয়াল। গত সপ্তাহে ৫৮ বছর বয়সে সেই তাশির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন সেনার ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি কর্পস, নদার্ন কমান্ড।
কিন্তু বলতে পারেন, পাকিস্তানের মাথায় হঠাত্ করে কার্গিলে হানা দেওয়ার দুর্বুদ্ধি গজিয়েছিল কেন? প্ল্যানটা কিন্তু খারাপ ছিল না। যে কথা আজ নিজেদের দেশেই বিভিন্ন মঞ্চে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ থেকে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। আসলে পাক সেনা ভেবেছিল কার্গিল দখল করে তারা ভারতের সঙ্গে একটা দর কষাকষিতে যাবে।