TV9 Explained: জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বিন্যাস হলে পাল্লা ভারি উত্তর না দক্ষিণের?

Delimitation India: নির্বাচনী কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে, লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪৩ থেকে বেড়ে ৭৫৩ হতে পারে। আসলে, সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয় জনসংখ্যার ভিত্তিতে। আর সেই হিসেবে, লোকসভায় উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

TV9 Explained: জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বিন্যাস হলে পাল্লা ভারি উত্তর না দক্ষিণের?
নয়া লোকসভায় পাল্লা ভারী উত্তর ভারতের?Image Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 22, 2023 | 1:14 PM

নয়া দিল্লি: বৃহস্পতিবার সংসদে পাশ হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। আর এই বিল পাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভারতের নির্বাচনী মানচিত্রের পুনর্বিন্যাস। কারণ সরকার জানিয়েছে, জনগণনা এবং নির্বাচনী আসনগুলি সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরই মহিলা সংরক্ষণ বিল বাস্তবায়িত হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় জানিয়েছেন, ২০২৪-এর নির্বাচনের পরই এই দুই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে, নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বাচনী কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে, লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪৩ থেকে বেড়ে ৭৫৩ হতে পারে। আসলে, সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয় জনসংখ্যার ভিত্তিতে। আর সেই হিসেবে, লোকসভায় উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আসন পুনর্বিন্যাস হলে, বদলাতে পারে ভারতের নয়া রাজনৈতিক মানচিত্রও।

নাগরিকদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা তুলে দিতে প্রত্যেককে একটি করে ভোটের অধিকার দেওয়া হয়েছে। আর এই জনসংখ্যার ভিত্তিতে ঠিক করা হয় লোকসভা আসনগুলি। অর্থাৎ, যে রাজ্যের জনসংখ্যা বেশি, সেই রাজ্যের হাতে বেশি লোকসভা আসন। উত্তর-পূর্ব ভারতের অধিকাংশ রাজ্যগুলির জনসংখ্যা অত্যন্ত কম। জনসংখ্যার নিরিখে একটিও আসন পাওয়ার যোগ্য না হলেও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তাদের অন্তত একটি করে লোকসভা আসন রয়েছে। এই ফর্মুলাতেই মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম বা নাগাল্যান্ডের ১টি করে লোকসভা আসন রয়েছে।

তবে, জনসংখ্যা থেমে থাকে না। কোথাও তা বাড়ে, কোথাও কমে। এই জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে লোকসভা আসনগুলির সামঞ্জস্য রাখতে ১৯৫২ সালে প্রথম ডিলিমিটেশন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এই কমিশনের প্রধান কাজ হল, সাম্প্রতিক জনগণনার ভিত্তিতে নির্বাচনী আসনগুলির পুনর্বিন্যাস করা। রাজ্যগুলি গঠনের পর, প্রাথমিকভাবে লোকসভা আসনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪টি। ১৯৬৩, ১৯৭৩-এ আরও দুইবার আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়। আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫২২ এবং ৫৪৩। তারপর দীর্ঘদিন আসন পুনর্বিন্যাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। মূল লক্ষ্য ছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা। লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে, জনসংখ্য়া নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নজর দেবে না রাজ্যগুলি, এই ভাবনা থেকেই বন্ধ রাখা হয় আসন পুনর্বিন্যাস। ২০০২ সালে ২০০১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল ঠিকই, তবে আসন সংখ্যার হেরফের ঘটানো হয়নি। ২০২৬-এ ফের আসন পুনর্বিন্যাস হওয়ার কথা।

২০২৬ সালে, ভারতের আনুমানিক জনসংখ্যা হবে ১৪২ কোটি। এই জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করেই হবে আসন পুনর্বিন্যাস। এর ফলে রাজ্যগুলির লোকসভা আসন সংখ্যা কত দাঁড়াবে দেখে নেওয়া যাক। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রে উত্তর ভারতের থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছে দক্ষিণ ভারত। তাই দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির আসন সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তথ্য অনুযায়ী কর্নাটকের লোকসভা আসনের সংখ্যা ২৮ থেকে কমে হতে পারে ২৬। তেলঙ্গানার আসন সংখ্যা ১৭ থেকে কমে ১৫, অন্ধ্র প্রদেশের ২৫ থেকে ২০ এবং তামিলনাড়ুর আসন সংখ্যা ৩৯ থেকে কমে ৩০ হতে পারে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সবথেকে সফল রাজ্য কেরল। আসন পুনর্বিন্যাস হলে কপাল পুড়বে তাদেরও। আসন সংখ্যা কমে ২০ থেকে ১৪-এ নেমে আসবে। আসন সংখ্যা কমতে পারে পশ্চিমবঙ্গেরও। ৪২ থেকে কমে ৩৯ হতে পারে।

এবার দেখা যাক উত্তরের রাজ্যগুলি, বিশেষ করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলির কী চিত্র দাঁড়াবে। উত্তর প্রদেশে আসন সংখ্যা বর্তমানে ৮০। সাম্প্রতিক জনসংখ্যা অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের লোকসভা আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৪। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আরও এক রাজ্য বিহারে আসন সংখ্যা বেড়ে ৪০ থেকে ৫১ হতে পারে। মধ্য প্রদেশে বর্তমানে ২৯টি লোকসভা আসন রয়েছে। আসন পুনর্বিন্যাসের পর আসন সংখ্যা ৩৪-এ গিয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রেও আসন বেড়ে, ৪৮ থেকে ৫০ হবে। রাজস্থানের লোকসভা আসন সংখ্যা বর্তমানের ২৫ থেকে ৩২-এ পৌঁছবে।

ফলে বোঝাই যাচ্ছে, দেশের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের মধ্যে লোকসভা আসনের ক্ষেত্রে বিশাল পার্থক্য তৈরি হতে চলেছে। বুধবারই লোকসভায় এই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি। সেই ক্ষেত্রে লোকসভায় দক্ষিণের কন্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে যাবে বলে দাবিল করেছেন কানিমোঝি। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, যে রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ সফলভাবে করেছে, পুরস্কার হিসেবে তাদের লোকসভার প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়া কি ন্যায়সঙ্গত?